06-01-2018 11:31:27 AM
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মাধ্যমে ১৩টি বস্ত্রকল পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) আওতায় রয়েছে বস্ত্রকলগুলো।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কলগুলো পিপিপির মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে কলগুলো ভালোভাবে চালু করার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার অংশ হিসেবেই নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান।
বস্ত্রকলগুলো হচ্ছে চট্টগ্রামের আর আর টেক্সটাইল, আমিন টেক্সটাইল, জলিল টেক্সটাইল ও এশিয়াটিক কটন, দিনাজপুরের দিনাজপুর টেক্সটাইল, রাঙামাটি টেক্সটাইল, মাগুরা টেক্সটাইল, যশোরের নওয়াপাড়া টেক্সটাইল, রাজশাহী টেক্সটাইল, সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল, নীলফামারীর দারোয়ানি টেক্সটাইল, ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল ও সাভারের আফসার কটন।
বিটিএমসির তথ্যমতে, কলগুলোতে ৩৮০ দশমিক ৪৭ একর জমি রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ মেনেই এসব কল পিপিপির মাধ্যমে পরিচালনার পথে যাচ্ছে।
যোগাযোগ করলে বিটিএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব আহমেদ জাকারিয়া গত মঙ্গলবার বলেন, ‘পিপিপির মাধ্যমে ১৩টি বস্ত্রকল পরিচালনার সিদ্ধান্ত এসেছে। বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার জন্য এখন দরপত্র ডাকা হবে।’
পিপিপির মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হওয়া বস্ত্রকলগুলোর মধ্যে এশিয়াটিক, আফসার, জলিল—এই তিনটিকে মাঝখানে পুনর্গ্রহণ করেছে সরকার। ১৯৭২ সালের ১ জুলাই ৭৪টি কল নিয়ে বিটিএমসির যাত্রা শুরু হয়। পরে গড়ে তোলা হয় আরও ১২টি কল।
বিটিএমসির মাসিক ব্যবস্থাপনা তথ্য প্রতিবেদন (সেপ্টেম্বর ২০১৭) অনুযায়ী, পিপিপির মাধ্যমে চালুর অপেক্ষায় থাকা কলগুলোর কিছু সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে চালু আছে, কিছু চলছে ভাড়ায়, আর কয়েকটি বন্ধ আছে। বন্ধ কলগুলোর যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে বলে বিটিএমসির কর্মকর্তারা জানান।
ক্রমাগত লোকসানের কারণে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছর থেকে সার্ভিস চার্জ পদ্ধতি চালু করা হয়। এ পদ্ধতিতে দরপত্রের মাধ্যমে সুতার ব্যবসায়ীরা নিজেদের টাকায় কাঁচামাল কিনে দেন। ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী সুতা উৎপাদিত হয় এবং নির্ধারিত দরে তা তাঁরা কিনে নেন। চুক্তিবদ্ধ ব্যবসায়ীরাই উৎপাদিত সুতা বাজারজাত করেন।
বিটিএমসির চেয়ারম্যান মাহবুব আহমেদ জাকারিয়া আরও বলেন, বস্ত্রকলগুলো পরিচালনার জন্য বেসরকারি খাত আকৃষ্ট হবে বলে তিনি আশাবাদী। পর্যায়ক্রমে অন্য বস্ত্রকলগুলোকেও পিপিপির ভিত্তিতে পরিচালনার চিন্তা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কলগুলোর জমির বিবরণ: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১৯৬৩ সালে গড়ে ওঠা আর আর টেক্সটাইল মিলের আয়তন ১৮ দশমিক ৯৫ একর। চট্টগ্রামের ষোলশহরে ১৯৮৬ সালে ২৩ দশমিক ৪৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে আমিন টেক্সটাইল। ১৯৫৯ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী রোডে গড়ে ওঠা এশিয়াটিক কটন ২৪ দশমিক ৯৬ একর এবং ১৯৬০ সালে ফৌজদারহাটে গড়ে ওঠা জলিল টেক্সটাইল ৬৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
এ ছাড়া রাঙামাটির ঘাগড়া নামক এলাকায় রাঙামাটি টেক্সটাইল ২৬ দশমিক ২৪ একর, দিনাজপুর টেক্সটাইল ৩৫ দশমিক ৪৫ একর, মাগুরা টেক্সটাইল ১৬ দশমিক ১৭ একর, যশোরের নওয়াপাড়া টেক্সটাইল ১৫ দশমিক ৯২ একর, রাজশাহী টেক্সটাইল ২৬ দশমিক ৫৩ একর, সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল ২৯ দশমিক ৪৭ একর, নীলফামারীর দারোয়ানি টেক্সটাইল ৬৮ দশমিক ৩০ একর, ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল ২১ দশমিক ৪৭ একর এবং সাভারের আফসার কটন ৫ দশমিক ৫২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
জানতে চাইলে আফসার কটনের ব্যবস্থাপক চৌধুরী আখতার আলী বেগ গত মঙ্গলবার বলেন, তিনি নতুন এসেছেন এবং যতটুকু শুনেছেন আগের মালিক কিছু জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। বাকি জমি নিয়েই দরপত্র ডাকার প্রস্তুতি চলছে।
চট্টগ্রামের চারটি কলের ব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, কলগুলোর জমি সরকারের দখলেই আছে। পিপিপি পদ্ধতিতে পরিচালনার জন্য দরপত্র-প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি।