15-02-2018 10:56:38 AM
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর সার্বিক পরিস্থিতি সরকারের অনুকূলেই রয়েছে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ বিশ্বাসের পেছনে তাদের যুক্তি হচ্ছে, বিএনপির আহ্বান সত্ত্বেও মানুষ খালেদা জিয়ার জেল ইস্যুতে মাঠে নামেনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, হাওয়া ভবনের দুর্নীতির বিষয়টি এত দিন মানুষের মুখে মুখে ছিল। কানাডার একটি আদালত সন্ত্রাসের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততার উল্লেখ করার পর এবার দেশের আদালতে বিএনপি নেত্রীর দুর্নীতি করার বিষয়টি প্রমাণিত হলো। আর এর ফলে আগামী নির্বাচনে বিএনপিপ্রধানের এই কেলেঙ্কারির বিষয়টি ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ পেয়ে গেল আওয়ামী লীগ।
ওই নেতাদের মতে, দুর্নীতির দায়ে জেলে যাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বাড়ছে—বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন দাবি ভিত্তিহীন। তাঁদের কথা, দুর্নীতি করে কখনো কারো জনপ্রিয়তা বাড়ে না, বাড়বেও না। খালেদা জিয়া কোনো রাজনৈতিক কারণে জেলে যাননি। তিনি জেলে গেছেন বিশুদ্ধ একটি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে। ১০ বছর ধরে ওই বিচার কার্যক্রম চলে এসেছে। ফলে নৈতিকভাবে স্খলিত একজন মানুষের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ার কোনো কারণ নেই।
খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর গত রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর মাধ্যমে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমেনি বরং বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হওয়ায় খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভীও একই দাবি করেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে জেলে গেছেন—আগামী নির্বাচনে বিষয়টি ইস্যু হিসেবে আসবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গতকাল বুধবার বলেন, ‘অবশ্যই। আমরা সব সময় হাওয়া ভবনের দুর্নীতির কথা বলে এসেছি। এবার আদালতে খালেদা জিয়ার দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় আসবে।’ জেলে গিয়ে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বেড়েছে—বিএনপি নেতাদের এমন দাবি প্রসঙ্গে নাসিম বলেন, ‘এটা জরিপ করার কোনো সুযোগ আপাতত
নেই। আগামী নির্বাচনেই এর প্রমাণ হবে।’
খালেদা জিয়ার সাজা-পরবর্তী পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার ফলে যদি তাদের জনপ্রিয়তা বেড়ে থাকে তবে তো তাদের জন্য ভালো লক্ষণ। এখন নিশ্চয়ই তারা নির্বাচনে যাবে। সময়ই সব বলবে। আগামী ভোটের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে তাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছিল কি না।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সাজা হওয়া, জেলে যাওয়ার সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মামলাটি হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল বিএনপিরই ছায়া সরকার। আমাদের সরকার খালেদা জিয়া যেন তাঁর মামলাগুলো ঠিকমতো লড়তে পারেন সে জন্য যা যা করণীয় করেছে। ফলে খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ায় সরকারের কোনো দায় নেই। আর বিএনপির নেতারা দাবি করছেন, খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর মধ্য দিয়ে বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাহলে তো এমন রায়ে তাদের খুশি হওয়া উচিত। আমি কখনো কোথাও শুনিনি দুর্নীতি করলে কারো জনপ্রিয়তা বাড়ে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া কোনো রাজনৈতিক কারণে জেলখানায় যাননি। তিনি আর্থিক অনিয়ম করে একটি বিশুদ্ধ দুর্নীতির মামলায় সাজা খাটছেন। তিনি নৈতিক স্খলনের কারণে জেলে গেছেন। ফলে এর মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া বা বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়ার কোনো কারণ নেই। যারা দুর্নীতি পছন্দ করে না, যারা দেশকে এগিয়ে নিতে চায় তারা নিশ্চয়ই খালেদা জিয়ার পক্ষে সমর্থন দেবে না।’ সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি আরো বলেন, ‘বিএনপির অতীত নাশকতার ইতিহাসের কারণে খালেদার রায়কে কেন্দ্র করে কিছুটা আশঙ্কার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি। বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন না থাকায় তারা কোনো আন্দোলন করতে পারেনি, আর পারবেও না।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন গতকাল বুধবার বলেন, খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এটা অবশ্যই নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় আসবে। খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বাড়ার দাবি প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি নেতারা যা দাবি করছেন তা ভিত্তিহীন, বরাবরের মিথ্যাচারের অংশ। একটি সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির মামলার দীর্ঘ দশ বছর বিচার কার্যক্রম শেষে আদালতের রায়ে কেউ দুর্নীতিবাজ প্রমাণিত হয়ে কারাগারে গেলে যদি জনপ্রিয়তা বাড়ে তাহলে তো দেশে সৎ মানুষের রাজনীতি করার দরকার নেই। জনগণ যদি দুর্নীতিকে সমর্থন করে তাহলে রাজনীতি ও সমাজ থেকে সততা নিঃশেষ হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, জনগণ কখনোই দুর্নীতিকে সমর্থন করতে পারে না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তাঁর (খালেদা জিয়া) প্রতি যদি মানুষের সহানুভূতি থাকত তাহলে তো মানুষ রাস্তায় নামত। বিএনপির আহ্বান সত্ত্বেও একটি মানুষও তো প্রতিবাদ করেনি। তার অর্থ বাংলাদেশের মানুষ অপরাধের পক্ষে নয়। এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে।’ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণায় দুর্নীতির এ ইস্যুটি মুখ্য হয়ে উঠবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ কখনোই দুর্নীতিবাজদের সমর্থন করে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জেল খাটা বিএনপির কোনো উপকারে আসবে না। বরং আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়ার দুর্নীতির বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করবে আওয়ামী লীগ। খালেদা জিয়া এর আগে কালো টাকা সাদা করেছেন। এবার এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করে সাজা পেলেন। এটা নিশ্চয়ই এ দেশের মানুষ ভালোভাবে নেবে না।’