24-10-2017 10:56:00 AM
আপাত দৃষ্টিতে কঠিন শব্দ মনে হলেও নিশ্চিন্ত থাকুন এই ফ্রিল্যন্সিংয়ের জগতটা খুবই মজার এবং যদি মজা নিয়ে কাজ করতে পারেন এই কঠিন শব্দই হয়ে উঠতে পারে আপনার সবচে কাছের বন্ধু ।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি , আমি যখন প্রথম এই ফ্রিল্যন্সিংয়ের নাম শুনি , এটি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা খুব একটা খুঁজে পাইনি আমি । যার প্রধান কারণ আমি গুগলে সার্চ করিনি বাংলায় ফ্রিল্যন্সিং লিখে । সার্চ করার পর আরেকটা সমস্যা হল , যারা লিখেছেন তারা খুবই জটিল উপায়ে বুঝিয়েছেন এবং নতুন শব্দ ব্যবহার করেছেন যেগুলো আমার মত খারাপ ছাত্র এবং সদ্য টেকনোলোজিতে প্রবেশ করা নবীনের জন্য দুর্বোধ্য ছিল । অথবা পর্ব আকারে লিখতে গিয়ে পুরোটা শেষই করেননি ।
এটা ২০১১ এর পরিস্হিতি । এখন প্রেক্ষাপট পালটেছে। অনেক ভাল লেখা আপনি সহজেই পাবেন গুগলকে বন্ধু বানালে । ফ্রিল্যন্সিং নিয়ে কথা শুরুর আগে এই অনুরোধটুকু করলাম। বাংলায় লিখে সার্চ করার চেষ্টা করবেন । এতে করে বিভিন্ন বাংলা ব্লগে বেশ কিছু ভাল লেখা খুঁজে পাবেন ।
চলুন এবার জানা যাক ফ্রিল্যান্সিং কি । চেষ্টা করব যত সহজে বোঝানো যায় আমার অতি নগন্য জ্ঞানে ।
ফ্রিল্যন্সিং হল একটি ওপেন মার্কেপ্লেস । নিশ্চয় ভাবছেন ওপেন মার্কেটপ্লেস কি । আসুন উদাহরণের সাহায্যে জেনে নেই । ধরুন আপনি ব্যবসা করবেন । আপনার পণ্য যাতে সহজে বিক্রি করা যায় এজন্য প্রচুর ক্রেতা আছে এমন একটি বাজার খোলা হল যেখানে আপনি কোন শর্ত কিংবা ঝামেলা ছাড়াই আপনার পণ্য বা সেবা তুলে ধরতে পারবেন এবং ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে পারবেন। বাস্তবে এমন কোন বাজার না থাকলেও অনলাইনে আছে। প্রচুর ওয়েবসাইট আছে যেগুলোতে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ক্রেতা বা বায়াররা । আপনি হলেন তাদের কনড্রাক্টর অর্থাত্ তাদের কাজটা আপনি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে করে দেন। বিনিময়ে বাজার কর্তৃপক্ষ অর্থাত্ ওয়েবসাইটগুলো নির্দিষ্ট পারসেন্টাইজ পরিমান অর্থ কেটে রাখে । আশা করি কিছুটা বুঝতে পারছেন ওপেন মার্কেপ্লেস কি । এই ওপেন মার্কেটপ্লেসে আপনি যখন প্রযুক্তিভিত্তিক কাজ করবেন তখন তাকে বলা হচ্ছে ফ্রিল্যন্সিং ।
কাজগুলো কেমন ? ধরুন গ্রাফিক্স ডিজাইন করা , লোগো বানিয়ে দেয়া , ওয়েবসাইট বানিয়ে দেয়া , বিভিন্ন পণ্যের বিবরণ লেখা , ইমেইলের বিজ্ঞাপন বানানো যেটি ইমেইল মার্কেটিং নামে পরিচিত , ডাটাবেজ তৈরী করা , ওয়েবসাইটের সমস্যার সমাধান করা ইত্যাদি কাজ আপনি ঘরে বসেই এই ওয়েবসাইটগুলোতে করতে পারবেন । এই কাজগুলোই ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং নামে পরিচিত । আপনি যখন এই কাজগুলো করবেন আপনাকে তখন ফ্রিল্যান্সার বলা হবে ।
একজন ফ্রিল্যান্সারের যোগ্যতা কি ? কি কি প্রয়োজন ফ্রিল্যান্সার হতে হলে
প্রথমত আপনার একটি ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থাকতে হবে ।
আপনার কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে ।
প্রযুক্তিগত কোন একটি বিশেষ বিষয়ে আপনাকে পারদর্শী হতে হবে । যেমন ধরুন ভাল গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে পারা , ওয়েব পেউজ বানাতে পারা , ইমেইল মার্কেটিং করতে পারা , ভাল লেখার ক্ষমতা থাকলে লেখালেখির কাজ করা ইত্যাদি প্রচুর কাজ রয়েছে , যে কোন একটিতে অন্তত পারদর্শী হতে হবে ।
আপনাকে অত্যন্ত পরিশ্রমী , আগ্রহী এবং ধৈর্য্যশীল হতে হবে । নতুবা সাফল্য আসবে না।
আয় করার চিন্তা কম করে কাজ শেখার এবং নিজের স্কিল বাড়ানোতে মনযোগী হতে হবে
আপনার যদি ওপরের সব শর্ত পূরণ হয় তাহলে এবার চলুন জানা যাক কোথায় কাজ করবেন। ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হল odesk.com , এছাড়াও freelancer.com , elance.com সহ বিভিন্ন সাইট রয়েছে যেগুলোর ওপর আপনি আস্হা রাখতে পারেন ।
চলুন ওডেস্ক নিয়ে কথা বলি । বর্তমানে ওডেস্ট সবচে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস । এখানে প্রচুর বায়ার এবং কনড্রাকটরের মধ্যে কাজ আদান প্রদান হয় । কি করে কাজ করবেন ওডেস্কে ? দেখে নেওয়া যাক কর্মপন্হা !
ওডেস্ক হোমপেজ
প্রথমত আপনাকে তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি একাউন্ট খুলতে হবে । ফেসবুকে কিংবা ইমেইলে যেভাবে একাউন্ট খুলতে হয় সেভাবে । একাউন্ট খোলার পর আপনি দেখতে পাবেন আপনার একাউন্ট হয়ত শূন্য ভাগ কমপ্লিট দেখাচ্ছে অথবা ১০ ভাগ। আরো ৫ ভাগ বা ১০ ভাগ পূরণের জন্য আপনাকে বলা হচ্ছে । এবার তা পূরণের জন্য সেখানে ক্লিক করুন । এভাবে ১০০ ভাগ করে ফেলার চেষ্টা করুন । এটি বাধ্যতামুলক নয় তবে যদি করেন তাহলে আপনি আরও অধিক কাজের জন্য এপ্লাই করতে পারবেন । কাজের জন্য আবেদন করাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ভাষায় বিড করা বলা হয় । তাছাড়া প্রোফাইল একশ ভাগ থাকলে বায়ারদের নজর কাড়া সহজ হবে ।
এছাড়া ওডেস্কে বিভিন্ন পরীক্ষা দেয়ার সুযোগও আছে । আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী সেগুলোতে পরীক্ষা দিতে পারেন । এই টেস্টগুলোতে পাশ করলে তা আপনার প্রোফাইলকে আকর্ষনীয় করে তুলবে এবং আপনি কাজ পাওয়ার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবেন । টেস্টগুলোতে পাশ না করলে ১৫ দিন পর আবারো দিতে পারবেন।
