বাংলাদেশ | শনিবার, মে ৪, ২০২৪ | ২১ বৈশাখ,১৪৩১

শেয়ার বাজার

29-06-2015 04:41:39 AM

বোকা মেয়ের ডায়রি: কাজের মেয়ে বলেই ধর্ষণের যোগ্য!

newsImg

ঢাকা: বোকা মেয়ের ডায়রি) রাত তখন ৮ টার কিছু বেশী, সপ্তাহ খানেক আগের কথা, বাইরে থেকে ফিরছি। হুট করে চোখে পড়লো এই বিল্ডিং-এরই এক বাড়ির গৃহকর্মীর দিকে। খুব বেশী হলে ৭/৮ বছর বয়স, আমার ভাস্তি-ভাগ্নি গুলোর বয়সী। পরনে জামাটা মলিন আর বিবর্ণ, ছোট হয়ে হাঁটুর ওপরে উঠে গেছে। জামার পেছনে চেইনটা ছেঁড়া, একটা সেফটিপিন কোন রকমে ঝুলে আছে। ছিন্ন জামার ফাঁক ফোকর দিয়ে মেয়েটার কচি দেহটার নানান অংশ চোখে পড়ছে। এইটুকু মেয়ে তো আর বোঝে না এই সমাজে এই কচি কচি শিশু শরীরটাকে ঢেকে রাখা কত বেশী প্রয়োজন। মেয়েটা ক্লান্ত পায়ে যাচ্ছে বেগম সাহেবের কাপড় ইস্ত্রি করাতে, এই রাত ৮ টায়...

বুকের মাঝে ছ্যাত করে উঠলো আক্ষরিক অর্থেই। মনে হলো, নিজের সন্তান হলে এভাবে রাত আটটায় বাড়ির বাইরে বের হতে দিতাম? কখনো তো না! লন্ড্রি জায়গাটা গলির মাঝে, আজেবাজে লোকের অভাব নেই। এমন একটা জায়গায় এই টুকু একটা মেয়েকে পাঠানো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এই পোড়া সমাজে। হয়তো লিফটে উঠেই যেতাম, কিন্তু যখন দেখলাম আশেপাশের অধিকাংশ পুরুষ রূপী জানোয়ার গুলো শিশুটির উন্মুক্ত পিঠ আর পায়ের দিকে চকচকে চোখে তাকাচ্ছে, মন মানলো না। "স্প্রাইট কিনতে হবে"- এই ভাবনা মনকে বুঝিয়ে শিশুটির পেছন পেছন গেলাম। লন্ড্রিতে বাচ্চাটা কাপড় দেবে, আমি পাশের দোকানে স্প্রাইট কিনবো। এই টুকুই তো রাস্তা।

সত্যি কথা বলি, মেয়েটা লন্ড্রিতে দাঁড়িয়ে কাপড় দিচ্ছিল, এমন কোন পুরুষ চোখ নেই তাঁর কচি শরীরটার দিকে তাকাচ্ছিল না। তরকারী ওয়ালা, দোকানদার, মোড়ের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো, রিকশাওয়ালা। সব! এই ছোট্ট শিশুর শরীরটিকে চেটে চেটে খাচ্ছিল প্রতিটি চোখ। ব্যাগের সেফটি পিন দিয়ে তাঁর ছেঁড়া জামার চেইন তো আমি জুড়ে দিলাম, কিন্তু খাটো জামাটাকে লম্বা করবো কীভাবে? সে রাতে না হয় আমি ছিলাম তাঁর সাথে, অন্য সময়ে কে থাকবে? একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে কতক্ষণ লাগে এই সমাজে?

কী ভাবছেন? ভাবছেন সেই গৃহকত্রীকে গিয়ে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলিনি কেন? হ্যাঁ, সেটাও বলেছি। আমাদের এই এপার্টমেন্ট এর অন্যতম ধনী পরিবার তাঁরা। ইনটেরিয়র ডিজাইনার দিয়ে সাজানো ঘর। এতটাই ধনী যে প্রতিবেশীরা সাধারণত তাঁদের বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি পায় না, দরজা থেকেই বিদায় করে দেন সেই আপা। যাই হোক, অপমানটুকু সইতে হবে ভেবেই গেলাম, যদিও জানি কাজটি মোটেও ভালো হলো না। তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলবে জানতাম। কিন্তু একজন মা হয়ে এত ভয়াবহ কথা বলবেন, সেটা জানা ছিল না।

যতটুকু বিনয়ের সাথে বিষয়টি তাঁকে বলা সম্ভব, তাঁর চাইতে হয়তো একটু বেশিই বিনয় দেখিয়ে ফেললাম। ঘটনাটি জানিয়ে তাঁকে বললাম, "আপু, আপনি হয়তো জানেন না যে ওই এলাকার মানুষগুলো ভালো না। লন্ড্রির আশেপাশটা জুড়ে আজেবাজে মানুষের আড্ডা...

