রাজধানী

31-01-2018 01:16:57 PM

চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছেন মাহমুদউলস্নাহ

newsImg

বছরখানেক আগেও মনে হচ্ছিল টেস্ট দলে তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে। শ্রীলংকা সফরে নিজেদের শততম টেস্টের স্কোয়াড থেকে মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ ছিটকে পড়ায় তার টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষও দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। সেই মাহমুদউলস্নাহই এখন দলে মহাগুরম্নত্বপূর্ণ একজন, টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান চোট নিয়ে ছিটকে যাওয়ায় আজ চট্টগ্রামে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তিনিই নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশকে। সব মিলে নতুন এক চ্যালেঞ্জের সামনে মাহমুদউলস্নাহ। সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এই তারকাও জানিয়ে দিলেন, চ্যালেঞ্জটা নিতে তিনি তৈরি।
সাধনা থাকলে সময় যে সব ফিরিয়ে দেয় তারই বড় উদাহরণ এখন মাহমুদউলস্নাহ। সাকিবের চোট তাকে সুযোগ করে দিচ্ছে নতুন চ্যালেঞ্জ নেয়ার। মঙ্গলবার দলের অনুশীলনের পর মাহমুদউলস্নাহর সংবাদ সম্মেলনে শুরম্নতেই উঠে এল নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের বিষয়টি। শুধু নেতৃত্বই নয়, মাঠের খেলায় দলকে সঠিক পথে এগিয়ে নেয়াও চ্যালেঞ্জ তার সামনে। এ প্রসেঙ্গ মাহমুদউলস্নাহ বললেন, 'টেস্ট সব সময়ই চ্যালেঞ্জ। সেশন বাই সেশন, দিনের পর দিন ভালো খেলতে হয়। ক্রিকেটারদের জীবনে চ্যালেঞ্জ ইতিবাচক। এটা নিয়ে ভাবার কিছু নেই। দল ভালো খেললে অধিনায়কত্বও ভালো হবে।'
শ্রীলংকার বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। সেই শ্রীলংকা, কদিন আগে যারা ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে চরম হতাশা উপহার দিয়েছে। সেই শ্রীলংকা, যাদের শিবিরে এখন টাইগারদের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরম্নসিংহে। সেই হাথুরম্নসিংহে, যার ইচ্ছাতেই টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হতে বসেছিল মাহমুদউলস্নাহর। তার সামনে চ্যালেঞ্জটা তাই একটু বড়ই। চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছেনও তিনি, 'ক্রিকেটারদের জীবনে চ্যালেঞ্জ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এটা ভালো একটা সুযোগ। সিরিজটা আমাদের জন্য খুব গুরম্নত্বপূর্ণ। যেভাবে আমরা ওয়ানডে সিরিজটা শুরম্ন করেছিলাম (ত্রিদেশীয় সিরিজ) সেই শুরম্নটা ধরে রাখা অবশ্যই গুরম্নত্বপূর্ণ।'
প্রতিটি ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে জাতীয় পর্যায়ের অধিনায়কত্ব করা। মাহমুদউলস্নাহার সামনে সেই সময় এসেছে। দলগতভাবে ভালো পারফর্ম করাটাই অধিনায়কের শক্তি বলে মনে করেন তিনি। টাইগারদের দশম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হচ্ছে মাহমুদউলস্নাহর। তাতে গর্ববোধ করলেও যেভাবে অধিনায়ক হয়েছেন সেটা অন্য সবার মতো তার কাছেও অপ্রত্যাশিত। দলের সেরা পারফর্মারকে (সাকিব) না পাওয়া দলের জন্য বিপর্যয় বলেও উলেস্নখ করেন অধিনায়ক।
নেতৃত্বের অভিষেক নিয়ে রোমাঞ্চ থাকলেও সাকিবের অনুপস্থিতি ভাবাচ্ছে মাহমুদউলস্নাহকে, 'যেভাবে (অধিনায়কত্ব) পেয়েছি সেভাবে পেতে চাইনি। কারণ সাকিব আমাদের জন্য খুব গুরম্নত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। ওকে হারানো দলের জন্য বড় একটা বিপর্যয় বলতে হবে। ওর মতো টপ ক্লাস ক্রিকেটারকে মিস করা দলের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর একটা জিনিস। তারপরও দিন শেষে সবাই বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করছি। বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করাও একটা সুযোগ। দলের জন্য ভালো কিছু করা, সেদিক থেকে আমরা সবাই বেশ রোমাঞ্চিত।'
বিপিএলে খুলনা টাইটান্সের নেতৃত্ব দিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন মাহমুদউলস্নাহ। জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব এবারই প্রথম তার জন্য। তবে দলের দায়িত্বভার সামলানোর জন্য তিনি যে যথেষ্টই যোগ্য, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সাকিবের পরিবর্তে তার কাঁধেই টিম বাংলাদেশের দায়িত্ব। মাঠের সঠিক সিদ্ধান্ত্ম নিতে প্রয়োজন বিচক্ষণতা। নেতৃত্বগুণে সফল হতে প্রত্যেক অধিনায়কের থাকে নিজস্ব স্টাইল কিংবা নিজস্ব সকীয়তা। মাহমুদউলস্নাহরও রয়েছে নিজস্ব স্টাইল। 
সদা হাস্যোজ্জ্বল, শান্ত্ম, মিষ্টভাষী, বিনয়ী, দায়িত্ব নিয়ে শতভাগ সিরিয়াস, প্রয়োজনে আবার কঠোরও; মাহমুদউলস্নাহর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলে যায় সবগুলো বিশেষণই। ব্যক্তিত্বের ভালো জিনিসগুলোর মধ্যে কোনটিকে অস্ত্র বানাবেন মাঠের নেতৃত্বে? এমন প্রশ্নে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর জোর দেয়ার কথাই বললেন তিনি, 'অধিনায়কত্বের বড় একটা কাজ হচ্ছে মাঠের ভেতরে অনেক সিদ্ধান্ত্ম নিতে হয়। আপনি যদি নিজে ঠা-া মেজাজে না থাকেন, তাহলে সিদ্ধান্ত্মগুলো এদিক-সেদিক হয়ে যেতে পারে। আমি যখন ঘরোয়া ক্রিকেটেও অধিনায়কত্ব করি, তখন যতটুকু পারি ঠান্ডা মেজাজে থাকার। আমার মনে হয় এই জিনিসটা সিদ্ধান্ত্ম নিতে অনেক সাহায্য করে।'
জাতীয় দলে একজন ভালো ও দায়িত্ববান সতীর্থ হিসেবেই সকলে মাহমুদউলস্নাহকে দেখে এসেছেন। এবার ভূমিকা বদলেছে। এখন দলের নেতা তিনি। ভূমিকা অনুযায়ী দরকার হলে ভিন্ন এক মাহমুদউলস্নাহহকেও দেখা যাবে। দেশের প্রয়োজনে কঠোর হতেও দ্বিধা করবেন না বলে জানালেন তিনি, 'যখন আমার কাজে থাকব, তখন কোনো কিছুতে ছাড় দেব না। যেভাবেই হোক দলকে যতটুকু সহায়তা করার, সেটা একটু কঠোর হয়ে হোক বা ভালোভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েই হোক; সবদিক থেকেই চেষ্টা করব। আসল কথা হচ্ছে এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট। দলকে ভালো কিছু দিতে হবে। এটাই আমাদের দায়িত্ব, এটাই আমাদের কর্তব্য।'
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হওয়া মাহমুদউলস্নাহ এর আগে ৩৫টি টেস্ট খেলেছেন। একটি সেঞ্চুরি ও ১৫টি হাফসেঞ্চুরিতে তার মোট সংগ্রহ ১,৯৩১ রান, উইকেটও নিয়েছেন ৩৯টি।