30-12-2017 10:23:56 AM
বলা হয় মাছে-ভাতে বাঙালি। আর পাতে ইলিশ মাছ হলে তো কথাই নেই। বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নেও ইলিশের কদর বেশ। কাউকে উপহার হিসেবেও ইলিশের জুড়ি নেই। এখন রাষ্ট্রে বিদেশি অতিথিদেরও এই মাছ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ইলিশ উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আগের বছরের চেয়ে এবার ১ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। তাতে খুশি ইলিশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলে ও ব্যবসায়ীরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার বা প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টনে। অধিদপ্তরের হিসাবে, গত অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশই ছিল ইলিশ। প্রতি কেজি ইলিশের দাম ৫০০ টাকা ধরে হিসাব করলে ৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশের বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর আগে ২০১২-১৩ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে যথাক্রমে সাড়ে ৩ লাখ ও ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন।
ইলিশের উৎপাদন বাড়ার কারণ হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, কয়েক বছর ধরে ইলিশ রক্ষায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও নৌবাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করেছে। সবার সহায়তায় বিশেষ অভিযানও পরিচালনা করা হয়। তাতে জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষা পায়। এ কারণেই ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।
এবার রাজধানীতেও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা জেলা মৎস্য কার্যালয়। জানতে চাইলে ঢাকা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা ইলিশ কেনার বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ভোলার ইলিশ ব্যবসায়ী শাহ আলম ফরায়েজি বলেন, ‘চার-পাঁচ বছর ধরে ইলিশ বেশি ধরা পড়ছে। আর আকারেও বড়। এতে আমরা খুশি। তবে কারেন্ট জাল ও জাটকা জাল বন্ধ হলে উৎপাদন আরও বাড়বে।’
ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। আর ভারতে ১৫ শতাংশ ও মিয়ানমারে ১০ শতাংশ ইলিশ উৎপাদিত হয়। বাকি ইলিশ আরব সাগর তীরবর্তী এবং প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলোতে ধরা পড়ে। ওয়ার্ল্ড ফিশের তথ্য অনুযায়ী, ইলিশ উৎপাদন হয় বিশ্বের এমন ১১টি দেশের মধ্যে ১০টিতেই উৎপাদন কমছে। একমাত্র বাংলাদেশেই উৎপাদন বাড়ছে।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সবার সমন্বিত উদ্যোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা নিধন বন্ধে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম নিয়ামুল নাসের মনে করেন, ইলিশের উৎপাদন আরও ২ লাখ টন বাড়ানো সম্ভব, যদি ফারাক্কার পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রেখে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পর্যন্ত মা ইলিশ যাওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়। তিনি বলেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে রাজশাহীর পবা অঞ্চলে পানিপ্রবাহ কমে গেছে। বিভিন্ন স্থানে চর পড়ে গেছে। তাই মা ইলিশ পদ্মা নদী পর্যন্ত যেতে পারছে না।