বাংলাদেশ | বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ,১৪৩১

রাজধানী

08-02-2018 12:20:41 PM

ঢাকার প্রবেশপথে ব্যাপক তল্লাশি

newsImg

সকাল সাড়ে ৯টা। ঈগল পরিবহনের একটি বাস খুলনা থেকে রাজধানীর দিকে আসছিল। উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে নিরাপত্তা চৌকির সামনে পুলিশের সংকেত পেয়ে দাঁড়িয়ে যায় বাসটি। ছয়-সাতজন পুলিশ সদস্য বাসে ওঠেন। তাঁরা যাত্রীদের লাগেজ তল্লাশি করলেন। কে, কোথা থেকে এসেছে জানতে চাইলেন। কারো কারো পরিচয়পত্রও দেখলেন তাঁরা।

গাজীপুর পরিবহন নামের আরেকটি বাসে আসা যাত্রী বাপ্পী রায় বললেন, ‘পুলিশ আমার পুরো শরীর তল্লাশি করেছে। আন্ডারওয়ার পর্যন্ত দেখতে চেয়েছিল। পরে অন্য যাত্রীরা আপত্তি করলে সরে আসে পুলিশ। সভ্য দেশে এভাবে তা চলতে পারে না।’

গতকাল বুধবার সকালে আব্দুল্লাহপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে সরেজমিনে বাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহনে পুলিশের এমন কড়া তল্লাশির চিত্র দেখা গেছে। একই সঙ্গে যাত্রীদের কাছ থেকে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।

সদরঘাটে নৌ পুলিশের পাশাপাশি ঘাট শ্রমিকদেরও তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে। এসব শ্রমিক সরকার সমর্থক শ্রমিক লীগের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। এতে করে বাড়তি বিড়ম্বনায় পড়ে যাত্রীরা। অবশ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাসযাত্রীসহ সাধারণ মানুষ তল্লাশিকে স্বাভাবিক হিসেবেই নিয়েছে।

দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচারের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

যাত্রাবাড়ী : সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী এলাকায় দেখা গেছে, ২০-৩০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যান্য দিন যাত্রাবাড়ীর ওই এলাকাটিতে একের পর এক বাস চলাচল করতে দেখা যায়। কিন্তু গতকাল সেই চিত্র ছিল অনুপস্থিত।

দুপুর ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের দিক থেকে যাত্রাবাড়ী মোড় পেরোনোর জন্য কালো রঙের একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-চ ১৯-১৯৪৭) আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য এগিয়ে যান গাড়িটির দিকে। পুলিশ জানায়, গাড়িটি তল্লাশি করা হবে। তল্লাশি শেষে গাড়িটিকে চলে যেতে বলা হয়। সেখানে দায়িত্বরত যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুকিত হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উপরের নির্দেশে গাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহ হলে তার দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে।’

সায়েদাবাদ : এখানকার বাস টার্মিনালটিতে বাস কম দেখা গেছে। যাত্রী সংখ্যাও ছিল কম। চালকরা জানান, এখান থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল করে। খালেদা জিয়ার রায়ের কারণে গণ্ডগোলের ভয়ে ঢাকার বাইরে যাওয়া যাত্রী কম। গুলিস্তানের পাইকারি জুতার ব্যবসায়ী আবু ফজল বলেন, লক্ষ্মীপুরের এক ব্যবসায়ীর কাছে টাকা পান তিনি। এ কারণে তিনি সেখানে যাচ্ছেন। তা না হলে তিনি এ অবস্থায় যেতেন না।

গতকাল দুপুর ১টার দিকে নোয়াখালী থেকে হিমাচল নামের একটি বাস সায়েদাবাদ টার্মিনালে আসে। এক প্রশ্নের জবাবে চালক সোহেল বলেন, বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার রায়। কী অবস্থা হয় সেটি দেখে তবেই রাস্তায় গাড়ি নামানো হবে।

আব্দুল্লাহপুর : উত্তরার আবদুল্লাপুর পলওয়েল মার্কেটের সামনে তল্লাশি চৌকির ব্যারিকেড ভেঙে কিছুটা সামনে চলে যায় গাজীপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি বাস। পুলিশ বাসটি আটক করে চালককে গালাগালি করে। যাত্রীরা প্রতিবাদ করে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

তল্লাশি চৌকিতে দায়িত্বরত উত্তরা পূর্ব থানার এসআই সুজন মিয়া কালের, সন্দেহভাজনদের মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ, ব্যাগ তল্লাশি, বাস-প্রাইভেট কারসহ যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে।

গাবতলী : ঢাকামুখী যানবাহনগুলোতে ব্যাপক তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে। ঢাকামুখী যাত্রী সংখ্যাও ছিল কম। নওগাঁ থেকে আসা হানিফ পরিবহনের চালক মোহাম্মদ আলী জানান, তাঁর গাড়িতে যাত্রী ছিলেন ২৫ জন। স্বাভাবিক দিনে এ সংখ্যা থাকে ৪০। গাবতলীর পর্বত সিনেমা হলের সামনে পুলিশ বক্সের কাছে তাঁর গাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা এক্সপ্রেসের ম্যানেজার বোরহানউদ্দিন বলেন, প্রতিদিন তাঁদের গাড়ির ১২টি ট্রিপ থাকে। কিন্তু আজকে পাঁচটির বেশি ট্রিপ হচ্ছে না।

সদরঘাটে শ্রমিক লীগের তল্লাশি : সকাল ৭টার দিকে ঢাকা-বগা-পটুয়াখালী রুটের সুন্দরবন-৯ লঞ্চটি এসে ভেড়ে ঘাটের ৬ নম্বর পন্টুনে। লঞ্চটির সুপারভাইজার মো. ইউনূস হোসেন বলেন, পটুয়াখালী থেকে ছাড়ার সময়ে সেখানকার পুলিশ ব্যাগে অবৈধ কিছু আছে কি না তা দেখেছে। ঢাকায় আসার পর নৌ পুলিশ আর ঘাট শ্রমিকরা তল্লাশি করছে।

বগা থেকে পুরো পরিবার নিয়ে এসেছেন জাফর আহমেদ। তিনি বললেন, এর আগে ব্যবসায়ের কাজে অনেকবার এসেছেন। এবারের মতো ঘাটে ঘাটে তল্লাশি কখনো দেখেননি। হয়তো ভালোর জন্যই এমনটা করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করছেন।

সদরঘাট নৌ পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. আবুল হাসনাত বলেন, ‘নিয়মিত দায়িত্বরত পুলিশদের সঙ্গে কয়েকজন বাড়ানো হয়েছে। আসলে পরিস্থিতি বিবেচনায় বাড়তি নজরদারি তো কিছু আছেই।’

সদরঘাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই এস এম এনামুল হক বলেন, ‘কয়েকজনকে সন্দেহ করে আটক করা হয়েছিল, পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

খবরটি সংগ্রহ করেনঃ- i-news24
এই খবরটি মোট ( 5787 ) বার পড়া হয়েছে।
add

Share This With Your Friends