27-12-2017 12:47:06 PM
প্রশ্ন ফাঁসের আতঙ্কের মধ্যে ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সব বিভাগেই পৌঁছেছে। তা এখন ৮টি বিভাগের সংশিস্নষ্ট জেলা কার্যালয়ের ট্রেজারিতে (গোপনীয় স্থান) সংরক্ষিত আছে বলে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সূত্রে জানা গেছে।
পিএসসি সূত্রে জানায়, বিভিন্ন প্রেস থেকে গত ২১ ডিসেম্বর হতে স্ব-স্ব বিভাগে বিসিএসের এই প্রশ্নপত্র পাঠানো শুরম্ন হয়। শেষ হয়েছে গত রোববার। এখন এসব প্রশ্নপত্র তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বে আছেন জেলা কার্যালয়ের ট্রেজারির দায়িত্বে থাকা একজন নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও ট্রেজারির প্রধান কর্মকর্তা। পিএসসির নির্দেশে এই দুই কর্মকর্তা পরীক্ষা শেষ পর্যন্ত্ম কাজ করবেন। এ ছাড়া পরীক্ষার আগের দিন পুলিশের সার্বিক নিরাপত্তায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে এ সব প্রশ্নপত্র। তবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য এবার পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সদস্যরাও কঠোর নজরদারি রেখেছেন। এ ছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে ও তা কীভাবে ঠেকানো যায়, সে প্রস্তুতিও নিচ্ছে পিএসসি।
পিএসসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে মোট ২৮৩টি কেন্দ্রের প্রায় সাত হাজার কক্ষে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতে ১৬২টি আর অন্যান্য সব বিভাগে কেন্দ্রের সংখ্যা হলো ১২১টি। সর্বোচ্চ সতর্কতার জন্য প্রতিকেন্দ্রে থাকবে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পিএসসির একজন প্রতিনিধি এবং চার থেকে পাঁচজন পুলিশ। এ ছাড়া ২৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য থাকবেন একজন পরিদর্শক। এতে সারাদেশে মোট পরিদর্শক থাকবেন ১৫ হাজার ৫৭৯ জন। প্রতি বিভাগের পরীক্ষার দায়িত্বে থাকবেন পিএসসির একজন করে বিজ্ঞ সদস্য। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রশ্ন ফাঁসসহ যে কোনো অনিয়মের জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবেন এবং পিএসসির প্রতিনিধিরা পরীক্ষার সংক্রান্ত্ম যে কোনো সমস্যার সমন্বয় করবেন। তবে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট, রংপুরের সঙ্গে এবার ময়মনসিংহ বিভাগেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে এবারের ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় রেকর্ডসংখ্যক চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। ফলে এই বিসিএস পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হিমশিম খাচ্ছে পিএসসি। এর আগে পিএসসি নিজস্ব জনবল দিয়ে পরীক্ষার প্রতিটি কেন্দ্র তদারকি করলেও এবার প্রথমবারের মতো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। পরীক্ষার দিন সকাল থেকে জনপ্রশাসনের ৭১ জন কর্মকর্তা পিএসসির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন। এ ছাড়া পিএসরি আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকা বাইরের কেন্দ্রেগুলোতে পরীক্ষা সম্পন্ন করবেন। এর সঙ্গে সব বিভাগে পিএসসির একজন করে বিজ্ঞ সদস্য সার্বিক সহযোগিতা করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক আই-নিউজ২৪.কম বলেন, সব বিভাগেই প্রশ্নপত্র পৌঁছে গেছে। স্ব-স্ব বিভাগের জেলা কার্যালয়ের ট্রেজারিতে (গোপনীয় স্থান) প্রশ্নপত্রগুলো রাখা হয়েছে। এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বিসিএসে যেন প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয়, সে কারণে কয়েক বছর ধরে একাধিক সেট প্রশ্নপত্র করা হচ্ছে। কোন সেটে পরীক্ষা হবে, সেটি আগে থেকে কেউই জানেন না। পরীক্ষা শুরম্ন হওয়ার আগে সবার সামনে লটারির মাধ্যমেই সেটা নির্ধারণ করা হবে। ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, তারা সর্বোচ্চ গুরম্নত্ব দিয়ে ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই মধ্যে পরীক্ষাসংশিস্নষ্ট প্রতিটি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যাতে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেয়া যায় এবং পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস না হয় সে বিষয়েও পরিকল্পনা নিয়েছেন।
