বাংলাদেশ | মঙ্গলবার, মার্চ ১৯, ২০২৪ | ৪ চৈত্র,১৪৩০

সরকারী দল

01-04-2018 12:57:06 PM

ভোট চাওয়া আমার রাজনৈতিক অধিকার :প্রধানমন্ত্রী

newsImg

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া মন্ত্রী-এমপিদের আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বলেছেন, যারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, আগামী নির্বাচনে তাদের নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না।

এই বৈঠকের আগে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়। সরকারি খরচে নির্বাচনী প্রচার ও জনসভা  করার যে অভিযোগ বিএনপি তুলেছে, এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি একটি দলের সভাপতি। দলের পক্ষে তিনি ভোট চাইতেই পারেন। তিনি বলেন, 'নৌকায় ভোট চাওয়া আমার রাজনৈতিক অধিকার। আমি যেখানেই যাব, অবশ্যই আমার দলের জন্য ভোট চাইব।'

কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় দলীয় কোন্দল বিশেষ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদের চিত্র তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থন করা মন্ত্রী-এমপিদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ধারা বহাল থাকলে সুষ্ঠুভাবে দল পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়বে। অতীতে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধীদের ক্ষমা করে দেওয়ায় এই সংকট আরও বেড়েছে। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে আর এটি সহ্য করা হবে না। যে বা যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী এই ফোরামের বৈঠক থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া প্রার্থী ও তাদের সমর্থন করা নেতাকর্মীদের তালিকা করার জন্য আট সাংগঠনিক সম্পাদককে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের পরাজয়ের কারণ এবং কারা এজন্য দায়ী, তা খতিয়ে দেখার জন্য দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন- মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান এবং অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম। এই কমিটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে।

বৈঠকে ছাত্রলীগের সম্মেলন বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। রমজানের আগেই আগামী ১৩ মের মধ্যে এই সম্মেলন করে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ১১ মে সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত তারিখ জানিয়ে দেবেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের স্বীকৃতি পাওয়ায় দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সংবর্ধনার তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এই স্বীকৃতি পাওয়ায় বৈঠকের শুরুতে দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা। দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে নেতারা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন।

বৈঠকে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস, পহেলা বৈশাখ, মহান মে দিবস, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী এবং ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালনের বিষয়ে আপত্তি জানান। তবে দিবসটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে দলের নেতারা বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশ নতুন অভিযাত্রা শুরু করেছে। তিনি দেশে ফিরেছিলেন বলেই আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। দেশ ও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করা উচিত। এই পর্যায়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন বিষয়ে আর আপত্তি তোলেননি প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দিয়েই দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, রাষ্ট্রভাষা বাংলা পেয়েছে। দেশের উন্নতির ছোঁয়াও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই মানুষ পেয়েছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।

নির্বাচন বানচাল ও সরকার উৎখাত আন্দোলনের নামে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় জনগণই তাদের প্রতিরোধ করেছে। নির্বাচন হয়েছে, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এসেছে। এর ফলে দেশের এত উন্নয়ন ও অগ্রগতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় আসে ভোগবিলাস করতে, অর্থসম্পদ বানাতে আর মানুষ খুন করতে। বিএনপি-জামায়াত জোট মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে। মানুষের ক্ষতি করতে পারে। মানুষকে অত্যাচার করাই তাদের কাজ। তারা চায় না দেশের উন্নতি হোক, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হোক। আর আওয়ামী লীগ দেশকে শান্তিপূর্ণ করতে চায়। আওয়ামী লীগ সরকারের কর্তব্যই হচ্ছে মানুষকে সেবা করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে আমরা অনেক কাজ করতে পারি। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মাঝে সেতুবন্ধ রচনার দায়িত্বটা বাংলাদেশ নিতে পারে। সেখান থেকেই আমাদের বিরাট অর্থনৈতিক অর্জন হতে পারে। তবে এগুলো কখনও কেউ সেভাবে বোঝেনি, ভাবেওনি। একমাত্র আওয়ামী লীগই এদিকে লক্ষ্য রেখে দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের মানুষের জীবন উন্নত হবে। জাতির পিতার নেতৃত্বে যুদ্ধ করে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি। আমরা কারও কাছে মাথা নত করব না। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ অবশ্যই উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশে পরিণত হবে।

খবরটি সংগ্রহ করেনঃ- i-news
এই খবরটি মোট ( 5450 ) বার পড়া হয়েছে।
add

Share This With Your Friends