09-01-2018 03:08:35 PM
বিসিবির জাতীয় নির্বাচক কমিটি কত জনের? হুট করে প্রশ্নটা করলে উত্তর দেওয়া কঠিন। কেউ বলবেন চারজনের, কেউ বলতে পারেন তিনজনের, আবার কারও মনে হতে পারে নির্বাচক কমিটি তো আসলে দুজনের! বছর দেড়েক ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক বড় বিভ্রমের নাম এই নির্বাচক কমিটি।
ক্রিকেটে তিনজনের নির্বাচক কমিটিকেই আদর্শ ধরা হয়। লিখিত কোনো নিয়ম না থাকলেও বেশির ভাগ দেশে এটাই প্রচলিত। ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায় পাঁচজনের নির্বাচক কমিটিও। কিন্তু দুজনের নির্বাচক কমিটি সম্ভবত বাংলাদেশেই প্রথম। হ্যাঁ, বর্তমানে বিসিবির জাতীয় নির্বাচক কমিটি চলছে দুই সদস্য দিয়ে। একজন হাবিবুল বাশার। অন্যজন কমিটির প্রধান মিনহাজুল আবেদীন। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী অবশ্য এটাকেই মনে করছেন যথেষ্ট, ‘এতে দল নির্বাচনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের নির্বাচক প্যানেল দুই সদস্যের হলেও নির্বাচক কমিটি তিন সদস্যের। প্যানেলের দুই সদস্যের সঙ্গে কমিটিতে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদও আছেন।’
ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে অবশ্য মাহমুদের ওই ভূমিকাও বদলে গেছে। তাঁর পরিচয়ের তালিকায় সর্বশেষ সংযুক্তি তিনি বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টরও। ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং এরপর শ্রীলঙ্কা সিরিজেও দলের লজিস্টিক ম্যানেজার হিসেবে থাকছেন বিসিবির চাকরি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী গেম ডেভেলপমেন্ট ও আম্পায়ার্স বিভাগের সাবেক ব্যবস্থাপক শরীফ মাহমুদ।
‘প্যানেল’ ও ‘কমিটি’ নাম নিয়ে বাংলাদেশ দলের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সময়ে। দল নির্বাচনে কোচকে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতেই আবির্ভাব দ্বিস্তরবিশিষ্ট অভিনব নির্বাচক ‘দলে’র। শুরুতে প্যানেলে ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ, মিনহাজুল আবেদীন ও হাবিবুল বাশার। এই তিনজনের সঙ্গে নির্বাচক কমিটিতে ছিলেন কোচ হাথুরুসিংহে ও ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ। শেষের জনের ভূমিকা অবশ্য অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কের সঙ্গে নির্বাচকদের সেতুবন্ধ তৈরি করা পর্যন্তই। কিন্তু দল নির্বাচনের এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচকদের কাজের স্বাধীনতা থাকে না বলে ২০১৬ সালের জুনে নির্বাচক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন ফারুক। মাঝে হাবিবুলকে নিয়েও হয়েছিল জটিলতা। তাঁকে একবার মহিলা দলের নির্বাচকের দায়িত্ব দিয়ে পরে ফিরিয়ে আনা হয় জাতীয় দলের নির্বাচক প্যানেলে।
ফারুকের পদত্যাগের পর নির্বাচক প্যানেলের প্রধানের দায়িত্ব পান মিনহাজুল আবেদীন। নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দেন জুনিয়র নির্বাচক প্যানেলে থাকা সাজ্জাদ আহমেদ। তবে মাত্র এক সিরিজ (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৬-এর হোম সিরিজ) দায়িত্ব পালন করেই সাজ্জাদ স্বেচ্ছায় ফিরে যান জুনিয়র নির্বাচক প্যানেলে। এর পর থেকেই বিসিবির জাতীয় দল নির্বাচক প্যানেল হয়ে পড়ে দুই সদস্যের। দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায় শুধু মিনহাজুল আর হাবিবুলকে। সাজ্জাদ চলে যাওয়ার পর থেকে যে জাতীয় দলের নির্বাচক তিনজন থেকে দুজন হয়ে গেছে, সেটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আজ পর্যন্ত দেয়নি বিসিবি।
সাজ্জাদের জুনিয়র নির্বাচক প্যানেলে ফিরে যাওয়ার কারণ, বড়দের চেয়ে ছোটদের দল নির্বাচনেই তাঁর বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করা, ‘আমার মনে হয়, আমি যে ধরনের কাজ করতে পছন্দ করি, তাতে জাতীয় দলের চেয়ে বয়সভিত্তিক দল গঠনেই ভালো ভূমিকা রাখতে পারব। জাতীয় দল নির্বাচনে কাজের পরিসর কম। সে তুলনায় বয়সভিত্তিক পর্যায়ে প্রতিভা অন্বেষণের কাজটা অনেক বেশি বিস্তৃত।’
দুজনের নির্বাচক কমিটির কী সমস্যা, তা ব্যাখ্যা করেছেন দল নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন এক সাবেক ক্রিকেটার, ‘দুজন মিলে খেলোয়াড় বাছাই করতে বসলে তৃতীয় মত বলে কিছু থাকে না। কোনো একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে যখন দুজন দুই মত দেবেন তখন তৃতীয় একটা মত থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। এটা হতে পারে পাঁচজনের নির্বাচক কমিটি দিয়েও।’
অবশ্য নির্বাচক প্যানেল বা কমিটির ক্ষেত্রে বিসিবির দর্শন একটু অন্য রকমই। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যেমন বোঝাতে চাইলেন, ‘তিনজন নির্বাচকই থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। নির্বাচক এর চেয়ে কমও হতে পারে।’ যদিও সে রকম নির্বাচক কমিটির কোনো উদাহরণ তিনি দেখাতে পারেননি। নির্বাচক কমিটির সদস্য আপাতত আর বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন নিজাম উদ্দিন চৌধুরী। বাড়তে পারে জুনিয়র নির্বাচক প্যানেলের সদস্য।