লালমনিরহাট মোস্তফি থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত ১০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি মহাসড়ক। এই সড়কটি দিয়েই বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের মালামাল বহন করে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। বর্তমানে এই মহাসড়কটির বেহাল দশা। সড়কটির এই অবস্থার কারণে জেলার ব্যবসা বানিজ্য, যাত্রীদের যাতায়াত, বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে আমদানী রপ্তানি কার্যক্রমসহ সকল ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে জেলাবাসী। সড়ক বিভাগের আওতাধীন দীর্ঘ এই সড়কটির বিভিন্ন স্থান দিয়ে গাড়ী চলতে পারলেও জেলা সদরের প্রবেশদ্বার মহেন্দ্রনগর থেকে বড়বাড়ী পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার এবং আদিতমারী উপজেলার নামুড়ি থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা পর্যন্ত এই জাতীয় মহাসড়কটি চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
নামুড়ী থেকে কালীগঞ্জের যাতায়াতের অনুপযোগী হওয়ার মহাসড়কে ওভার টেক করে নামড়ী-সুকানদিঘীও কাকিনা স্টোশন পর্যন্ত পুরাই লোকালয় যানবাহন। তাতে লক্ষ্য করা গেয়েছে যাত্রী দূভোর্গের সমস্যা বাড়ছে। এছাড়া সড়কটির বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেখা গেছে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পণ্যবাহী ট্রাক এবং যাত্রীবাহী বাস ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে।
অপরদিকে বিকল্প সড়ক হিসেবে মহেন্দ্রনগর থেকে মোস্তফিরহাট সড়কটি দিয়েও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এলজিইডির আওতাধীন এই সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চালানোর কারণে সড়কে খানাখন্দ তৈরি হয়ে সেটাও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বর্তমানে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এই সড়কটির সংস্কার কাজ চলছে। ৪কোটি ৩৫লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে সিলেটের জনৈক ঠিকাদার সড়ক সংস্কারের এ কাজ শুরু করে। যা সম্পন্ন হওয়ার কথা ২০১৭সালের জানুয়ারী মাসে। কিন্তু কাজ সম্পন্ন হওয়ার আর মাত্র দেড় মাস বাকী থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র চল্লিশ শতাংশ। বর্তমানে কাজ চলছে খুবই ধীর গতিতে।
ফলে দুটি সড়কেই যানবাহন চলাচল করতে না পারায় জেলা থেকে বের হওয়ার জন্য গ্রামের ভিতরের ছোট ছোট সড়ক ব্যবহার হয়ে আসছিল। কিন্তু ভারী যানবাহন চলার কারণে সেসব সড়কের সবগুলোই বর্তমানে ভেঙ্গে গেছে। সেগুলো দিয়ে এখন আর কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারছেনা। দেখা গেছে অনেক চালকই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ী চালাচ্ছেন।
এদিকে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫টি রাত্রিকালীন কোচ, ভারত ও ভূটান থেকে আমদানীকৃত পন্যবাহী ট্রাক সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার পরিবহন চলাচল করে।কিন্তু বর্তমানে সড়কের বেহাল দশার কারণে লালমনিরহাটে কোন ধরনের গাড়ী আসা যাওয়া করতে পারছেনা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার সকল মানুষ।
ট্রাক বোঝাই পণ্য নিয়ে আসা যশোরের ট্রাক চালক আফসার উদ্দিন, সিরাজগঞ্জের রমজান আলী, দিনাজপুরের ওসমান গনি বলেন, আমরা সারা দেশে গাড়ী চালাই কিন্তু লালমনিরহাটের মতো এমন ভাঙ্গা রাস্তা আর কোথাও দেখি নাই। আমরা গাড়ী নিয়ে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে আছি। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারিনা। ফলে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে অবিলম্বে সড়কগুলো সংস্কার করে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করার দাবীতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করে, জেলা ট্রাক ও বাস মালিক সমিতি গোটা জেলা জুড়ে সড়ক অবরোধ করেছে।অবিলম্বে সড়ক সংস্কার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সাজেদুর রহমান মহেন্দ্রনগর থেকে বড়বাড়ী পর্যন্ত এবং নামুড়ী থেকে কাকিনা পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়কটির খারাপ অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, সড়কটি হাইওয়ের আদলে নির্মাণ করা হয়নি। এটি দিয়ে ভারী ভারী যানবাহন চলাচল করায় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো সংস্কারের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আল্ আমিন খান জানালেন, মোস্তফীরহাট থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত নির্মানাধীন সড়কটি গ্রামীন অবকাঠামোর। এটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের কথা নয়। সড়কটির সংস্কার কাজ দ্রুতই শেষ করা হবে। তবে এটি দিয়ে আবারো ভারী যানবাহন চলাচল করলে সড়কটি টেকসই হবেনা। ফলে আবারো তা ভেঙ্গে যাবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো:আলাউদ্দিন খান জানান, লালমনিরহাট থেকে যাতায়াতের সকল সড়কই বর্তমানে খারাপ। এগুলো সংস্কার ও মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।