বিরোদী দল

16-01-2018 11:02:14 AM

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে না পারায় অসন্তোষ শরিকদের

newsImg

বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন ১৪ দলের শরিকদলগুলোর নেতারা। তাঁরা ব্যাংকগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয় জানিয়ে বিপর্যয় রোধে সরকারকে মনোযোগ দিতে পরামর্শ দিয়েছেন। আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি হাতে নিতে ১৪ দলের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন শরিক দলের এক নেতা। গতকাল সোমবার বিকেলে ১৪ দলের এক বৈঠকে এমন মত জানান জোটটির শরিক দলগুলোর কয়েকজন নেতা। ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা  জানান, বৈঠকে মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে ভাষণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়। তবে জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা মূল আলোচ্য বিষয়ের বাইরেও নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। ব্যাংকিং খাতের সমস্যা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম ও বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ খালেদ বক্তব্য দেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে আমরা পুরোপুরি সমর্থন করছি। তবে আমরা যেন আত্মতৃপ্তিতে না ভুগি। ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সরকারের দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনায়ও দুর্বলতা রয়েছে। এগুলোর প্রতি সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘বিএনপি এখন তাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের আস্থাশীল হতে চাইছে। এর ওপর আমাদের ব্যাংকগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। ফলে সরকারকে এখনই এ খাতে মনোযোগ দিতে হবে।’

শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘পেঁয়াজ ও চালের দাম কিছুতেই কমছে না। এটা আগামী দিনে ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে। ১৪ দলের উচিত এর বিরুদ্ধে কর্মসূচি গ্রহণ করা।’

বৈঠকের সূত্রগুলো জানায়, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরতে দেশব্যাপী কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় ১৪ দল। নির্বাচনের আগে ১৪ দলের উদ্যোগে আট বিভাগে আটটি এবং কয়েকটি জেলায় একটি করে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। জনসভার তারিখ চূড়ান্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি জোটের সঙ্গে মতপার্থক্যের বিষয়ে বিগত নির্বাচনের মতোই সরকারকে কঠোর অবস্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ১৪ দলের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। কিন্তু বিএনপি যদি মাঠে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম। এ সময় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির সংলাপের দাবির বিষয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘সংলাপের প্রশ্নই ওঠে না। কিসের সংলাপ তাদের সঙ্গে? আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এ নিয়ে চক্রান্ত হলে তা মোকাবেলার জন্য ১৪ দল প্রস্তুত আছে।’

নাসিম বলেন, ‘জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সব কিছু স্পষ্ট করা হয়েছে। সংসদ ভাঙার যে দাবি বিএনপি করছে, তা সংবিধানবিরোধী।’

১৪ দলের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, বাসদের রেজাউর রশীদ খান প্রমুখ।

ডিএনসিসি উপনির্বাচনে আ. লীগের প্রার্থীকে সমর্থন : ১৪ দলের বৈঠক শেষে জোটটির মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আওয়ামী লীগ যাঁকে মনোনয়ন দেবে ১৪ দল তাঁকেই সমর্থন দেবে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জয়ী করতে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।’

গতকাল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের শেষ দিনে চারজন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। তাঁরা হলেন ওসমান গণি, মোহাম্মদ জামান ভূঁইয়া, শাহীন হক ও আসমা জেরিন ঝুমু। এর আগে প্রথম দুই দিনে ১৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

গতকাল বিকেলে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম আতিক। এ সময় আতিকের সঙ্গে তাঁর বিপুলসংখ্যক সমর্থক উপস্থিত ছিল।

এদিকে আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

একমাত্র নারী মনোনয়নপ্রত্যাশী আসমা জেরিন ঝুমু : গতকাল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের শেষ দিন সাবেক সংসদ সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসমা জেরিন ঝুমু মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য ফরম কিনেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে তিনিই একমাত্র মহিলা মেয়র প্রার্থী।