20-01-2018 02:56:34 PM
সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠেকাতে শুক্রবার রাতভর নাটকীয়তা চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কংগ্রেস সদস্যদের মাঝে। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার পরিচালনার ব্যয় সংক্রান্ত একটি বিলে বিরোধী দল ডেমোক্রেট সদস্যদের সমর্থন লাভের রাত-ভর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে সিনেটে সংখ্যালঘু রিপাবলিকান শিবিরের। এর ফলে জরুরি কিছু সেবা ছাড়া মার্কিন সরকারের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
সরকারি এই অচলাবস্থায় যা ঘটছে যুক্তরাষ্ট্রে?
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কার্যক্রম পরিচালনার ব্যয় আটকে যাওয়ায় এখন সরকারের যে কম প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন; তারা সাময়িক কর্মহীন হবেন অথবা অবৈতনিক ছুটিতে যেতে বাধ্য হবেন। তবে অপরিহার্য যেসব খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, বিশেষ করে জননিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা খাতে তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
শুক্রবার মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেছেন, অবৈতনিক ছুটিতে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তারাও একই ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেন।
২০১৩ সালের অক্টোবরে ওবামার আমলে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ ছিল প্রায় দুই সপ্তাহ। এই সময়ে প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈতনিক ছুটিতে যান। তবে এবারে ঠিক কতসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী একই পরিণতি বরণ করতে পারেন; সেব্যাপারে এখনো সরকারি কোনো নির্দেশনা আসেনি।
কী হবে এখন?
সামরিক বাহিনী
শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ বলছে, সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আফগানিস্তান যুদ্ধে অথবা সিরিয়া এবং ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক বাহিনীর যে অভিযান চলছে; তাতে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না। সক্রিয় ১৩ লাখ সামরিক কর্মকর্তা তাদের স্বাভাব্কি দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বেসামরিক কর্মকর্তারা অবৈতনিক ছুটিতে থাকবেন। একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ২০১৩ সালেও।
বিচার বিভাগ
দেশটির বিচার বিভাগের জরুরি অনেক কর্মী আছেন। সরকার বন্ধ পরবর্তী পরিকল্পনায় বিচার বিভাগের ১ লাখ ১৫ হাজার কর্মীর মধ্যে ৯৫ হাজার জন তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।
আর্থিক নিরীক্ষণ
আর্থিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ফি সংগ্রহের মাধ্যমে পরিচালিত হয় দেশটির স্টক মার্কেট নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন; তবে সংস্থাটির বাজেট নির্ধারণ করা হয় কংগ্রেসে। সরকার বন্ধ হয়ে গেলেও সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম সাময়িক চালিয়ে নিতে পারবে বলে অতীতে জানিয়েছিল। তবে বাজেট অনুমোদনে কংগ্রেস ব্যর্থ হওয়ায় এ সংস্থাটিরও কিছু সদস্যকে অবৈতনিক ছুটিতে যেতে হবে।
অন্যদিকে কমোডিটি ফিউচার ট্রেডিং কমিশনের প্রায় ৯৫ ভাগ সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে ছুটিতে যেতে হবে। তবে জরুরি মুহূর্তে সংস্থাটি তাদের কর্মীদের দায়িত্বে নিয়োজিত করতে পারবে।
হোয়াইট হাউস
শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউসের এক হাজার ৭১৫ কর্মীর মধ্যে এক হাজারের বেশি জনকে ছুটিতে যেতে হবে। তবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের জন্য প্রেসিডেন্টকে পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরে প্রয়োজনীয় কর্মী সরবরাহ করা হবে বলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জাতীয় উদ্যান
রেঞ্জার্স ও নিরাপত্তা কর্মীদের দায়িত্বে রেখে দেশটির জাতীয় উদ্যান চালু রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। অলাভজনক জাতীয় উদ্যান সংরক্ষণ সংস্থা বলছে, ২০১৩ সালে পার্কটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই সময় দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে গিয়েছিল প্রায় সাড়ে ৭ লাখ। এদিকে, ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস (এনপিএস) বলছে, উদ্যান বন্ধ করে দেয়া হলে এর আশপাশের এলাকা ও স্মিথসোনিয়ান জাদুঘর ৫০০ মিলিয়ন ডলার আয় হারাবে।
ওয়াশিংটনের পর্যটন স্থাপনা
২০১৩ সালে দেশটির জনপ্রিয় পর্যটন স্থাপনা স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরসহ লিঙ্কন মেমোরিয়াল, কংগ্রেস লাইব্রেরি ও জাতীয় আর্কাইভ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তবে এবারে সেখানকার কর্মকর্তারা বরছেন, উন্মুক্ত স্মৃতিসৌধগুলোতে দর্শনার্থীদের প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা তৈরির পরিকল্পনা নেই ট্রাম্প প্রশাসনের। সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও প্রথম সপ্তাহে জাদুঘর খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছে স্মিথসোনিয়ান কর্তৃপক্ষ।
কর বিভাগ
লিবারেল সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেস বলছে, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগ ২০১৩ সালে প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছুটিতে পাঠিয়েছিল। ফলে সেই সময় প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ট্যাক্স আদায়ের কার্যক্রম বিলম্বিত হয়।
এছাড়াও দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য খাতের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসবে। সরকার পরিচালনার ব্যয় আটকে যাওয়ায় প্রত্যেক খাতের অধিকাংশ কর্মীই এখন ছুটিতে থাকবেন। অবৈতনিক ছুটিতে থাকলেও ট্রাম্প প্রশাসন ওবামা আমলের ন্যায় বিকল্প উপায়ে কর্মীদের বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে পারেন। তবে যে কর্মীরা ছুটিতে যেতে বাধ্য হবেন তারা আগামী ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বেতন পাবেন।