পিএসসি সূত্র জানায়, গত ২১ ডিসেম্বর প্রতিকেন্দ্র থেকে দুইজন করে হল পরিদর্শককে পরীক্ষার সার্বিক বিষয়ে ব্রিফ করেছে পিএসসি। এ সব কর্মকর্তারা পরীক্ষার শুরম্ন হওয়ার আগে কেন্দ্রের অন্যান্য হল পরিদর্শকদের এ সব বিষয় জানিয়ে দেবেন। এ ছাড়া জনপ্রশান মন্ত্রণালয় থেকে যে সব কর্মকর্তা পিএসসির প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের পরীক্ষা সংক্রান্ত্ম বিষয়ে ২৬ ডিসেম্বর ব্রিফ করা হবে। তারা পিএসসির দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা শুরম্ন হওয়ার আগের দিন (২৮ ডিসেম্বর) থেকে কাজ শুরম্ন করবেন। একই সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, যারা পরীক্ষার সঙ্গে সংশিস্নষ্ট, তাদের সঙ্গেও বৈঠক করছে পিএসসি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) এক সদস্য আই-নিউজ২৪.কম বলেন, এবারই যেহেতু সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন, তাই তারা অনেক বেশি সতর্ক আছেন যাতে কোনোভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয়। কারণ, সম্প্রতি নার্স নিয়োগের পরীক্ষায় একটি দুষ্টচক্র প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। তারা আবার এই চেষ্টা করতে পারে এ জন্য পিএসসি সতর্ক থাকবে।
রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহমেদ আই-নিউজ২৪.কম বলেন, বিসিএসের এই পরীক্ষায় নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া পিএসসি যেভাবে বলবে সেভাবেই কাজ করবেন তারা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তারা বেশকিছু চাহিদার কথা বলেছেন, তারা সেভাবে যোগান দেয়ার চেষ্টা করছেন। যাতে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় সে জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। কাজী হাসান আহমেদ বলেন, আগামী ২৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত্ম এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র গত রোববার তাদের কাছে এসেছে। এখন জেলার ট্রেজারিতে (গোপনীয় স্থান) সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে রাখা হয়েছে। ট্রেজারিতে সরকারের সবচেয়ে গোপনীয় ও মূল্যবান জিনিজপত্র থাকে। এখান থেকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই।
জানা যায়, সর্বশেষ পিএসসির সিনিয়র স্টাফ নার্স পরীক্ষা নেয়ার সময় পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। পরে সত্যতা যাচাই করে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মেলায় ওই পরীক্ষা বাতিল করে পিএসসি। এরপর ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে পিএসসি। তবে প্রথম শ্রেণি থেকে শুরম্ন করে প্রায় সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নিয়মিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এবার বড় এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের আতঙ্কে রয়েছে পিএসসি।
উলেস্নখ্য, ৩৮তম বিসিএসের আবেদন শেষ হয় গত ১০ আগস্ট। তবে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) ইতিহাসে বিসিএস ক্যাডার পদে রেকর্ড সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে এই বিসিএসে। ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় এবার ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন প্রার্থী চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। ৩৮তম বিসিএসের মাধ্যমে জনপ্রশাসনে ২ হাজার ২৪ জন ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। প্রশাসন ক্যাডারের ৩০০, পুলিশ ক্যাডারের ১০০টি পদসহ ৩৮তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারে মোট ৫২০টি, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে ৫৪৯টি এবং শিক্ষা ক্যাডারে ৯৫৫টি পদ রয়েছে।
আই-নিউজ২৪.কম:নিলুফার ইয়াসমিন