23-08-2016 01:27:46 PM
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের জঙ্গলে মুখ লুকিয়ে রয়েছে এক প্রাচীন সভ্যতা, যার বয়স কোনওমতেই ৩২২- ১৮৫ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের কম নয়। অর্থাৎ চন্দ্রগুপ্ত, অশোক মৌর্যের সমসাময়িক এই সভ্যতা।
লোককথায় সুন্দরবনের যে ইতিহাস পাওয়া যায়, তাও অন্তত ২০০- ৩০০ খ্রীষ্টাব্দের। ধানচি ও বিজওয়ারার জঙ্গলে বাঘের জন্য সংরক্ষিত এলাকা থেকে গত ২২ বছরে যে সব মিনিয়েচার পাত্র, রঙের খড়ি, সেমি প্রেশাস পাথর ইত্যাদি উদ্ধার হয়েছে, তার থেকেও বেশি কিছু ওখানে পাওয়া সম্ভব। পাথরপ্রতিমা ব্লকের গোবর্ধনপুর এলাকায় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার একটি দল দীর্ঘদিন ধরে খননকার্য চালাচ্ছে। তারা জানিয়েছে, ওখান থেকে যে সব টেরাকোটার মানুষ ও জীবজন্তুর মূর্তি উদ্ধার হয়েছে, তা খ্রীষ্টাব্দ শুরু হওয়ার সমসাময়িক, এমনকী তার আগেরও রয়েছে। সিলমোহরের চিহ্ন আঁকা যে সব টেরাকোটার টুকরো পাওয়া গেছে তা প্রাগৈতিহাসিক যুগের সাক্ষ্য দেয়।
স্থানীয় মৎস্যজীবী বিশ্বজিৎ সাহু প্রত্নতত্ত্ব বা মৌর্য যুগ সম্পর্কে কিছুই না জেনেও একক প্রচেষ্টায় এ ধরনের বহু ছোটবড় নিদর্শন সংগ্রহ করেছেন। সুন্দরবনের নানা দ্বীপে মাছ ধরতে গিয়ে এমন ১৫,০০০-এর বেশি নিদর্শন জোগাড় করেছেন তিনি। এ সবের মধ্যে যেমন তৃতীয় খ্রীষ্টপূর্বাব্দের মৌর্য যুগের স্মারক রয়েছে, তেমনই আছে খ্রিষ্টীয় যুগের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের নিদর্শন। সে সব থেকে বোঝা যাচ্ছে, সুন্দরবনের ভেতরে বেড়ে ওঠা ওই সভ্যতা মৌর্য যুগ থেকে শুঙ্গ যুগে বিস্তৃত হয়েছিল, গুপ্ত সাম্রাজ্যের শুরুর দিকেও অস্তিত্ব ছিল তার। সম্ভবত গুপ্ত সাম্রাজ্যের শেষের দিকে এই সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটে।
কিন্তু কীভাবে এই সভ্যতা বিনষ্ট হল, তা এখনও বুঝে উঠতে পারেননি প্রত্নতাত্ত্বিকরা। এ নিয়ে তাঁদের গবেষণা চলছে।