বাংলাদেশ | বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ,১৪৩১

অর্থনীতি

15-11-2017 03:10:10 PM

সংকট কাটাতে ৩০০ কোটি টাকা চায় ফারমার্স ব্যাংক

newsImg

সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত না পেয়ে এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়েছে ফারমার্স ব্যাংক। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে তা ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংকটি। ফলে ব্যাংকটিতে দেখা দিয়েছে চরম তারল্য সংকট। তাই এ-সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা চেয়েছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

প্রতিষ্ঠার চার বছরের মাথায় ব্যাংকটিকে আমানতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হলো। ২০১৩ সালের জুনে কার্যক্রম শুরু করে বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি, যার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ৯টি ব্যাংকের একটি ফারমার্স ব্যাংক। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ৯ নভেম্বর পাঠানো এক চিঠিতে ৩০০ কোটি টাকার আমানত চায় ফারমার্স ব্যাংক। চিঠিতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীম বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাংকে ঋণ আমানত সীমার হার বেড়েছে। এ ছাড়া এসএলআর ও সিআরআর ঘাটতি রয়েছে। বেশ কিছু গণমাধ্যমে ব্যাংক সম্পর্কে বিরূপ, নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার ফলে আমানতকারীদের মধ্যে ব্যাংকটি সম্পর্কে একধরনের অপ্রতুলতা সৃষ্টি হয়েছে এবং এর উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। সাম্প্রতিককালে ব্যাংকের পক্ষে তহবিল (আমানত) সংগ্রহ করা সহজলভ্য হচ্ছে না।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ণ ও ইইএফ তহবিল থেকে ৩০০ কোটি টাকা আমানত রাখার আবেদন জানানো হয় চিঠিতে। ওই আমানত যথাসময়ে ফেরত দেওয়ার হবে বলে জানানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ চাওয়ার বিষয়ে জানতে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে ফোন করা হলে  ‘আপনারা সত্য-অসত্য মিশিয়ে সংবাদ প্রচার করে চলেছেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, নামসর্বস্ব কোনো প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়নি।’

এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে তাঁকে জানানো হয়। তখন তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক তো বিষয়টি অস্বীকার করছে। আমাদের ব্যাংক শক্তিশালী অবস্থানে আছে, কোনো অসুবিধা নেই। আপনারা যা কিছুই করেন না কেন, কিছুই হবে না। কারা ব্যাংক দখল করছে, এটা আমরা জানি।’ 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, ফারমার্স ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার পর কী পদ্ধতিতে ব্যাংকটিকে অর্থায়ন করা যায়, তার কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু হয়েছে। যদিও চার বছর আগে কার্যক্রম শুরু করা ব্যাংকটিকে এমন সহায়তা দিতে আগ্রহী না ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এ জন্য বিলুপ্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাংককে (বর্তমানে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক) কীভাবে সহায়তা করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির।

ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করে, তার ১৯ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে সিআরআর ও এসএলআর হিসাবে জমা রাখতে হয়। তবে আর্থিক সংকটের কারণে ফারমার্স ব্যাংক তা রাখতে পারছে না। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ঋণ বিতরণ করে চলেছে। এ কারণে গত সপ্তাহে ব্যাংকটির কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

ব্যাংকটি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই অস্তিত্বহীন ও সাইনবোর্ড-সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয় ব্যাংকটি। আরও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবুও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সিআরআরের অর্থ রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে গত জুন পর্যন্ত ৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছে ব্যাংকটি। এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও ১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা দণ্ড সুদ ও জরিমানা হয়েছে, যা আদায়ের প্রক্রিয়া চলছে।

ব্যাংকটির দায় পরিশোধের সক্ষমতা নেই উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকটি পুরো ব্যাংক খাতে ‘পদ্ধতিগত ঝুঁকি’ (সিস্টেমেটিক রিস্ক) তৈরি করেছে।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নতুন শাখা খোলা ও ঋণ প্রদানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন ঋণ অনুমোদন ও ঋণ সীমা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্যাংকটি নতুন ঋণ প্রদান ও ঋণসীমা বাড়ানো অব্যাহত রেখেছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে লোকসান করেছে ১৩ কোটি টাকা। ৫৪টি শাখার মধ্যে ২৮টিই লোকসান গুনছে। 

খবরটি সংগ্রহ করেনঃ- আই-নিউজ২৪.কম
এই খবরটি মোট ( 2210 ) বার পড়া হয়েছে।
add

Share This With Your Friends