16-11-2017 01:57:54 PM
ট্রাফিক সিগন্যালে কিংবা যানজটে আটকে থাকে শত শত গাড়ি। এরমধ্যেই রাস্তার পাশের সরু জায়গা দিয়ে ছুটে যায় দুই চাকার মোটর সাইকেল। যেন মোটর বাইকের শহরে পরিণত হয়েছে ঢাকা।
ঝাঁকে ঝাঁকে এমন মোটর সাইকেলের বহর দাবড়ে বেড়াচ্ছে রাজপথ। বিআরটিএ’র তথ্যানুসারে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত নিবন্ধনকৃত ২০ প্রকার গাড়ির সংখ্যা ১১ লাখ ৫০ হাজার ৭শ’ ৮টি। এর মধ্যে শুধু বাইকই রয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৮শ’ ১৯টি।
প্রতি বছর অন্যান্য গাড়ির তুলনায় নিবন্ধিত হচ্ছে বিপুল সংখ্যক বাইক। শুধু পুরুষরাই যে বাইক চালাচ্ছেন তা নয়। আছেন নারীরাও। তাই বাইকের পাশাপাশি দেখা যায় বিপুল সংখ্যক স্কুটার। মাথায় হেলমেট চাপিয়ে কর্মক্ষেত্রে, শপিংয়ে, বেড়াতে যাচ্ছেন তারা। এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও পেছনে বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
মূলত ২০১৫ সাল থেকে ঢাকায় বাইকের ব্যবহার বেড়েছে দ্রুত। বাইক চলছে ভাড়াতেও। অর্থের বিনিময়ে রাইড দেয়া হচ্ছে। গড়ে উঠেছে এ সংক্রান্ত সেবাদানকারী নানা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ ‘অ্যাপস’র মাধ্যমে চলছে এই সেবামূলক ব্যবসা।
অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার কাজটি করছে রাইডাররা। ঢাকার খামারবাড়ি, কাওরানবাজার, বাংলামোটর, পুরানা পল্টন, কাকরাইল, দৈনিকবাংলা মোড়ে দেখা গেছে সিগন্যালের সামনে বাইকারদের লম্বা লাইন।
বাইকচালক মো. ইমরান খান বলেন, একসময় বাসে চলাচল করতাম। ২০ মিনিটের রাস্তায় যানজটের কারণে ঘণ্টারও বেশি বসে থাকতে হতো। বাধ্য হয়েই ২০১৪ সালে বাইক কিনি। অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছার জন্যই মূলত বাইক কেনা।
মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন রিপন বণিক। মিরপুর থেকে বাসযোগে প্রায়ই ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছতে পারতেন না তিনি। এজন্য বেতন কাটা হয়েছে বেশ কয়েক বার। এটা শুধু রিপনের একার সমস্যা না।
এরকম সমস্যায় ভুগছিলেন চাকরিজীবী জামান, মারুফসহ অনেকে। শেষ পর্যন্ত রিপন একটি পুরাতন বাইক কিনেন। একইভাবে অন্যরা এখন বাইক বেছে নিয়েছেন। একইভাবে কর্মজীবী অনেক মেয়ে যাতায়াতের জন্য বেছে নিয়েছেন স্কুটার।
এমনকি অনেক ছাত্রী স্কুটার চালাচ্ছেন। শখ করে না, বরং প্রয়োজন থেকেই ঢাকার রাস্তায় স্কুটার নিয়ে বের হন তারা। বাসে যাতায়াত করতে গিয়ে শারিরীক হয়রানিসহ নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় নারীদের।
এ থেকে রক্ষা পেতে ও সময় বাঁচাতেই তারা স্কুটার চালান বলে জানিয়েছেন। ধানমন্ডির একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাহমুদা লুনা জানান, স্কুটার চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করেন তিনি। এতে সময় বাঁচে, ঝামেলাও কম।
লুনা বলেন, এ দেশের মেয়েরা এখন ট্রেন, জাহাজ থেকে শুরু করে বিমানও চালাচ্ছেন। কিন্তু বাইক চালাতে গিয়ে দেখেছি রাস্তার মানুষগুলো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। শুরুতে এসব নিয়ে একটু-আধটু ভেবেছি, বিব্রত হয়েছি। এখন আর এসব নিয়ে ভাবছেন না বলে জানান লুনা।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে মোটরবাইকের নিবন্ধন হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৮১টি। ২০১১ সালে ৩৪ হাজার ৭শ’ ৮। ২০১২ সালে ৩২ হাজার ৮শ’ ১০। ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ৩শ’ ৩১। ২০১৪ সালে ৩২ হাজার ৮শ’ ৯৪।
২০১৫ সালে মোটরসাইকের নিবন্ধনের হার বাড়তে থাকে বিপুলভাবে। ওই বছরে নিবন্ধিত হয় ৪৬ হাজার ৭শ’ ৬৪। ২০১৬ সালে ৫৩ হাজার ৭শ’ ৩৮। চলতি বছরে এই সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও নিবন্ধন ছাড়া অনেক বাইক রয়েছে ঢাকায়।
ঢাকা শহরে বাইকের চাহিদা অনেক। কিন্তু সে হিসাবে বাইক কিনতে পারছেন না বলে জানান অনেকে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা প্রয়োজন থাকলে দামের কারণে বাইক কিনতে পারছেন না।
তিতুমীর কলেজের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কলেজে কোচিংয়ে আসা-যাওয়ার জন্য বাইক প্রয়োজন হলেও এত টাকা দিয়ে বাইক কেনা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের কথা চিন্তা করে দেশে বাইকের দাম যেভাবে কম রাখা যায় সরকারকে সেভাবেই উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে জানান তিনি।
তবে বাইকে সুবিধা যেমন হচ্ছে তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, বাইক চালকদের আরো সতর্ক ও সচেতনতার সঙ্গে বাইক চালানো উচিত। তারা প্রায়ই দ্রুত যাওয়ার জন্য সিগন্যাল অমান্য করেন।
এমনকি ফুটপাথ দিয়েও বাইক চালিয়ে যান। এসব থেকে তাদের বিরত থাকা উচিত। ট্রাফিক পুলিশ দক্ষিণের উপ-কমিশনার রিফাত আহমেদ শামীম বলেন, ভালো করে বাইক চালানো শিখে, লাইসেন্স নিয়ে তবেই বাইক চালাতে হবে। অবশ্যই ট্রাফিক আইন মেনে চালাতে হবে। তাতে সবাই উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।
বে শুধু বাইকের মাধ্যমে যানজট সমস্যার সমাধান হবে না জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞানী তৌহিদুল হক বলেন, শহরের মোট ২৫ ভাগ রাস্তা থাকা প্রয়োজন। সেখানে ঢাকায় আট ভাগও নেই। বিষয়টি মাথায় নিয়ে দ্রুত একটি পরিকল্পিত ঢাকা গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, রাস্তা, ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখতে হবে। অল্প দূরত্বে মানুষ হেঁটে যেতে পারে। হাঁটার জন্য উপযোগী ফুটপাথ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
আই-নিউজ২৪.কম:নিলুফার ইয়াসমিন