12-12-2017 02:55:15 PM
গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর জামে মসজিদের মাইক থেকে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে নারীদের মাঠে যাওয়া বন্ধ করতে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তা মাইকে কয়েক দফায় ঘোষণা করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কল্যাণপুর জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলতাফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, মসজিদের ইমাম আবদুল মালেক আজাদী, পেশ ইমাম আবু মুছা, সহসভাপতি মজিবর রহমান প্রমুখ। মাইকে কয়েক দফা নারীদের মাঠে যাওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রচার করেন ওই মসজিদের মুয়াজ্জিনের ছেলে রুহুল আমিন সেখ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পর্দা শুধু নারীর নয়, পুরুষের জন্যও পর্দা আছে। পর্দার মধ্যে থেকে নারী ও পুরুষের কাজ করার অধিকার আছে। নারী কর্ম করতে পারবে না কোরআন-হাদিসে কোথাও বলা নেই। যাঁরা এ ধরনের নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা অদক্ষ, অযোগ্য আলেম।’ নারীদের কাজের প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, ফাউন্ডেশন বিভিন্ন জেলায় মক্তবে শিক্ষকতা করা ৫০০ নারীকে ঢাকায় এনে প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কল্যাণপুর গ্রামেরদুজন নারী প্রথম আলোকে বলেন, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কৃষিকাজে সহযোগিতা করেন। এখন তাঁরা মাঠে যাবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একদিকে উন্নয়নের রোল মডেলের কথা বলছি। অন্যদিকে ব্যাক গিয়ারে চলছি। নীতিনির্ধারকেরা যদি যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেন গ্রামগঞ্জে হলি আর্টিজানের মতো ঘটনা ঘটতে সময় লাগবে না। এই ধরনের ঘটনা প্রতিহত করার এখনই সময় এবং তা সরকারকেই করতে হবে। এ ধরনের ঘটনা প্রশমন করা না গেলে, ব্যবস্থা না নিলে অন্যরাও এর সুযোগ নেবে।’
রাশেদা কে চৌধূরীর মতে, মসজিদ থেকে এ ধরনের ঘোষণা রাষ্ট্রীয় নীতিমালা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সরকারের ভিশন ২০২১, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিসহ সবকিছুরই বিরোধী। বিভিন্ন জায়গার এ ধরনের ঘটনাই একসময় বড় আকার ধারণ করে। অবৈধ ফতোয়া ও নির্দেশনা যাঁরা দিচ্ছেন তাঁদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে এ ধরনের ঘটনা ছড়িয়ে যাবে। উত্তেজনা তৈরি করবে। আর যে নারীরা মাঠে কাজ করেন তা তাঁদের রুটিরুজির সঙ্গে সম্পর্কিত। কৃষির উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ ধরনের ঘোষণা ওই নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
গতকাল সোমবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বিষয়টি আলোচিত হয়। গতকাল কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এক সদস্য বিষয়টি তুলে ধরেন। এ ব্যাপারে ওই মসজিদের ইমামকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার তিনি আসবেন।’ এই কর্মকর্তার মতে, মসজিদ কমিটি বা ইমাম এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। এটা যুক্তিযুক্ত না।
কল্যাণপুর জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষক। মাঠে ফসলের তছরুপ হচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা মাঠে বেশি যাচ্ছেন। তাঁরা ফসলের ক্ষতি করছেন। নারীরা কম গেলে ফসলের উন্নতি হবে। তাই সচেতন করা হয়েছে।’ নারীরা মাঠে ফসল তছরুপ করছেন এমন কোনো প্রমাণ পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে মতিউর রহমান বলেন, এ ধরনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা বেগম বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। এ ব্যাপারে ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।’
শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান তারেকও বলেছেন, ঘোষণার বিষয়টি তিনি রোববার শুনেছেন। তবে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এটা কেমন সিদ্ধান্ত? এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটি ও ইমামের সঙ্গে কথা বলা হবে।’