বাংলাদেশ | বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ,১৪৩১

বিরোদী দল

13-02-2018 11:32:47 AM

দুই মামলায় খালেদার হাজিরা পরোয়ানা কারাগারে

newsImg

রায়ের নকল না পাওয়ায় আপিল হচ্ছে না আজও

 

দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে দুটি মামলায় হাজির করতে আদালতের নির্দেশনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে এসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছানো হয়। ডিআইজি (প্রিজন) তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর বিএনপি চেয়ারপারসনকে বর্তমানে ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডের পুরনো কারাগারে রাখা হয়েছে।

শাহবাগ থানার একটি মামলায় আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি এবং তেজগাঁও থানার আরেক মামলায় আগামী ৪ মার্চ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করাতে আদালত থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মামলা দুটি ২০০৭ ও ২০০৮ সালের বলে জানা গেছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি ছাড়াও নাইকো দুর্নীতি, গ্যাটকো দুর্নীতি, বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতির মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল।

খালেদা জিয়া, তাঁর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী। এই মামলা দায়েরের পরদিনই খালেদাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরের বছর ১৩ মে খালেদাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে মামলাটির অভিযোগ গঠনের শুনানি চলছে। গত ২১ জানুয়ারি বিচারক আগামী ৪ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলাটিরও অভিযোগ গঠনের শুনানি চলছে ঢাকার ২ নম্বর বিশেষ জজ হোসনে আরা বেগমের আদালতে। এটির শুনানির পরবর্তী তারিখ জানা যায়নি। মামলাটি দুদক দায়ের করে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি; খালেদা এবং তাঁর মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে। ওই বছরের ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয় আদালতে।

নাইকো মামলাটি হয়েছিল ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায়; দুদক মামলার পর তদন্ত করে ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল। বর্তমানে মামলাটিতে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ মাহমুদুল কবীরের আদালতে আসামিদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদনের শুনানি চলছে। ১১ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক রয়েছে।

এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া রায়ের কপি গতকালও হাতে পাননি তাঁর আইনজীবীরা। এ অবস্থায় এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আজ মঙ্গলবারও আপিল দায়ের হচ্ছে না।

অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কুমিল্লার একটি নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো নিয়ে গতকাল দিনভর গুজব চলেছে। ঢাকার উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি), প্রসিকিউশন মোহাম্মদ আনিসুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার কোনো নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এ খবর ভিত্তিহীন। স্রেফ গুজব।’

খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানান, রায়ের অবিকল সত্যায়িত নকল (জাবেদা নকল) গতকালও তাঁরা হাতে পাননি। নকল না পাওয়া পর্যন্ত আপিল করার সুযোগ নেই। একই কারণে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দণ্ডাদেশ দেওয়ার এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আজ মঙ্গলবারও আপিল দায়ের করা যাচ্ছে না।

এদিকে রায়ের কপি পেতে গতকাল আদালতে তিন হাজার ফলিও (যে কাগজে রায়ের নকল দেওয়া হয়) জমা দিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। রায়ের ৬৩২ পাতার নকল দেওয়া হবে এই ফলিওতে। গতকাল সকালে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে এই ফলিও জমা দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ গতকাল সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার পরই রায়ের কপি পেতে আদালতে আবেদন করেন খালেদার জিয়ার আইনজীবীরা। রবিবার এ নিয়ে শুনানি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল আদালতে তিন হাজার ফলিও জমা দেওয়া হয়। যত দ্রুত রায়ের কপি পাওয়া যাবে তত তাড়াতাড়ি আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা।

কুমিল্লার নাশকতা মামলার পরোয়ানা গুলশান থানায় : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় নৈশকোচে পেট্রলবোমা হামলা চালিয়ে আট যাত্রী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রাজধানীর গুলশান থানায় পাঠানো হয়েছে। গত ২ জানুয়ারি কুমিল্লার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৫নং আমলি আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক বেগম জয়নব খালেদা জিয়াসহ বিএনপি-জামায়াতের ৫৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করেন।

কুমিল্লা সদর কোর্টের জিআরও আবুল কালাম গতকাল জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঢাকার গুলশান থানায় পাঠানো হয়েছে। তবে এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর কোনো আবেদন আদালতে আসেনি।

চৌদ্দগ্রাম থানার জিআরও নুরুন্নবী জানান, একই ঘটনায় দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত রয়েছে। হত্যা মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সিডাব্লিউর (কাস্টডি ওয়ারেন্ট) মাধ্যমে তামিল করা হয়ে থাকতে পারে। আমরা ওকালতনামা পাঠিয়েছি। তিনি স্বাক্ষর করে দিলে আমরা আদালতে জামিনের আবেদন জানাব।’ তিনি জানান, কুমিল্লার তিনটি মামলার মধ্যে দুটি মামলা উচ্চ আদালতে স্থগিত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে এই রায় ঘোষণার পর তাঁকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। তিনি সেখানেই আছেন।

খবরটি সংগ্রহ করেনঃ- i-news24
এই খবরটি মোট ( 5363 ) বার পড়া হয়েছে।
add

Share This With Your Friends