22-02-2018 01:15:04 PM
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করতে চায় বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি পুঁজিবাজার সম্পর্কে নিজেদের পর্যালোচনাসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত্ম একটি প্রস্ত্মাবনা পাঠিয়েছে সংস্থাটি। তিনটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে বিশ্বব্যাংক মিশন কাজ করতে চায়। প্রথমত, সমমূলধন ও ঋণভিত্তিক সম্পদের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা প্রদান এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাজারসংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা পর্যালোচনা করা; দ্বিতীয়ত, পুঁজিবাজার উন্নয়নে প্রকল্প পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা দেয়া এবং তৃতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ উপকরণ, স্পেশাল পারপাস বন্ড, নন-সভরেইন বন্ড, বিভিন্ন সিকিউরিটাইজেশনসহ পুঁজিবাজারের অবকাঠামোগত প্রকল্পে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম ও সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করা।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যেসব উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে চায় এ বিষয়ে আলোচনার জন্য চলতি বছরের প্রথমার্ধে ঢাকায় একটি সম্মেলন করার বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছে আইএফসি-বিশ্বব্যাংক গ্রম্নপ। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক কাজ করতে চায়। এই বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি। ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রকল্প বাস্ত্মবায়নাধীন। এ অবস্থায় আইএফসি-বিশ্বব্যাংক গ্রম্নপও বলছে, এডিবির সঙ্গে সমন্বয় করে তারা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে তারা কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে আমাদের কাছে একটি প্রস্ত্মাবনা পাঠিয়েছে। তবে তারা কী ধরনের কাজ করতে চায় সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্ত্মাব এখনো আমাদের কাছে আসেনি। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক গ্রম্নপ প্রস্ত্মাব পাঠালে তখন আমরা বিবেচনা করে দেখব তাদের সহায়তা কীভাবে নেয়া যায়।
পুঁজিবাজার সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক গ্রম্নপের প্রাথমিক প্রস্ত্মাবনায় বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে খুব সহজে স্বল্প সুদে দ্রম্নত ঋণ পাওয়া গেলেও পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের বিষয়টি খুব জটিল, ব্যয়বহুল এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ। এছাড়া মূলধন উত্তোলনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনেক বেশি সময় নেয়। তাই বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থা মূলত ব্যাংক নির্ভরশীল। বর্তমানে শতকরা ৮০ ভাগ ঋণ আসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে। তবে ব্যাংকিং খাতের এই ঋণ নির্ভরতাও খুব একটা কাজে আসছে না। কারণ, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদে নির্দিষ্ট সুদে ঋণ দেয়ার সক্ষমতা নেই। ব্যাংকগুলো মূলত স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ঋণ দিতে পছন্দ করে। অপরদিকে পুঁজিবাজার থেকে শিল্প-উদ্যোক্তারা যে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ গ্রহণ করবেন, সেই সুযোগও সীমিত।
দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক গ্রম্নপের মূল্যায়ন হচ্ছে- এই দুটি পুঁজিবাজারের আকার অপেক্ষাকৃত ছোট এবং ব্যাপকভাবে সমমূলধনভিত্তিক। এই দুই পুঁজিবাজারের মোট মূলধনের পরিমাণ দেশের জিডিপির মাত্র ২২ শতাংশ, যেখানে ভারতের পুঁজিবাজারের মূলধনের পরিমাণ দেশটির জিডিপির প্রায় ৮০ শতাংশ। এ ছাড়া থাইল্যান্ডের পুঁজিবাজার দেশটির জিডিপির ৯৬ শতাংশ, ভিয়েতনাম ৫৫ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঋণ বাজার দেশটির জিডিপির প্রায় ১৫৯ শতাংশ।