পড়াশুনা, পরীক্ষা ও ফলাফল

31-12-2017 10:23:40 AM

শিক্ষার প্রকৃত চিত্রের প্রতিফলন ফলে!

newsImg

► জেএসসি, জেডিসি, পিইসি ও ইবতেদায়ির ফল নিম্নমুখী ► খাতা দেখায় আর সহানুভূতি নয় ► কুমিল্লা বোর্ডে জেএসসির ফল বিপর্যয় ► পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের অংশ হিসেবে জেএসসির তিন বিষয়ের নম্বর এবার যোগ হয়নি ► ইংরেজি ও গণিতে খারাপ করেছে শিক্ষার্থীরা ► সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফল খারাপ

 জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি), প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো গতকাল শনিবার। কিন্তু প্রায় ৫৫ লাখ খুদে শিক্ষার্থীর চারটি পরীক্ষার ফলই নিম্নমুখী।

সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়েছে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফল। তবে এ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। তাঁরা বলেছেন, আসলে শিক্ষার প্রকৃত চিত্রের দিকেই এগোচ্ছে দেশ। আগামী দিনে পাসের হার আরো কমলেও সেটাই হবে যথাযথ ফল।

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ করে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এত দিন যে উদার নীতিতে খাতা দেখা হতো, সেটা এবার আর হয়নি। মোটামুটি যথাযথভাবেই নম্বর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই দুই পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৩.৬৫ শতাংশ হলেও কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬২.৮৩ শতাংশ; যা সার্বিক ফলে প্রভাব ফেলেছে। জেএসসি ও জেডিসিতে ইংরেজি, গণিত ও আরবির মতো বিষয়ে ফল খারাপ হয়েছে। এ ছাড়া এবার পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের কারণে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি।ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হয়েছে মাত্র। এতে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারেনি।তবে পিইসি ও ইবতেদায়িতে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান সরকারি। তাদের ফলই অন্য সব বিদ্যালয়ের চেয়ে খারাপ। এর প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলে। এ ছাড়া ইংরেজি বিষয়েও শিক্ষার্থীরা তুলনামূলকভাবে খারাপ করেছে।

সচিবালয়ে ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কথায় শিক্ষার প্রকৃত চিত্রের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথমে চেষ্টা ছিল সকলকে স্কুলে নিয়ে আসা ও ধরে রাখা। সেটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলেও তা আমরা অর্জন করেছি। একই সঙ্গে আমরা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিরও চেষ্টা করেছি। কিন্তু যেখাaনে আমাদের যাওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। আর এখন যা হচ্ছে, এর সব কিছুই শিক্ষার মানকে উন্নত করার জন্যই হচ্ছে। শুরুতে আমাদের অনেক সমস্যা ছিল, সেটা আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। ’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলের অনুলিপি তুলে দেওয়ার সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্কুলগুলোর দিকে একটু নজর দেওয়া দরকার। সেখানে সঠিকভাবে পড়াশোনা হচ্ছে কি না এই বিষয়টার দিকে একটু বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। এটা খুবই জরুরি বলে আমি মনে করি। ’

পাসের হার কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বছর যেহেতু আপনাদের নজরদারি বেড়েছে, সে কারণে পাসের হার হয়তো একটু কম। আশা করি ভবিষ্যতে যেন বাড়ে। আমাদের  ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করছে, আমরা সব রকম সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। সেখানে তারা ফেল করবে কেন?’ স্কুলগুলোতে নজরদারির পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠক্রম পরিবর্তনের তাগিদ দেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে খাতা না পড়েই নম্বর দেওয়ার একটা প্রবণতা ছিল। কারণ তখন প্রায় শতভাগই পাস করত। এখন পাসের হার কিছুটা কমলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আসলে আমরা কিছুটা বাস্তবতার দিকে যাচ্ছি। অবশ্যই আমরা শতভাগ পাস চাই। তবে তা যেন হয় শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা অর্জনের পর। তবে আমি সব সময়ই বলি, শিশুদের পরীক্ষার ভার কমাতে হবে। পরীক্ষার চেয়ে বাচ্চাদের সার্বিক বিকাশের দিকে নজর দেওয়া উচিত। ’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফল কিছুটা নিম্নমুখী হলেও তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কেন ফল নিম্নমুখী হচ্ছে, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা গণিত আর ইংরেজিতে খারাপ করছে। আসলে প্রাথমিকের শুরু থেকেই এই প্রবণতা চলে আসছে, যা পরবর্তী সময়েও থেকে যাচ্ছে। আর মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। মূলত পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার কারণেই এটা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কোচিং ও গাইডের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমাদের শুধু শহরের চিত্র দেখলে চলবে না। মফস্বলের স্কুলগুলোতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। ’

এবার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮৩.৬৫ শতাংশ। গত বছর ছিল ৯৩.০৬ শতাংশ। এবার পাসের হার কমেছে ৯.৪১ শতাংশ। এবার মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৬২৮ জন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৮। জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও কমেছে ৫৫ হাজার ৯৬০।

এবার পিইসিতে পাসের হার ৯৫.১৮ শতাংশ। গত বছর এই হার ছিল ৯৮.৫২ শতাংশ। পাসের হার কমেছে ৩.৩৪ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও ১৯ হাজার ২৮৯ কমেছে। ইবতেদায়িতে পাশের হার ৯২.৯৪ শতাংশ। গত বছর এই হার ছিল ৯৫.১৩ শতাংশ। পাসের হার কমেছে ২.১৯ শতাংশ। আর জিপিএ ৫ কমেছে ৯২৫ জন।

