বাংলাদেশ | বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ,১৪৩১
স্বাস্থ্য কথা
14-11-2017 04:25:22 PM
দেশে নারী ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে
অসচেতনতা, সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় না করা ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত্মদের নিয়মিত ইনসুলিন ব্যবহারের উদাসীনতায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নারী ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আর অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস অন্ধত্ব, হৃদরোগ, কিডনি নষ্ট, স্ট্রোক ও পুঙ্গত্বের মতো কঠিন রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় আজ 'সকল গর্ভ ধারণ হোক পরিকল্পিত' প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। বিশ্বের ১৬০টি দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্ত্মর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ডায়াবেটিস আক্রান্ত্মের সংখ্যা ৭১ লাখেরও বেশি যাদের অর্ধেকই মহিলা। আবার বিশ্বে প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে একজন এ রোগে আক্রান্ত্ম যাদের অর্ধেকর কাছেই বিষয়টি অজানা।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) মতে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৪২ কোটি ডায়াবেটিস আক্রান্ত্ম মানুষের মধ্যে ২০ কোটি হলো মহিলা। মূলত রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা, গর্ভকালীন সময়ে জিডিএম সমস্যা ও রক্তে হরমোনের উচ্চমাত্রা বেড়ে যাওয়া। এছাড়া পরিবর্তিত জীবন-যাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মেয়েদের অতিরিক্ত ওজন, প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের বেশি বয়সে সন্ত্মান নেয়া, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকার কারণে এ রোগের বিস্ত্মার ঘটছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর চিকিৎসকরা জানান, গর্ভ ধারণের পর যদি রক্তের গস্নুকোজ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া যায় তবে সে অবস্থাকে জিডিএম বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলে। বর্তমান বিশ্বে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার ১ থেকে ২৮ শতাংশ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২০ জন নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত্ম হয়। গর্ভকালীন সময়ে এ রোগ ধরা পড়লে পরবর্তীতে ৫০ ভাগ নারীর টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি থাকে। আন্ত্মর্জাতিক ডায়াবেটিক ফাউন্ডেশনের এক তালিকা অনুযায়ী ডায়াবেটিস আক্রান্ত্ম ঝুঁকির মধ্যে থাকা বিশ্বের ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশর অবস্থান সপ্তম। ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ খান বলেন, এ রোগটি বিশ্বব্যাপী মহামারির মতো বাড়ছে। এটি সারা জীবনের রোগ যা কখনো সারেনা। রোগটির বিষয়ে মানুষ সচেতন হলেও জ্ঞাত বা অজ্ঞাতভাবে প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ এটিতে আক্রান্ত্ম। এছাড়া নারীদের ওজন ও বয়স বাড়া ও গর্ভধারণকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এজন্য সরকারের সহয়তায় সারাদেশে ৫০টি গর্ভ ধারণ পূর্ব সেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। চলতি বছরের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত্ম এখানে বিনামূল্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো হবে। এছাড়া সারাদেশে ৪০০ কাজী ও ৩০০ চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা মানুষকে অতিরিক্ত ওজন, বস্নাড প্রেসার, প্রোসাবে ইনফেকশন, অ্যামোনিয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়ে সচেতন করতে পারবে। কাজী নব-দম্পতিদের বিয়ের পূর্বে গর্ভবতী মায়েদের অপুষ্টি থাকলে সন্ত্মানদের ভবিষ্যৎ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে সে বিষয়ে সচেতন করবেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়া কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন তিনি। বারডেম হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার বলেন, এ হাসপাতালের বহিঃবিভাগে ডায়াবেটিস আক্রান্ত্ম নারী ও পুরম্নষ সমান হলেও আন্ত্মঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা পুরম্নষ রোগীদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তবে বর্তমান সময়ে নারীদের মধ্যে রোগটি বেশি পরিলক্ষিত হওয়ায় গর্ভ ধারণের পূর্বে চেকআপ করে কার্যকর চিকিৎসা নেয়া জরম্নরি। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির ২০১৫ সালের আরেক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত্ম হয়ে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। এছাড়া বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত্ম রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪২ কোটি। এ অবস্থায় রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলে ২০৪০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ৬৪ কোটিতে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিআইএস জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসর) অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মজিদ ভুইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি যায়যায়দিনকে জানান, মানব দেহে ইনসুলিন নামক এক প্রকার হরমোনের অভাব কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে গেলে রক্তের গস্নুকোজ দেহের বিভিন্ন কোষে প্রয়োজন মতো ঢুকতে পারে না বলে রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিকেই ডায়াবেটিস বলে। ডায়াবেটিস প্রধানত টাইপ-১ ও টাইপ-২ এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। ৩০ বছরের কম বয়সীদের টাইপ-১ এর ঝুঁকি বেশি। এ ধরনের রোগীদের দেহে একেবারেই ইনসুলিন তৈরি হয় না। অন্যদিকে দেশে ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ টাইপ-২ রোগী রয়েছে। এ সকল রোগীদের শরীরে ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় অথবা ঘাটতি থাকে। তিনি আরও বলেন, দেশে অব্যাহত নগরায়ন এর জন্য দায়ী। এতে করে ডায়াবেটিক রোগীর কিডনি হৃদপি-, চোখ, পা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত্ম হচ্ছে। অন্ধত্ব বরণ করছে এক-তৃতীয়াংশ রোগী। আর এটির হাত থেকে মুক্তি পেতে নারীদের গর্ভকালীন সময়ে ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে ডায়াবেটিসের গস্নুকোজ টলারেন্স পরীক্ষা করানো, সন্ত্মান প্রসব পরবর্তী সুষম খাদ্য গ্রহণ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত হাটাচলা করা জরম্নরী। এছাড়া কিশোরী মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক ও রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি বা পলিসিস্টি ওভারি সিনড্রোম দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। এদিকে আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে সোমবার দুপুরে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের ডায়াবেটিক সমিতির বাডাস কনফারেন্স রম্নমে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে এবারের প্রতিপাদ্য এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে এসব কথা বলা হয়। এ সময় জানানো হয় এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় 'সকল গর্ভধারণ হোক পরিকল্পিত' সামনে রেখে নারীদের মাঝে ডায়াবেটিস সতেচনতা বাড়াতে বিশেষ কর্মসূচি থাকবে। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতি বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, সংবাদ সম্মেলন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-রোগীদের মধ্যে আলোচনা ও প্রশ্নত্তোর পর্ব, আলোচনা সভা,র্ যালি বা পদ যাত্রা, নগরীর বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ এলাকায় বিনামূল্যে ডায়াবেটিস টেস্ট, চিকিৎসা পরামর্শ, ১৫ ভাগ ছাড়ে অন্যান্য পরীক্ষা ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে।