আন্তর্জাতিক

02-03-2016 10:18:40 am

আমি মনে হয় মারা যাচ্ছি...

newsImg

আমি মনে হয় বোমায় মারা যাচ্ছি। কিংবা ওরা আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে। নইলে আমিই হয়তো আত্মহত্যা করব। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাওয়ার মতো কোনো শক্তি আমার নেই।’ 

কথাগুলো ইরাকের মসুলে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বন্দিদশা থেকে পরিবারকে বলেছিল কিশোরী মেরিলিন নেভালাইনেন।

মেরিলিন ভাগ্যবতী। তার আশঙ্কা সত্য হয়নি। জীবিত অবস্থায় সে সুইডেনে বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে পেরেছে। তবে আইএসের জিম্মায় যে জীবন সে কাটিয়েছে, তার দুঃসহ স্মৃতি হয়তো অনেক দিন তাকে তাড়া করে ফিরবে।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, মেরিলিনের বয়স যখন ১৫, তখন অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সে এক জিহাদির সঙ্গে সুইডেন ছাড়ে। সামনে কী কঠিন দিন অপেক্ষা করছিল, কিশোরীটি তা আন্দাজও করতে পারেনি। ইরাকে আইএসের ডেরায় যাওয়ার পর সে বুঝতে শুরু করল, কী ভুলটাই না সে করেছে!

যখন বুঝতে পারল, তখন নানা কৌশলে সুইডেনে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে লাগল মেরিলিন। তখনই বাবা-মায়ের কাছে মৃত্যুশঙ্কার কথা প্রকাশ করত সে। শুনে মা-বাবা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মেয়েকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। নিজেরাও কয়েক দফায় ইরাকে যান। অবশেষে তাঁরা সফল হন। গত শুক্রবার তাঁদের মেয়ে সুইডেনে ফিরেছে।

সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ভেরোনিকা নর্ডলান্ড বলেন, কিশোরীটি তার পরিবারের সঙ্গে নিরাপদে সুইডেনে পৌঁছেছে। আর ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইরত কুর্দিস্তান রিজিওনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তারা মেয়েটিকে উদ্ধার করে।

পুলিশ বলছে, মেয়েটি তার মরোক্কান বন্ধু মোক্তার মোহাম্মদ আহমেদের সঙ্গে সুইডেন ছেড়েছিল। ওই ছেলেটি ১৭ বছর বয়সে ২০১৩ সালে একা সুইডেনে এসেছিল। আইএসের জিহাদি হিসেবে লড়াই করার সময় সম্প্রতি ওই ছেলেটির মৃত্যু হয়।

এক সাক্ষাৎকারে মেরিলিন বলে, ২০১৪ সালে ছেলে বন্ধুটির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আইএসের ভিডিও দেখে সে জিহাদি কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে প্ররোচনা পায়। তার ভাষ্য, ‘ছেলেটি যখন আইএসে যোগ দিতে চায়, তখন আমি জানালাম যে কোনো সমস্যা নেই।’ মেরিলিনের দাবি, সে তখনো জানত না আইএস কী। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সে ২০১৫ সালের মে মাসে দেশত্যাগ করে। ট্রেনে-বাসে করে ইউরোপ পার হয়ে তুরস্ক দিয়ে সিরিয়ায় যায় তারা। পরে সেখান থেকে তারা মসুল যায়।

আইএসের জিম্মায় থাকার সময়গুলো সম্পর্কে মেরিলিন বলল, ‘ওই বাড়িতে কিছু ছিল না। না বিদ্যুৎ, না পানি। কিচ্ছু না। সুইডেনে আমি যেভাবে বেড়ে উঠেছি, আমাদের সবকিছু ছিল। এখানে কিছুই নেই। কোনো অর্থও ছিল না। জীবনটা ছিল খুবই কঠিন।’ ওই কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে সে বুঝেছে, কী ভুল সে করেছে। তখনই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে অবশেষে নিজের দেশে ফিরতে পেরেছে।