জানা যায়, কয়েক বছর ধরে পাসের হার হু হু করে বাড়ছিল। খাতা দেখায় ‘উদারনীতি’ই ছিল এর মূল কারণ। বোর্ড থেকেই শিক্ষকদের সহানুভূতির সঙ্গে নম্বর দিতে বলা হতো। কিন্তু এবার শিক্ষকদের খাতা দেওয়ার সময় যথাযথভাবে দেখার কথা বলে দেওয়া হয়। ফলে যে যতটুকু লিখেছে তাকে ততটুকুই নম্বর দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষকভেদে এই নম্বর কমবেশি হয়ে থাকতে পারে।

এবার জেএসসি ও জেডিসিতে গড় পাসের চেয়ে কুমিল্লা বোর্ডের পাসের হার ২০.৮২ শতাংশ কম। এর প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলে। গড় পাসের হার কমে গেছে। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায়ও সবচেয়ে পেছনে ছিল কুমিল্লা বোর্ড। এইচএসসি পরীক্ষায়ও পাসের হার ছিল অন্যান্য বোর্ডের চেয়ে কম। জেএসসিতে এই বোর্ডে পাসের হার ৬২.৮৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে আট হাজার ৮৭৫ জন।

পিছিয়ে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে কুমিল্লা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল ছালাম বলেন, ‘এবার তিন কারণে জেএসসির ফল খারাপ হয়েছে। সেগুলো হলো শহরের স্কুলে ভালো শিক্ষক সংকট, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ভালো শিক্ষকের অভাব এবং এক কেন্দ্রের শিক্ষক অন্য কেন্দ্রে স্থানান্তরকরণ। এ ছাড়া মফস্বলের শিক্ষার্থীরা শহরের তুলনায় খারাপ ফল করেছে। আমরা নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ করেছি। তবে ফল খারাপ হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’

জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় সংস্কারের কারণে এ বছর থেকেই শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, কর্মমুখী শিক্ষা এবং চারু ও কারুকলা বিষয় তিনটি ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আনা হয়েছে। এ তিনটি বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়নি। অর্থাৎ এই তিনটি বিষয় স্কুলেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। অথচ আগের বছরগুলোতে শিক্ষার্থীরা সহজ এই তিনটি বিষয়ে অন্য বিষয়ের চেয়ে ভালো করত। ফলে গড়ে ফল ভালো হতো, যা এ বছর হয়নি।

জেএসসির বিষয়ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলায় এবার পাসের হার ৯৮.৬১ শতাংশ, গত বছর ছিল ৯৯.৪৬ শতাংশ। ইংরেজিতে এবার পাসের হার ৯৪.২৫ শতাংশ, গত বছর ছিল ৯৫.৩৩ শতাংশ। গণিতে পাসের হার সবচেয়ে কম ৯৩.৫৯ শতাংশ, গত বছর ছিল ৯৭.১৮ শতাংশ। সাধারণ বিজ্ঞানে পাসের হার ৯৬.৮৭ শতাংশ।

এবার ১৫ ধরনের বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে শিশুরা। তবে আগের মতোই সরকারিভাবে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোই পিছিয়ে আছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের সুবিধা থাকার পরও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোই বেশি ভালো করেছে। আর নতুন জাতীয়করণ হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পাসের হারে পিছিয়ে থাকার পাশাপাশি জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতেও একেবারে পেছনে অবস্থান করছে। এবার পিইসিতে অংশ নেওয়া ৯৮ হাজার ৬৫১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে সরকারি ও সদ্য জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের সংখ্যাই ৬৩ হাজার ১৯৩। আনন্দ স্কুলসহ আরো কয়েক ধরনের স্কুলের ফল খারাপ হলেও তাদের সংখ্যা হাতে গোনা।

ধরন অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাসের হার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯৯.৮৬ শতাংশ। এরপর পিটিআইসংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে ৯৯.২৪ শতাংশ, ব্র্যাক পরিচালিত বিদ্যালয়ে ৯৮.৩২ শতাংশ, উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৮.১০ শতাংশ, কিন্ডারগার্টেনে ৯৮.০৬ শতাংশ, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৭.৪৩ শতাংশ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৫.৭৬ শতাংশ, রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৫.৪৫ শতাংশ, এক হাজার ৫০০ বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত বিদ্যালয়ে ৯৪.৫১ শতাংশ, নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯২.৪১ শতাংশ, নন-রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯০.৮৪ শতাংশ, অস্থায়ী/অনুমতিপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯০.৫০ শতাংশ, শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৭.৩৩ শতাংশ, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ে ৮৬.৫২ শতাংশ, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৬.৪৫ শতাংশ এবং আনন্দ স্কুলে ৭৭.৮০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের যোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে। কারণ এসব স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষকই টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পেয়েছেন। এত দিন এই স্কুলগুলোতে সরকারের খুব একটা মনিটরিং ছিল না। শিক্ষকরা ইচ্ছামতো আসতেন-যেতেন। ছিল না তেমন প্রশিক্ষণও। ২০১৩ সালে একযোগে প্রায় ২৬ হাজার স্কুল জাতীয়করণ করা হলেও শিক্ষকদের সবাই এখনো প্রশিক্ষণ পাননি। তাঁরা দক্ষও নন। ফলে ভালো ফল করতে পারছে না এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা। আর মোট স্কুলের প্রায় ৪০ শতাংশ এই ক্যাটাগরিতে থাকায় প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই স্কুলগুলো।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফল ক্রমে খারাপ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যতটুকু সহায়তা দেওয়া যায় সেটার ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও চেষ্টা করছে। আমাদের মূল হাতিয়ার হচ্ছে আমাদের শিক্ষকরা। শিক্ষকরা যদি নিবেদিতপ্রাণ হন তবে আমরা মানসম্মত শিক্ষা পাব। শিক্ষকদের দক্ষ করতে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই জায়গায় আরো অনেক কাজ করতে হবে। ’