বিরোদী দল

10-02-2018 01:11:37 PM

বিএনপির বিক্ষোভে পুলিশের বাধা

newsImg

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে ‘শান্তিপূর্ণ’ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে প্রতিবাদ মিছিল সমাবেশ শুরু করে দলটি। তবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোথাও কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। বেশ কিছু স্থানে পুলিশের বাধায় কর্মসূচি পণ্ড হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির প্রায় ১৮০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

খালেদা জিয়ার সাজার প্রতিবাদে গতকালের মতো আজ শনিবারও সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি রয়েছে বিএনপির। তবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেক নেতাকর্মী কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে না বলে জানা গেছে। গতকালও ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ জেলায় মিছিল সমাবেশে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের দেখা যায়নি।

গতকাল রাজধানীতে জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অংশ নেন। মিছিলটি নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় মিছিলে অংশ নেওয়া অনেকে নেতাকর্মী ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন গলিতে ঢুকে যায়।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রংপুরসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ‘শান্তিপূর্ণ’ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। অনেক জেলা-উপজেলা শহরে পুলিশের বাধায় কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে—

রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল : দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার রায়ের প্রতিবাদে রাজধানীতে মিছিল করেছে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। গতকাল জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়ে মিছিলে যোগ দেন।

মিছিলটি দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে ফকিরাপুল দিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় মিছিলকারীদের অনেকেই বিভিন্ন গলিতে ঢুকে যায়। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই আবারও তারা জড়ো হয়ে নতুন করে মিছিল শুরু করে। মিছিলে ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, মুক্তি চাই’, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন সারা দেশে’ শীষক স্লোগান দেয় নেতাকর্মীরা।

বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এই প্রতিবাদের মিছিল বেশ বড় আকার পায়। পুলিশ সদস্যদের পেছনে রেখে কয়েক শ বিএনপিকর্মীর ওই মিছিল নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে এগোতে থাকে। একপর্যায়ে সামনে থেকে পুলিশের আরেকটি দল এগিয়ে এলে সংঘাত এড়াতে মিছিলটি স্কাউট মার্কেটের গলির মধ্যে ঢুকে পড়ে। এ সময় পছনের পুলিশ সদস্যরা বাঁশি বাজাতে বাজাতে লাঠি হাতে তেড়ে যায়। ওই গলি থেকে কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে কতজনকে আটক করা হয়েছে, তা জানাতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী নোমান। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে বলে দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

ঢাকার বাইরে বিক্ষোভ সমাবেশ : চট্টগ্রামে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণেই সীমাবদ্ধ ছিল বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি। তবে সমাবেশে নগর ও উত্তর জেলার বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে নগরীর কাজীর দেউড়িস্থ বিএনপি কার্যালয় মাঠে এই কর্মসূচি পালিত হয়। বরিশালে নামমাত্র বিক্ষোভ হয়েছে। নগরের টাউন হলস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। খুলনায় নগরীর কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। রংপুরে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে মাঠে নামতে পারেনি বিএনপি। সিলেটে কোনো ধরনের গোলযোগ ছাড়াই কড়া পুলিশ প্রহরায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

দিনাজপুরে শহরের বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড মিছিল করেছে বিএনপি। ময়মনসিংহের ভালুকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপি। শরীয়তপুরে পৃথক পৃথক বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেছে জেলা বিএনপি ও যুবদল। নারায়ণগঞ্জে জেলা ও মহানগর যুবদল মিছিল করেছে। রংপুরের বদরগঞ্জে পুলিশ বাধা দিয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। কিশোরগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিলের চেষ্টা করেছে জেলা বিএনপি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশি বাধার মুখে কর্মসূচি পালন করেছে জেলা বিএনপি। নরসিংদী, লালমনিরহাট, নাটোর, মুন্সীগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

ফরিদপুরে পুলিশের বাধায় বিক্ষোভ মিছিল করতে পারেনি বিএনপি। নওগাঁ জেলা বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দিয়েছে। হবিগঞ্জে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাধার মুখে মিছিল হয়নি। গাইবান্ধায় পুলিশের বাধায় মাঠে নামেনি জেলা বিএনপি। নোয়াখালীতে কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি।

সংঘর্ষের ঘটনায় ১৫ মামলা : গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার পর সংঘর্ষের ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে। সিলেটে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ২০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক অনুপ চৌধুরী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। খুলনায় যুব-ছাত্রদলের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। সাতক্ষীরায় বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। হবিগঞ্জে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীর নামে একটি মামলা হয়েছে। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় পাঁচ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ।

বিভিন্ন স্থানে আটক গ্রেপ্তার ১৮০ : সিলেটে গত বৃহস্পতিবার ভোররাতে অভিযান চালিয়ে ৩৫ বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। গতকাল বিএনপির ১২ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। দিনাজপুরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ভালুকায় গতকাল মিছিল থেকে চারজনকে আটক করা হয়। রাজবাড়ীতে অভিযান চালিয়ে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শরীয়তপুরে যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল মাদবরকে আটক করে পুলিশ। ময়মনসিংহে জেলা বিএনপির (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দকে আটক করা হয়েছে। ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মো. এনামুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বাগেরহাটে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের পাঁচ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জে মিছিল  থেকে চারজনকে আটক করেছে। রংপুরের বদরগঞ্জে দুজন ও কিশোরগঞ্জে ২১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত বিএনপির ২৪ ও জামায়াতের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।