15-12-2017 10:54:16 AM
বিদেশ থেকে বৈধ পথে আন্তর্জাতিক কল আসার হার এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। বর্তমানে দেশে আন্তর্জাতিক কলের সংখ্যা দৈনিক ৬ কোটি মিনিটের নিচে চলে এসেছে। অথচ দুই বছর আগে প্রতিদিন সাড়ে ১০ কোটি থেকে ১১ কোটি মিনিট কল আসত। অর্থাৎ দুই বছরে আন্তর্জাতিক কলের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে।
টেলিযোগাযোগ খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আন্তর্জাতিক কল আনার এ ব্যবসায় স্বচ্ছতার অভাবে কলের পরিমাণ দিন দিন কমছে। তাতে এ খাত থেকে সরকারের আয়ও পাল্লা দিয়ে কমছে। আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটররা ১ টাকা ৬০ পয়সা দরে কল আনলেও সরকারকে আয়ের ভাগ দিচ্ছে ১ টাকা ২০ পয়সা দরে। কলরেট ও আয় ভাগাভাগি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় গত দুই বছরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ইতিমধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আর্থিক ক্ষতি কমাতে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সুপারিশও বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক কল থেকে সরকারের আয় বাড়াতে সর্বশেষ আট মাস আগে এপ্রিলে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরি করেছিল বিটিআরসি। এসব প্রস্তাবের একটি ছিল আন্তর্জাতিক কল ব্যবসা থেকে সরকারের আয়ের ভাগ ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা। আরেকটি প্রস্তাব ছিল বিদেশ থেকে কল আনার সর্বোচ্চ মূল্য ২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমিয়ে ১ টাকা ২৮ পয়সায় নামিয়ে আনা। আবার যে মূল্যে কল আসবে সেই অনুপাতেই সরকারসহ অন্য পক্ষের সঙ্গে আয় ভাগাভাগি করার সুপারিশও রাখা হয়েছিল। আইজিডব্লিউসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এর কোনোটিই এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।
এসব সুপারিশ তৈরিতে বিটিআরসি ১৩ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করেছিল। এই কমিটিতে বিটিআরসি ছাড়াও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিনিধিও রাখা হয়। বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, আগের কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে এখন আবার সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক কল কমে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করতে বিটিআরসি বিস্তারিত গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছে। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, বর্তমানে বিদেশ থেকে আসা প্রতি এক মিনিট কল থেকে যে আয় হয় তার ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ আইসিএক্স, ২২ দশমিক ৫ শতাংশ মোবাইল অপারেটর আর বাকি ২০ শতাংশ আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো পেয়ে থাকে। খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১৫ সালের ২৪ জুন থেকে আন্তর্জাতিক কল ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব আইওএফ (আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরাম) নামের বেসরকারি একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর থেকে কলের সংখ্যা কমতে শুরু করে। আইওএফ গঠনের তিন মাস পর কল রেট ১ টাকা ২০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৬০ পয়সা করা হয়। কল রেট বাড়লেও বাড়তি আয় হওয়া ৪০ পয়সা পাচ্ছে শুধু আইজিডব্লিউ অপারেটররা। অভিযোগ আছে, আইওএফের সঙ্গে একটি প্রভাবশালী পক্ষ জড়িত থাকায় কল রেট ও আয় ভাগাভাগি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারছে না।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) টিআইএম নুরুল কবীর বলেন, আন্তর্জাতিক কল ব্যবসা পরিচালনায় সরকারের তদারকির দুর্বলতা ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কোনো একটি গোষ্ঠী যাতে বাড়তি সুবিধা নিতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।