21-06-2016 01:08:34 PM
সুন্দরবনঘেঁষা রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ বিষয়ে সরকারপক্ষ দৃঢ়তা দেখালেও এর পক্ষে যৌক্তিকতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারছে না। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবন যে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, সে বিষয়ে একদল বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী ও সামাজিক আন্দোলনকারীরা নিশ্চিত। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তাঁরা সে কথা স্পষ্টভাবেই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এবং প্রকল্পের ভারতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের এ উদ্বেগ আমলে নিয়েই উত্তর দিতে হবে সরকারকে।
সুন্দরবন বিশ্বের বিরল বাদাবন (ম্যানগ্রোভ)। বিশাল অরণ্য, অসংখ্য প্রাণী ও জৈবসত্তা, অজস্র নদ-নদী ও জলজ প্রাণিকুল মিলিয়ে সুন্দরবন এক মহাপ্রাণব্যবস্থা। এই বন সুরক্ষিত থাকলে তা বর্তমান ও ভবিষ্যতের মানুষকে প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানসম্পদে সমৃদ্ধ করে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও সামুদ্রিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে সুন্দরবন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক প্রাচীর। সুতরাং এই বনের জন্য ক্ষতিকর যেকোনো পদক্ষেপের আগে শতবার ভাবা উচিত। পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। দ্বিতীয়ত, রামপালে এ পর্যন্ত দুটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অদূরেই বেসরকারি আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার কাজ এগোচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে যে পরিবেশ সমীক্ষা করা হয়েছে, তা কীভাবে অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে? অর্থমন্ত্রী নিজেও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে বলে স্বীকার করেছেন।
এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, আর্থিক দিক থেকেও প্রকল্পটি ক্ষতিকারক। এখানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ হবে বর্তমানের চেয়ে ৬২ শতাংশ বেশি। তা ছাড়া ১৫ বছরের জন্য কর মওকুফ বাবদ সরকার বঞ্চিত হবে ৯৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার থেকে। পাশাপাশি নদী খনন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও বার্ষিক ব্যয় হবে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার! বিদ্যুৎ আমাদের দরকার, কিন্তু পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পথে কেন? বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিকল্প স্থান রয়েছে, সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই।