13-12-2016 10:24:40 AM
শের আলী নামের ডিবি পুলিশের সেই কর্মকর্তাকে আমি চিনি না। কিন্তু কেন যেন এই অপরিচিত মেয়েটার জন্য তার এমন আকাশ পাতাল মমতা দেখে মনে হলো এই লোকটার বুকের ভেতরে, অনেকটা হাড় মাংস পার করে, একটা মায়া দিয়ে ভরা হৃৎপিন্ড পাওয়া যাবে। তার ভেতরে, খুব সঙ্গোপনে স্নেহময় একজন বাবা বসবাস করে। ডিবি পুলিশের কঠিন চেহারার আড়াল থেকে সেই মায়াওয়ালা বাবাটা হুট হাট বের হয়ে আসে। যেমন বের হয়ে এসছিলো গত ১১ ডিসেম্বর। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একটা বাস এক্সিডেন্ট হয়ে উল্টে যায়। তার তলায় তিনঘন্টা চাপা পড়েছিলো সেই বাচ্চা মেয়েটা। শের আলী বাচ্চাটাকে বাসের তলা থেকে বের করে দুই হাতে তুলে কাঁদতে কাঁদতে দৌড় দেন। বাচ্চাটা কার? কি তার পরিচয়? তাকে নিয়ে কোথায় যাবেন? কি করবেন?- আমি নিশ্চিত এসব প্রশ্নের একটাও তখন সেই মুহূর্তে তার মাথায় আসেনি।এ ধরনের ঘটনার পেছনে চমৎকার একটা জিনিস কাজ করে। একে বলে “প্রটেক্টিভ ইন্সটিংক্ট”। যাদের “প্রটেক্টিভ ইন্সটিংক্ট” সংবেদনশীল হয় তারা বিপদের মুহূর্তে আপন পর আলাদা করতে পারেন না। মানুষের বিপদ দেখলে তাকে বাঁচানোর জন্য ঝাপিয়ে পড়েন। কোথায় কিভাবে কি করবেন এসব চিন্তা করার মতন অবস্থায় তারা থাকেন না। “ওকে আমার বাঁচাতেই হবে” এই তীব্র মানসিক তাড়না নিয়ে তারা ছুটতে থাকেন।শের আলী তার পুলিশের পরিচয় ছাপিয়ে মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন বলেই সেদিন বাচ্চা মেয়েটা বেঁচে গিয়েছিলো। বড়ই আফসোস, তার অনেক সহকর্মীই সেটা হতে পারেননি। তারা মানুষ হওয়ার চেয়ে পুলিশ হওয়াটাকে বেশি জরুরি মনে করেন। আফসোস! শের আলীরা সংখ্যায় খুবই কম। আফসোস!