16-01-2018 05:29:02 PM
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে ভোটের আগে জোটের সমীকরণ মেলাতে হচ্ছে বড় দু'দলকে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ১৪ দলের সমর্থন পাবে, তা নিশ্চিত। কিন্তু জাতীয় পার্টির (জাপা) সমর্থন পাবে কি-না, তা এখনও অনিশ্চিত। মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেও তা স্থগিত করেছে জাপা।
বিএনপিও স্বস্তিতে নেই। ১৮ বছরের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর মেয়র প্রার্থী এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। দু'দলের সমঝোতার সম্ভাবনা দিন দিন কঠিন হচ্ছে।
আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে ভোট হবে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি। ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ জানুয়ারি। সে পর্যন্ত সমঝোতার পথ খোলা থাকলেও দরকষাকষি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এবারই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ঢাকা সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 'নৌকা', 'ধানের শীষে'র মুখোমুখি লড়াইয়ের কারণে রাজনৈতিক উত্তাপ অন্যবারের তুলনায় বেশি। রাজধানীতে নির্বাচন, তাই সারাদেশের নজরও উত্তরের মেয়র পদের ভোটে।
মেয়র পদে আতিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী। অন্যদিকে তাবিথ আউয়াল গত রাতেই বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ১৮ জন আবেদনপত্র সংগ্রহ করেছেন। দলীয় একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারলেও জোটসঙ্গী কিংবা রাজনৈতিক মিত্রদের সমর্থন আদায়ে বেগ পেতে হচ্ছে বড় দু'দলকে।
গতকাল সোমবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে জোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থীই হবেন ১৪ দলের একক প্রার্থী। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বৈঠক শেষে এ কথা জানান।
মিত্রদের সামাল দিতে জটিল অবস্থায় রয়েছে বিএনপি। গত ৮ জানুয়ারি ২০ দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিএনপির প্রার্থীই হবেন জোটের প্রার্থী। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত মানছে না জামায়াত। বৈঠকে সিদ্ধান্ত ছিল, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জোটের একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। কিন্তু নিবন্ধন হারানো জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। দলীয় প্রতীক ও পরিচয়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির মুহম্মদ সেলিম উদ্দিন গত রোববার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছিলেন, জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা করে জোটের একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। জোট সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার এ ব্যাপারে আলোচনা হলেও সমাঝোতা হয়নি। মির্জা ফখরুল জামায়াত নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। জামায়াতের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দলীয় ফোরামে আলোচনার পর জোট নেত্রী খালেদা জিয়াকে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
রাজশাহী এবং সিলেটেও মেয়র পদে প্রার্থী করেছে জামায়াত। দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য সিলেট। সিলেটে জামায়াত প্রার্থীকে জোটের সমর্থনের নিশ্চয়তা দেওয়া হলে ঢাকায় বিএনপির সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হবে।
জোটের সিদ্ধান্তের পরও জামায়াতের ভোটের মাঠে সক্রিয় হওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে জোটগতভাবে একক প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ মুহূর্তে কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত ২০ দলের একক প্রার্থীই নির্বাচনে লড়বেন। শরিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু সমাধান করা হবে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট সিটির মেয়র প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেছেন, ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়েছে সংসদ নির্বাচনের জন্য। সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে জোটের শরিকরা পৃথকভাবে অংশ নিচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত পৃথক প্রার্থী দিয়েছে। ঢাকায় জামায়াতের প্রার্থী দেওয়া এর ধারাবাহিকতা মাত্র।
১৪ দলকে পাশে পেলেও এ জোটের বাইরে থাকা বড় মিত্র জাপাকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। গত মাসে অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে প্রায় লাখ ভোটের ব্যবধানে হারায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা। রংপুর এরশাদের 'ঘাঁটি' হলেও ঢাকায় সে অবস্থান নেই জাপার। ঢাকা উত্তরের সর্বশেষ নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়া জাপার যোগ্য প্রার্থীর সংকট হয়েছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত দলটির অবস্থান ছিল, ঢাকায় প্রার্থী দেওয়া হবে না।
কিন্তু গত দু'দিনে অবস্থান বদলে গেছে। সাবেক এক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাকে প্রার্থী করে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংসদের বিরোধী দল জাপা। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মেজর জেনারেল (অব.) এহতেশামুল হক ঢাকা উত্তরে জাপার মেয়র প্রার্থী হতে চান। আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে তার জাপায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তাকে দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার কথা ছিল আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে।
ঢাকা মহানগর (উত্তর) জাপার সভাপতি এস এম ফয়সাল চিশতী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে সন্ধ্যার দিকে অবস্থান বদলে যায়। জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদারসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর আজকের সংবাদ সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণা দেন এরশাদ। জাপা মহাসচিব জানান, অনিবার্য কারণবশত সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আগামী দু-একদিনে বিষয়টি পরিস্কার হবে।
প্রার্থী ঘোষণার সংবাদ সম্মেলন স্থগিতে চাপের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি দলটির কোনো নেতা। তবে একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে দরকষাকষি চলছে। বনিবনা হলে মেয়র পদে প্রার্থী দেবেন না এরশাদ। রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, 'জাপার প্রার্থী না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন থাকবে।'
২০১৩ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে ঘোষণা দিয়ে 'বেরিয়ে যায়' জাপা। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে দল দুটি সমঝোতা করে নির্বাচন করে। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জাপার প্রার্থী ছিল না। আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন করে দলটি। ঢাকায় তার পুনরাবৃত্তি হবে কি-না এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, এ নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি।