নতুন মডেলের মোটর সাইকেল কিনে দেয়ার উচ্চাভিলাসী আবদার পুরণ না করায় সন্তানের আগুনে পিতার মৃত্যুর মতো নৃশংস ঘটনায় তিব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শহরময় সর্বত্র বুধবার এটিই ছিলো আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়া অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এবিষয়ে তিব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ ঘটনায় সচেতন মহল একইসাথে পিতার ঘাতক এই সন্তানের সমালোচনা ও ফাঁসির দাবির পাশাপাশি অভিভাবকদের ভোগবাদি মানসিকতারও সমালোচনা করেছেন।
ফরিদপুরের কমলাপুর মহল্লার ডিআইবি অফিস বটতলার মোড়ের বাসিন্দা শহরবাসীর সুপরিচিত মরহুম রাজ্জাক দারোগার পুত্র রফিকুল হুদা পিন্টু। পৈত্রিক সূত্রে অগাধ সম্পদের মালিক বনে যান তিনি ও তার তার ভাইয়েরা। তার এক ভাই এটিএম সামসুল হুদা সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার। রফিকুল হুদার একমাত্র পুত্র এই ফারদিন হুদা মুগ্ধ সবেমাত্র এসএসসি পাশ করেছে। অত্যন্ত আদরের এই পুত্রকে পিতা পিন্টু কিনে দিয়েছিলেন ৪ লক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের একটি দামি ইয়ামাহা মোটর সাইকেল। কিন্তু পুত্রের আবদার ছিলো আবার তাকে একটি নতুন মডেলের মোটর সাইকলে কিনে দেয়ার। আর এই আবদার পুরণ না করায় তাকে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মারলো আদরের সেই একমাত্র সন্তান।
এ খবর জানতে পেরে সূদুর সৌদি আরবে হজ্জের জন্য অস্থানরত পিন্টুর এক বন্ধু একে কিবরিয়া স্বপন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ আমি হজ করতে আসার মাত্র কয়েকদিন আগে পিন্টু ওর ছেলেকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। পিন্টু ওর ছেলে কে ঢাকা নিয়ে পড়াতে চেয়েছিল। আমিও ওর ছেলে কে যথা সম্ভব বুঝিয়েছিলাম কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। আজ যখন ফেসবুকে পিন্টুর ইন্তেকাল এর খবর পেলাম তখন কিছুতেই রাগ সামলাতে পারছিলাম না। পবিত্র মাটিতে বসে মহান আল্লাহর কাছে পিন্টুর মাগফেরাত কামনা করছি। আর ওর কুসন্তান এর জন্য এমন কঠিন শাস্তি কামনা করছি যাতে করে ওকে দেখে কোন সন্তান তার বাবা-মার সাথে এমন আচরণ করতে না পারে। হে আল্লাহ পিন্টুকে জান্নাত দান কর।’
জাহিদুল ইসলাম মুরাদ লিখেছেন, ‘সরকারকে এই সামাজিক অবক্ষয়ের দায় নিতে হবে। রাষ্ট্র এখন ব্যবসায়ী দৃষ্টিকোণ থেকে জনগণকে দেখতে শুরু করেছে। এরই ফলশ্র“তিতে পিন্টু হত্যার মত ঘটনা প্রতিদিনের একটি সংখ্যা মাত্র। ক্রমবধর্মান দুর্নীতি এসব ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। আধিক শুল্ক আদায়ের লক্ষে উচ্চবিত্তকে টার্গেট করে ছেলেখেলার মত উচ্চগতির তিনচার লাখ টাকার মোটরবাইক আমদানির আনুমোদন দিচ্ছে সরকার। একবারও ভাবছেনা আইন শৃঙ্খলার কথা, পুলিশের সীমিত লোকবলের কথা, রাস্তার ধারণ ক্ষমতার কথা। নীতিনির্ধারকেরাই সড়ক গুলোকে নড়কে পরিণত করছে কিছু না ভেবে। সরকারী এসব উন্নয়ণের স্রোতে কত পিন্টুকে হারাব! এখই সময় উন্নয়ন কোষে ব্রেক করবার।’
আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘অন্য বাবা মা বিষয়টি ভালো ভাবে অনুধাবন করুন।’
ইলিয়াস হোসেন লিখেছেন, ‘বেশি পাওয়ার কারণে আজ এ ভয়াবহ পরিণাম। শুরু থেকেই লাগাম দিন। সকলের জন্যেই এটা সতর্কবাণী।’
ফেরদৌসি ইয়াসমিন লিখেছেন, ‘আফসোস ! কোন ভোগবাদী সমাজে আমরা বাস করছি। সন্তান মানুষ করতে!’
জুল আফরোজ লিখেছেন, ‘এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। আমাদের সমাজ আজ কলুসিত হয়ে গিয়েছে।’
আরেফিন কায়েস মাহমুদ লিখেছেন, ‘এটি সত্যিই লজ্জাজনক। ওকে ফাঁসিতে ঝুলানো হোক।’
রাশেদ খান বাপ্পি লিখেছেন, ‘কিছু বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’
স্মরণ আহমেদ লিখেছেন, ‘ওকে ফাঁসিতে ঝুলানো উচিত।’
সাইয়ুম হোসেন লিখেছেন, ‘ঐশির যদি বিচার হয় এই কুলাঙ্গারেরও বিচার হওয়া উচিত।’
ইয়ার আলী লিখেছেন, ‘সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত না করার ফলেই আজকের এই পরিণতি। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে বোঝার তওফিক দান করুন আমিন।’
শাহজাহান মিয়া লিখেছেন, ‘ওকে ফাঁশি দেওয়া হোক। পরপারে যাইয়া মোটর সাইকেল চালাক।’
আব্দুর রহমান লিখেছেন, ‘বড়লোকের আদরের বাদর। বাপ মা যেমন ছোটবেলা থেকে শিখাইছে তেমন হয়েছে।’
নাজমুল সরদার লিখেছেন, ‘এখন এই ছেলেটিকে ও আগুনে পুড়িয়ে মারাই ভালো।’
মাহমুদুল হাসান লিখেছেন, ‘কি পাপ করছিলো বাপ মায়।’
মুজাহিদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘ওকে ফাঁসি দেওয়া হোক।’
মঈনুল ইসলাম লিখেছেন, ‘মানুষ নামের কলংক।’
মনিউজ্জামান লিখেছেন, ‘অতি দু:খের স্বরে বলতেই হচ্ছে- ‘বাপের পাওনা ঋণ শোধ করল ছেলে । বাকি টা বুঝে নিতে হবে।’