21-01-2018 12:28:00 PM
বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য রাখাইনে ‘‘শরণার্থী শিবির’’ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে বলে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির আলোকে আগামী মঙ্গলবার প্রথম দফায় একদল রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরবে।
রোহিঙ্গাদের গ্রহণের প্রস্তুতির জন্য রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইউ নি পু নেতৃত্বে মিয়ানমার সরকারের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার নাখুয়ার হ্লা পোয়ে কুংয়ে এবং তাউয়ং পিও লেতভে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। সেখানে থাকার ঘর, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুরোপুরি প্রস্তুত করতে শেষ মুহূর্তের কাজ সম্পন্ন করতে তাগাদা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রতিনিধি দলে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তর বিষয়ক উপমন্ত্রী উ খিন মং তিন এবং সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী উ সোয়ে অংসহ অন্য কর্মকর্তারা ছিলেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থী
গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার বলছে, মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ অনুযায়ী সপ্তাহে পাঁচ দিন রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করবে মিয়ানমার। যেদিন যাদের পাঠানো হবে, তাদের তালিকা আগেই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে দেবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে স্থল পথ দিয়ে যেসব রোহিঙ্গা যাবে তাদের প্রাথমিকভাবে তাউয়ং পিও লেতভে সেন্টারে রাখা হবে। আর নদীপথে যারা যাবে তাদের নেওয়া হবে নাখুয়ার হ্লা পোয়ে কুংয়ে।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা একটি ট্রানজিট ক্যাম্প করবেন, যেখানে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার থাকার ব্যবস্থা হবে। নিজের এলাকা বা তার কাছাকাছি জায়গায় যাওয়ার আগে এই ক্যাম্পে থাকবেন বাংলাদেশফেরত রোহিঙ্গারা।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া হতে হবে স্বেচ্ছায় এবং তাদেরকে অবশ্যই তাদের আদি বাড়িতে ফিরে যেতে দিতে হবে। তাদেরকে কোনো আশ্রয়শিবিরে রাখা যাবে না। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের আশ্রয় শিবির থেকে এসব মানুষকে (রোহিঙ্গা) মিয়ানমারের শিবিরে ফেরত পাঠানো হলে তা হবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এ মুহূর্তে প্রত্যাবাসন শুরুর বিরোধিতা করেছে। তাদের ভাষায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মনে এখনও ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের দগদগে ক্ষত। এই অবস্থায় তাদের ফেরত পাঠানো সময়োচিত হবে না।
বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ঢল
এছাড়া, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। শুক্রবার কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শত শত রোহিঙ্গা মুসলমান জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে মিয়ানমারে তাদের ফেরত না পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।
গত বছর ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনাবাহিনী দমন অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের স্বভূমিতে ফেরতে গত ১৬ জানুয়ারি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে যে চুক্তি হয়, তাতে চলতি সপ্তাহে শুরু করে দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।