06-10-2018 04:36:36 PM
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করেছে সরকার। এতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে কোটা বাতিল করা হয়েছে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতোই বহাল থাকবে।
জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদের স্বাক্ষরে বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) জারি করা এই পরিপত্রে বলা হয়, ‘নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণী) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণী) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে।’
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে এতদিন ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীর জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল। বাকি ৪৪ শতাংশ নিয়োগ হতো মেধা কোটায়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতেও আছে বিভিন্ন ধরনের কোটা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘সরকার সকল সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ জারি করা কোটা পদ্ধতি সংশোধন করল।’
চাকরিতে নিয়োগে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে চাকরি প্রার্থীরা। এক পর্যায়ে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র ব্যানারে এই আন্দোলন জোরালো রূপ নেয়।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই আর রাখা হবে না। যদিও পরবর্তীতে সংসদে তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখতে হাইকোর্টের রায় আছে।
কোটাবিরোধীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে গত ২ জুন একটি কমিটি করে সরকার।
এ কমিটি গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাদের প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। কমিটি ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী) কোন কোটা না রাখার সুপারিশ করে। কমিটি এসব পদে সরাসরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এর আলোকেই বৃহস্পতিবার কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
৪০তম বিসিএসে কোটা পদ্ধতি নেই
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পর সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ড. সাদিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কোটা বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। ৪০তম বিসিএসে কোটা পদ্ধতি রাখা হবে না। তবে ৩৯তম বিসিএসে কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।
১ হাজার ৯০৩টি পদে প্রথম শ্রেণীর ক্যাডার নিয়োগ দিতে গত ১১ সেপ্টেম্বর ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে প্রকাশ হওয়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে কোটা নিয়ে সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগের কথা বলা হয়েছে বলে জানান পিএসসি চেয়ারম্যান।
৪০তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে ২০০ জন, পুলিশে ৭২ জনসহ সাধারণ ক্যাডারে ৪৬৫ জন এবং অন্যান্য ক্যাডার মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৯০৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে এই বিসিএসের জন্য অনলাইনে আবেদনপত্র গ্রহণ শুরু হয়। আগামী ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবেদনপত্র জমা দিতে পারবে চাকরি প্রার্থীরা।
বৃহস্পতিবার ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার অনলাইন আবেদনপত্র পূরণের ক্ষেত্রে কারিগরি বিষয়ে সহায়তা ও পরামর্শ দিতে হেল্পলাইন চালু করেছে পিএসসি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ০১৫৫৫-৫৫৫১৪৯, ০১৫৫৫-৫৫৫১৫০, ০১৫৫৫-৫৫৫১৫১ এবং ০১৫৫৫-৫৫৫১৫২ নম্বরে ফোন করে আবেদনকারীরা এ সংক্রান্ত সহায়তা নিতে পারবেন ।
i-news24.com