"আমার বাসার কাজের মেয়ের পেছনে আপনার যাওয়ার দরকার কী ছিল?"

একটু হকচকিয়ে গেলাম। আমতা আমতা করে বললাম, "বুঝেনই তো আপু, রোজ পত্রিকায় দেখি ছোট ছোট বাচ্চাদের রেপ করে। তাই একটু ভয় লাগতেসিল। জায়গাটা ভালো না।

"জায়গায়তা ভালো না তো আপনার যাওয়ার দরকার কী ছিল? তারপর ভালোমন্দ একটা কিছু হলে তো আমাকে কথা শুনাতেন।"

"ও ছোট মানুষ হয়ে যদি যেতে পারে, তাহলে আমি তো বড় মানুষ। কেউ যদি অন্ধকার গলিতে একলা পেয়ে ওকে ধরতো, ও কী করতো বলেন।"

কথা শেষ করতে পারলাম না, সেই ভদ্র (!) মহিলা বললেন, "ওদের নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না। কাজের মেয়েদের এইসব অভ্যাস থাকে।"

মুখের ওপর বন্ধ হয়ে গেলো দরজা, আর আমি হতভম্ব! কাজের মেয়েদের এইসব অভ্যাস থাকে মানে কী? কাজের মেয়েদের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে অভ্যাস থাকে? ধর্ষিত হয়ে অভ্যাস থাকে? কাজের মেয়ে বলেই তাঁরা সারাক্ষণ পুরুষদের ডাকছে তাঁদের শরীরটা নিয়ে খেলা করার জন্য?... বোঝাতে কী চাইলেন এই মহিলা? এই মহিলার বাসায় তাঁর স্বামী আছে, উঠতি বয়সের পুত্র আছে। কাল যদি এদের দ্বারা মেয়েটি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে তিনি কী বলবেন? "কাজের মেয়েই তো, একটু রেপ করসে তো কী হইসে?"- আমি নিশ্চিত তিনি এমন কিছুই বলবেন।

একজন নারী কীভাবে এমন কথা বলতে পারলেন? একজন মা কীভাবে এমন কথা বলতে পারলেন? বিষয়টা এখনো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না...

পরিশিষ্ট
নিজের কন্যা সন্তানটির নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সকলেই ভাবি। হয়তো ভুলে যাই বাড়ির গৃহকর্মী মেয়েটির কথা। যে কমবয়সী মেয়েটি আপনার বাড়িতে কাজ করে, সেও কিন্তু ব্যথা পায়। তাঁরও কিন্তু কষ্ট হয়। পেটের দায়ে আপনার বাড়িতে কাজ করে বলে মেয়েটি যৌন নিপীড়নের শিকার হলে বা ধর্ষিত হলে আপনার কিছু যায় আসে না, এমনটা ভাবার মত জানোয়ার হবেন না প্লিজ। বেশিরভাগ কাজের মেয়ে বাড়ির গৃহকর্তা, মামা-চাচা-খালু বা ভাইয়াদের দ্বারাই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। কাজের মেয়ে বলেই বাচ্চাটা দু পা ছড়িয়ে বসে থাকে না ধর্ষিত হবার জন্য।

প্লিজ একটু ভাবুন। নিজের সন্তানের পাশাপাশি গৃহকর্মী মেয়েটির দিকেও একটু খেয়াল রাখুন। প্লিজ! সে যেন আপনার গৃহে যৌন নির্যাতনের শিকার না হয়। সে যেন আপনার কারণে ঘরে-বাইরে কোথাও নির্যাতনের শিকার না হয়।

আমি জানি আমার এই কথাগুলো কারো কাছে পৌঁছাবে না। কেউ হয়তো গুরুত্বই দেবেন না। তবুও... যদি কারো মনেও কথাগুলো পৌঁছায়, দয়া করে অন্য বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। প্লিজ।

খবরটি সংগ্রহ করেনঃ- আই-নিউজ২৪.কম
এই খবরটি মোট ( 6334 ) বার পড়া হয়েছে।
add

Share This With Your Friends