31-12-2017 10:38:39 AM
রাজনৈতিক কোনো অস্থিরতা ছিল না; হরতাল-অবরোধও হয়নি। বর্ষার আগে সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল মন্ত্রণালয়গুলোর।২০১৭ সাল তাই মসৃণ ছিল উন্নয়ন কার্যক্রমে। যে বছরটি বিদায় নিতে চলেছে, সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তুলনামূলক ভালোই বাস্তবায়িত হয়েছে। অর্থবছরের পাঁচ মাস (জুলাই-নভেম্বর) নিয়ে করা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এ সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়িত হয়েছে গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ তথ্য বলছে, জুলাই থেকে নভেম্বর এই সময়ে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ২১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে খরচ হয়েছে ৩২ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে গেছে ১৭ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুত ঋণ থেকে খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা।
গত পাঁচ বছরের জুলাই-নভেম্বর এই সময়ের এডিপি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবারই এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে বেশি। গত বছরের একই সময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল ১৯ শতাংশ।
এর আগের বছর ছিল ১৭ শতাংশ। তারও আগের বছর ২০ শতাংশ এবং এর আগের বছর ছিল ১৯ শতাংশ। এ বছর কেন এডিপি বাস্তবায়ন হার ভালো—এমন প্রশ্নে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অভিমত, আগের বছরের তুলনায় এ বছর নজরদারি ভালো ছিল। রাজনৈতিক কোনো অস্থিতিশীলতাও ছিল না।
আইএমইডি বলছে, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো এবার এডিপি বাস্তবায়ন হার ভালো। এটি ইতিবাচক দিক। উদাহরণ দিয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচ মাসে বিদ্যুৎ বিভাগের তাদের বরাদ্দের ৪৮ শতাংশ খরচ করে ফেলেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় খরচ করেছে তাদের বরাদ্দের ৪৩ শতাংশ অর্থ। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ খরচ করেছে তাদের বরাদ্দের ২৭ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া আছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়ার কথা ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। আর বাকি ৫৭ হাজার কোটি টাকা আসবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে। পাঁচ মাসের এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ বছরের শুরু থেকেই এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল তুলনামূলক ভালো। যেভাবে এডিপি বাস্তবায়িত হচ্ছে, তাতে বছর শেষে শতভাগের কাছাকাছি যাবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আর আইএমইডি সচিব মফিজুল ইসলাম মনে করেন, এ বছর এত ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও ২১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন বেশ ভালো। সরকারের নজরদারি বাড়ানোর কারণে এডিপি বাস্তবায়ন ভালো হচ্ছে বলে অভিমত তাঁর।
এদিকে চলতি বছর সার্বিক এডিপি বাস্তবায়ন হার ভালো হলেও ৩৫০ কোটি টাকার বেশি এমন বরাদ্দপ্রাপ্ত বড় প্রকল্পগুলোর অবস্থা তেমন ভালো নয়। চলতি অর্থবছরে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে আট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলো হচ্ছে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, অর্থ বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় হাতে নেওয়া বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের হার এখনো ৫ শতাংশের নিচেই।
আইএমইডির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া ৮৬টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে মোট ৯৪ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ৫৭ শতাংশ। গত নভেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের পাঁচ মাসে এই ৮৬ প্রকল্পের মোট বাস্তবায়নের অগ্রগতি ১৮ শতাংশ হলেও আটটি মন্ত্রণালয় বিভাগের বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার এখনো ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। এসব প্রকল্পে গতি আনতে নির্দেশ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থ ছাড়ের হারও বেড়েছে। এই পাঁচ মাসে উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ছাড় হয়েছে ১৭৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ৯০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ সাত হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর পাঁচ মাসে দ্বিগুণ বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে। এটিকে ইতিবাচক দেখছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে পারলে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুত অব্যবহৃত পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা খরচ করা যেত বলেও অভিমত ইআরডি কর্মকর্তাদের। ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুলাই থেকেই এবছর অর্থ ছাড়ের হার বেড়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র, মেট্রো রেলের মতো বড় প্রকল্পে গতি এসেছে। সে কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড়ও বেড়েছে।