31-01-2018 11:54:39 AM
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের 'নির্বাচনী প্রচার' শুরম্ন হয়েছে সিলেট থেকে।
ভোটের বছরের শুরম্নতে সিলেটে গিয়ে তিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করেন এবং জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মঙ্গলবার বিকালের জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের নির্বাচনী প্রচার চালানো এখান থেকেই শুরম্ন।'
নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, 'ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনেও আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।'
নৌকা মার্কায় ভোট দিতে জনসভায় আগত সবাইকে হাত তুলে ওয়াদা করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। 'আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন, নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।'
মাঠভর্তি মানুষ হাত তুলে শেখ হাসিনার কথায় সায় দেন।
আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসভায় সরকারি ২০টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ১৮টির ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফরে গিয়ে জনসভায় শেখ হাসিনার ভোট চাওয়ার সমালোচনা করে আসছে বিএনপি। তারা বলছে, এভাবে রাষ্ট্রীয় খরচে দলের পক্ষে প্রচার চালানো আইন-বিরম্নদ্ধ।
নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'অতীতে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আন্ত্মর্জাতিকভাবে দেশের সুনাম হয়েছে।'
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেটে শেখ হাসিনার তৃতীয় সফর এটি। এ উপলক্ষে পুরো শহর সাজানো হয় ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড আর তোরণে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার বক্তব্যের শুরম্নতেই সিলেটের প্রয়াত রাজনীতিক আবদুস সামাদ আজাদ, হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, দেওয়ান ফরিদ গাজী ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে স্মরণ করেন।
২০০৫ সালের শুরম্নতে হবিগঞ্জে নিজ নির্বাচনী এলাকায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া।
২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা এবং বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের ওপর গ্রেনেড হামলার কথাও উলেস্নখ করেন শেখ হাসিনা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়াসহ নাশকতামূলক কর্মকা-ের কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, 'বিএনপি ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না।'
'পাঁচ বছরে বিএনপি হাজার হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে। তিন হাজার মানুষ তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। পোড়া মানুষের লাশ দেখে খালেদা জিয়া উৎফুলস্ন হয়েছে।'
আওয়ামী লীগ আমলের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানে উন্নয়ন। আর বিএনপি আসা মানেই ধ্বংস।'
সেনানিবাস প্রতিষ্ঠাসহ সিলেটের উন্নয়নে নেয়া নানা পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে দেশের এত উন্নয়ন হতো না। লুটেরা আসলে লুটেপুটে খেত।'
সকালে সিলেটে পৌঁছে সরাসরি শহরের দরগাহ মহলস্নায় যান শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারত ও মোনাজাত করেন।
শাহজালালের মাজার থেকে শেখ হাসিনা যান শহরের প্রান্ত্মে খাদিমনগরে, হজরত শাহপরাণের মাজারে। এরপর সুরমা পারের কুশিঘাট এলাকায় গিয়ে হজরত গাজী বুরহান উদ্দিনের মাজার জিয়ারত করেন তিনি।
তিন মাজার জিয়ারত শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে নামাজ ও মধ্যাহ্ন বিরতির পর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলে পৌঁছেন।
জনসভার শুরম্নতেই ২০টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ১৮টির ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
হজরত গাজী বুরহান উদ্দিনের মাজার উন্নয়ন, নারীদের জন্য ইবাদতখানা নির্মাণ, মাজারের সৌন্দর্যবর্ধন এবং মাজারের যাতায়াতের প্রধান রাস্ত্মা প্রশস্ত্মকরণ ও উন্নয়ন, সিলেট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, পিরোজপুরে সার পরীক্ষাগার ও গবেষণাগার ভবন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা অফিস, সিলেট বিভাগীয় ও জেলা এনএসআই কার্যালয় ভবন, সিলেট মুক্তিযোদ্ধা কমপেস্নক্স ভবন এবং জকিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপেস্নক্স ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন হজরত শাহজালালের মাজারে নারীদের জন্য ইবাদতখানা ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম, শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেসা হল নির্মাণ, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ ভবন ও হলরম্নম নির্মাণ, ওসমানী মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রীদের দুটি হোস্টেল ভবন নির্মাণ, ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতাল নির্মাণ, ওসমানী মেডিকেলের নার্সিং হোস্টেল ভবন নির্মাণ, সিলেট পুলিশ লাইন্সে ব্যারাক ও অস্ত্রাগার নির্মাণ, কোতোয়ালি মডেল থানা কম্পাউন্ডে ডরমেটরি ভবন নির্মাণ, তামাবিল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ভবন, সিলেটের লালাবাজারে রেঞ্জ রিজার্ভ পুলিশ লাইন্স নির্মাণ এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণসহ বেশ কিছু প্রকল্পের।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, শেখ হেলাল, দেলোয়ার হোসেন, নওফেল চৌধুরী, বিপস্নব বড়ুয়া, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।