রাজধানী

09-01-2018 03:20:27 PM

ঢাকার যানজট বাগে আসছেই না

newsImg

রাজধানীর যানজট কমাতে উড়াল সড়ক, উড়াল সেতুসহ বহু ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের পরও তা সম্ভব হয়নি। সড়কে বিশৃঙ্খলা ও শোভাযাত্রা এর কারণ।

নগর ভবনে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) পরিচালনা পরিষদের দশম সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শুক্র ও শনিবার ছাড়া ঢাকার রাস্তায় কোনো সভা-শোভাযাত্রা করতে দেওয়া হবে না। কেউ তা অমান্য করলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিটিসিএকে ‘বড় বড় স্বপ্নের’ প্রকল্প না নিয়ে স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প নিতে পরামর্শ দেন সড়কমন্ত্রী।

নির্বাচনের বছর হওয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বাড়ছে ঢাকা ও এর আশপাশে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে যানজটের বড় কারণ সড়ক দখল করে অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন। মানববন্ধনও হয় সড়কের ওপর। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় সমাবেশ, নগরীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে শোভাযাত্রার মতো কর্মসূচিতে যানজট তীব্র হয়ে ওঠে। আজ মঙ্গলবার থেকে মাদরাসা শিক্ষকদের কর্মসূচি শুরু হচ্ছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। গত শুক্রবার শেষ হয়েছে নন-এমপিও শিক্ষকদের অনশন। তার আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এখন অবস্থা এমন যে স্মার্টফোনে গুগল ম্যাপে যানজটের পরিস্থিতি দেখে অনেকে রাস্তায় বের হয়। গুগল ম্যাপে রাস্তা লাল দেখালেই তীব্র যানজট বোঝায়। যানজটে পড়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাসে যাত্রীদের ফেসবুকে ঢুকে পড়তে হচ্ছে বা গেম খেলতে হচ্ছে যানজটের বিরক্তি থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকায় যানজটের বড় কারণ সড়কের বিভাজক কেটে আড়াআড়ি ইচ্ছামতো চলাচলের পথ তৈরি করে নেওয়া। তাতে ক্রসিং বেড়েছে। যেমন মহাখালী থেকে উত্তরা পার হতে কখনো দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। এ অংশের যানজট নিরসনে বড় চিকিৎসা হলো ইউ লুপ নির্মাণ। বহু চড়াই-উতরাই পার হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ এবং পরে সদ্যঃপ্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের উদ্যোগের পর ইউ লুপ নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হলেও  তাতে অগ্রগতি নেই, বরং আছে বাধা। প্রকল্পের ঠিকাদার এসএম কনস্ট্রাকশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুর রহমান শাহীন জানান, ১১টি ইউ লুপের মধ্যে উত্তরায় র্যাব অফিস ১ ও রাজলক্ষ্মীর পাশে ছাড়া অন্য ৯টি স্থানে কাজ বন্ধ রয়েছে। ইউ লুপ নির্মাণের জন্য স্থান চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘জমি বুঝে পাইনি, কবে তা বুঝে পাব, জানি না।’ জানা গেছে, রেলওয়ে, সওজ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে জমি পাওয়া নিয়ে জটিলতার ফাঁদে রয়েছে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন।

ঢাকায় যানজট নিরসনে কার্যকর বড় প্রকল্পগুলোর একটি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট প্রকল্প বা মেট্রো রেল প্রকল্প। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ২০ কিমি দীর্ঘ এ উড়াল রেলপথ আগামী বছরের আগে শেষ হবে না। এ অবস্থায় সাময়িক ও স্বল্পমেয়াদি কর্মসূচি নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন বিশেষজ্ঞরা। খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রবিবার ডিটিসিএর সভায় বলেছেন, ‘মেট্রো রেল বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। সামনে ইলেকশন, বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই মুহূর্তে কী কী করলে ঢাকা শহরে যানজট সহনীয় মাত্রায় রাখা যাবে সে কাজগুলো আমরা কিছু কিছু করে করতে পারি।’ সড়কমন্ত্রী যানজট নিরসনে উদ্যোগী হলেও বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই।

পরিবহন মালিকদের নেতা খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, উদ্যোগ নিয়ে কথা হয় বেশি। শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয় এমন সমন্বিত উদ্যোগ কম। বাস ও ট্রাক টার্মিনালের জন্য জায়গা দেওয়া হলে পার্কিংয়ের কারণে যে যানজট হয় তা কমে যাবে। 

বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য রাজধানীতে যানজট হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চলমান মেট্রো রেলের কাজ। কিছুদিন আগে মগবাজার-মালিবাগ উড়াল সেতু চালুর পর থেকে নিচের দিকে কিছু স্থানে প্রচণ্ড যানজট তৈরি হচ্ছে। ছোট গাড়ি নামানোর ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা ও যানজটে ট্রিপ অর্ধেকে নেমে যাওয়ায় বাস ও মিনিবাস রাজধানী থেকে কমে যাচ্ছে। তাদের স্থান করে নিচ্ছে উবার, পাঠাওয়ের মতো অ্যাপভিত্তিক পরিবহন। এটিও যানজট বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করা হচ্ছে।