14-04-2017 12:07:41 AM
গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য সরকার শুধু বেতন-ভাতাই বাড়ায়নি, বরং এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে আশা করা হচ্ছে, মেধাবীরা এখন সবার আগে সরকারি চাকরিই খুঁজবে।
আমি মনে করি, সরকার যথার্থ কাজই করেছে। নববর্ষ ভাতা ছিল বর্তমান সংস্কৃতিবান্ধব সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, শিক্ষক, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের জন্য বাংলা নববর্ষ ভাতা চালুর বিষয়টি অনুমোদন করার মধ্য দিয়ে সরকার বাঙালি সংস্কৃতিরও অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দাবি করতে পারে।
আমরা জানি, দেশে ধর্মভিত্তিক উত্সব রয়েছে। কিন্তু বাংলা নববর্ষ হচ্ছে একমাত্র উত্সব, যা সব মানুষের।
সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে জানতে পারি যে, বাংলা নববর্ষ ভাতা সব সম্প্রদায়ের মানুষ একই সঙ্গে ও একই সময়ে পাবে। এ ভাতা হবে মূল বেতনের ২০ শতাংশ। এটিও মনে করা হচ্ছে, ক্রমে এ ভাতা বাড়বে।
গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা যে যুক্তিতে নববর্ষ ভাতা চালু করেছেন, ঠিক একই যুক্তিতে বেসরকারি চাকরিজীবীরাও নববর্ষ ভাতার দাবি করতে পারেন। একটি সর্বজনীন উত্সবে কেউ ভাতা পাবেন আর কেউ পাবেন না, তা হওয়া উচিত নয়।
আমরা বেসরকারি চাকরিজীবী হিসেবে প্রত্যাশা করেছিলাম, বেসরকারি কোম্পানির মালিকরা এটি চালু করবেন। কিন্তু বেদনাদায়ক হলেও সত্যি, এখন পর্যন্ত সব বেসরকারি কোম্পানিতে নববর্ষ ভাতার ব্যবস্থা করা হয়নি। বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিতে এটি চালু করার ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের উদাসীনতা লক্ষণীয়।
যদিও ব্যবসায়ীরা যেকোনো উত্সব ঘিরেই উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা চালায়। কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন ও পণ্যের ধরনে মনে হবে বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি তাদের প্রেম যে কারোর চেয়ে বেশি। যখন যৌক্তিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা দেয়ার প্রশ্নটি সামনে আসছে, তখন তাদের রহস্যজনক নীরবতা আমাদের এটি ভাবতে বাধ্য করেছে যে, সরকারি নির্দেশনা ব্যতীত বেসরকারি চাকরিজীবীদের বৈশাখী ভাতা পাওয়ার কোনো আশা নেই।
সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী— উভয়ই একই রাষ্ট্রের নাগরিক এবং একই সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তাই রাষ্ট্র তার দায়িত্ব উপেক্ষা করতে পারে না।
সংখ্যায় বেসরকারি চাকরিজীবী বেশি। এবং আজকের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি চাকরিজীবীদের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই।
আমি এ রাষ্ট্রের একজন নাগরিক, একজন বেসরকারি চাকরিজীবী হিসেবে সংস্কৃতিবান্ধব বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নববর্ষ ভাতার ব্যবস্থা করতে বেসরকারি খাতকে যেন নির্দেশনা প্রদান করা হয় এবং নববর্ষ ভাতাটি যেন বাংলাদেশ শ্রম আইনে বাধ্যতামূলক করা হয়। আশা করি, বর্তমান সরকার বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বৈশাখী ভাতার বিষয়টি রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলেই বিবেচনা করবে।