13-03-2018 05:39:26 PM

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সিঙ্গাপুরের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

newsImg

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সিঙ্গাপুরের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বোঝানোর জন্য তিনি সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সুয়েন লুংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আসিয়ানের সভাপতি রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গতকাল সোমবার সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ইস্তানায় দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক এ বৈঠক হয়। এর আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। এ সময় রোহিঙ্গা সংকটসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে তারা কথা বলেন। খবর বাসস, ইউএনবি ও বিডিনিউজের।

প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ইস্তানায় দুই দেশের সরকারপ্রধানের বৈঠকের পরে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা এবং সিঙ্গাপুরে জাহাজ ভেড়ার পর নাবিকদের ওঠানামা নিয়ে সমস্যা আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ওপর বোঝা। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আলাপ-আলোচনা করে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তবে নানা কারণে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে সিঙ্গাপুরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। 

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব।

আলোচনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দু'জনের আলোচনায় একটা জিনিস পরিস্কার হয়েছে যে, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের সম্পর্কের মূল ভিত্তি অর্থনৈতিক সহযোগিতা। বাংলাদেশে খাদ্য ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া জ্বালানি খাত নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সমুদ্রগামী জাহাজের বাংলাদেশের নাবিকরা সিঙ্গাপুরে যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তা সমাধানের জন্য অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। বৈঠকে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সিঙ্গাপুরকে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী অনেক আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব ও প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংকে এ বছরই বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। 

'সহযোগিতা বাড়লে দুই দেশেরই লাভ' :সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে দুপুরে ইস্তানায় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের সম্মানে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং এই মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বিপুল তরুণ জনশক্তি এবং সিঙ্গাপুরের পুঁজি কাজে লাগিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে পারলে দুই দেশই লাভবান হতে পারে। 

এ সময় লি সিয়েন লুং বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফর দু'দেশের মধ্যে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক জোরদার করার একটি চমৎকার সুযোগ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিকাশমান বাজারে জ্বালানি এবং বন্দর খাতে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা থাকায় সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এবং আসিয়ান ও অন্যান্য প্রতিবেশীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সুন্দর অবস্থানে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

পিপিপি ও বিমান চলাচলে সমঝোতা চুক্তি :পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এবং বিমান চলাচলে সহযোগিতার বিষয়ে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ। গতকাল দুপুরে ইস্তানায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের উপস্থিতিতে এসব সমঝোতা স্মারক সই হয়। সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব এসএম গোলাম ফারুক এবং সিঙ্গাপুরের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি লোহ নাই সেং।

সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বের প্রকল্পে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে অপর সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশের পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আফসর এইচ উদ্দিন এবং সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ত্যান সুন কিম।

প্রধানমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর বন্দর পরিদর্শন :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দুপুরে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বাণিজ্য বন্দর পোর্ট অব সিঙ্গাপুর পরিদর্শন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, এ সময় বন্দরের কর্মকর্তারা তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করেন। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরকে স্বয়ংক্রিয় করার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। জাহাজ চলাচল মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার দুপুরে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েনের আমন্ত্রণে চার দিনের সরকারি সফরে সিঙ্গাপুরে যান। গতকাল সকালে তিনি সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট ভবন ইস্তানায় পৌঁছলে লি সিয়েন লুং সেখানে তাকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে ইস্তানায় লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই সিঙ্গাপুরের সশস্ত্র বাহিনীর একটি বিশেষ দল তাকে অভিবাদন জানায়।