প্রোফাইল তৈরী করার সময় নিজের স্কিল গুলো দিতে ভুলবেন না। ছোট কথায় নিজের স্বকীয়তা তুলে ধরবেন বিবরণে। প্রোফাইল বানাতে সমস্যা হলে ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও টিউটোরিয়াল থেকে সার্চ করে দেখে নিতে পারেন প্রোফাইল ১০০ ভাগ বানানোর পদ্ধতি।গুগল এর পাশাপাশি ইউটিউবকেউ বন্ধু বানান।
যেখানে ক্লিক করবেন
প্রোফাইল তৈরী হয়ে গেলে এবার বিড করার পালা । ওডেস্কে ঢুকলেই দেখবেন ফাইন্ড ওয়ার্ক নামে একটি অপশন আছে সেখানে আপনার কাঙ্খিত কাজগুলো লিখে সার্চ করলেই লেটেস্ট জব গুলো আসবে ।
ফাইন্ড ওয়ার্ক পেজ
বিড করার আগে ভালভাবে দেখে নিন কাজটি আসলে পারবেন কিনা । বায়ার এর প্রোফাইলে গিয়ে দেখে নিন অ্যাকাউন্ট টি ভেরিফাইড কিনা।
যেভাবে বুঝবেন ভেরিফাইড কিনা
বিড করার সময় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কাভার লেটার । আপনি যখন কাজটিতে বিড করবেন আপনাকে একটি কাভার লেটার লিখে বায়ারকে পাঠাতে হবে । কাভার লেটার যদি পছন্দ হয় তবেই কেবল বায়ার আপনার প্রোফাইল ভিজিট করবে এবং আপনাকে ইন্টারভিউ এর জন্য নির্বাচিত করবে ।
সুতরাং কাভার লেটারের দিকে একটু বেশী মনযোগ দিতে হবে । এমন ভাবে কাভার লেটার লিখবেন যাতে বোঝা যায় আপনি কাজটি বুঝতে পেরেছেন এবং কাজটি করতে আপনি সর্বোচ্চ আন্তরিক । এবার ইন্টারভিউ এর জন্য সিলেক্ট হলে বায়ার আপনার সাথে যোগাযোগ করবে । বেশীরভাগ ইন্টারভিউ নেয়া হয় স্কাইপে । সুতরাং কম্পিউটারে সবসময় এটি চালু রাখবেন এবং বিড করার পর চেষ্টা করবেন একটানা অনলাইনে থাকতে যাতে বায়ার চাওয়া মাত্র আপনি রেসপন্স করতে পারেন ।
ওডেস্কে আবার কাজের ধরণ দু প্রকার । একটি হল ঘন্টা হিসেবে আরেকটি হল ফিক্সড প্রাইস হিসেবে। অর্থাত্ আপনি প্রতি ঘন্টা হিসেবেও কাজ করতে পারেন আবার ফিক্সড একটি রেটে কাজ করতে পারেন । সেক্ষেত্রে আপনি কতটুকু সময়ের মধ্যে কাজটি করবেন তা বায়ারকে জানাবেন
ধরলাম কাজ পেয়ে গেলেন এবং কাজ ঠিকঠিক করে দিলেন বায়ারকে । এবার যখন কাজ জমা দেবেন এবং পেমেন্ট নেবেন তখন দেখবেন একটি ফিডব্যাক অপশন থাকবে । আপনারা একে অপরকে একটি ফিডব্যাক দিবেন । এক্ষেত্রে সাধারণত উভয়েই ভাল ফিডব্যাক বা মন্তব্য দিয়ে থাকে । কারণ কেউ চায় না তার প্রোফাইলে খারাপ ফিডব্যাক থাকুক । এরপরেও বায়ার যদি খারাপ ফিডব্যাক দেয় আপনি তা মুছে দিতে পারবেন কিন্তু মুছে দিলেই আপনার পারিশ্রমিকটি সে ফেরত পেয়ে যাবে । এসব সমস্যা এড়াতে বায়ারের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখা খুব জরুরী
কাজ শেষে পারিশ্রমিক পাওয়ার পর সেটিং অপশন থেকে গেট পেইড অপশনে গেলেই দেখতে পাবেন কী পরিমান অর্থ জমেছে আপনার । একটি নির্দিষ্ট ডলার পার হলেই আপনি তা তুলতে পারবেন।
গেট পেইড অপশন
অনেকেই জানেন না যে, ওডেস্ক থেকে ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকে উইখড্রো দেওয়া যায়।
প্রথমত ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলুন। আপনার কলেজের আইডি দিয়েও এই একাউন্ট করতে পারবেন। খরচ পরবে মাত্র ১০০ টাকা । যার মধ্যে আপনি ৪০ টাকা চাইলে তুলে নিতে পারেন একাউন্ট একটিভ হবার সাথে সাথেই । একটিভ হবে ২ কর্মদিবসের ভেতর।
এবার ওডেস্কে গিয়ে সেটিংস্ থেকে গেট পেইডে ক্লিক করুন। এখান থেকে Local Fund Transfer এ ক্লিক করুন। Bank SWIFT Code চাইবে। সেখানে ডাচ বাংলা ব্যাংকের সুইফট কোড DBBLBDDH দিয়ে Go তে ক্লিক করুন। দেখবেন অটোমেটিকভাবে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ঠিকানা শো করছে।
নিচের দিকে আপনার সমস্ত তথ্য দিয়ে সাবমিট করুন। একাউন্ট নাম্বারের স্থানে আপনার ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকের ১২ ডিজিটের নাম্বার টা দিন(আপনার ১১ সংখ্যার মোবাইল নাম্বার + একটা চেক ডিজিট)। ব্রাঞ্চ এবং ব্রাঞ্চ এড্রেস এর জায়গায় আপনি যে উপজেলা ব্রাঞ্চ এর আওতাধীন ঐ ব্রাঞ্চের নাম ও এড্রেস দিন। পরবর্তী ফিল্ড গুলো পুরন করুন। এবার এড দিন একাউন্ট এ ক্লিক করুন। ব্যাস হয়ে গেল।
তিন দিন সময় নিবে একটিভ হতে। একটিভ হয়ে গেলেই উইখড্রো দিতে পারবেন। টাকা সরাসরি আপনার মোবাইল ব্যাংকের একাউন্টে জমা হবে।
অন্যান্য সুবিধা সমূহ:
আপনি দেশের যে কোন ডাচ বাংলা ব্যাংকের এ.টিএ.ম বুথ ও শাখা খেকে টাকা তুলতে পারবেন।
যেখানে ব্যাংকের শাখা নাই সেখানেও ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর এজেন্টের এর কাছ খেকে টাকা তুলতে পারবেন।
ট্রানজেকশন ফি ও খুব বেশি না। তুলনামুলক অনেক কম। ১ হাজারে ১০ টাকা মাত্র।
আপনার মোবাইলে টাকা থাকার কারনে আপনি বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা ব্যাবহার করতে পারবেন।
ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর একাউন্ট খেকে আপনি আপনার মোবাইলে রিচার্জ করতে পারবেন। তবে সব মোবাইল অপারেটরে এ করা যায় না।
অতি সংক্ষেপে আপনাদের ফ্রীল্যন্সিং জগত্ সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করলাম। আশা করছি একজন নতুন হিসেবে আপনার কাজে আসবে। ফ্রীল্যান্সাররা সবসময় স্বাধীন। নিজের সময় সুবিধা অনুযায়ী ঘরে বসেই তারা কাজ করেন এবং নিজের বেকারত্ব দূর করেন , দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আনেন । একটু পরিশ্রমী আর ধৈর্য্যশীল হলে আপনিও হয়ে যেতে পারেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার । শুভকামনা