08-08-2016 10:31:42 AM

ত্রাণ কার্যক্রমে সমন্বয় নেই স্থানীয় প্রশাসনে

newsImg

এবারের বন্যায় জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতপোয়া, পোগলদিঘা ও পিংনা ইউনিয়ন। জানা গেছে, পুরো উপজেলায় মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে সাতপোয়ায় ৬০ হাজারের মধ্যে কমবেশি সবাই, পোগলদিঘায় ২৫ হাজার ও পিংনায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতি হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর, নষ্ট হয়েছে অসংখ্য ফসলি জমি। ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভাট। পানিতে এখনো ডুবে আছে বেশকিছু বাড়িঘর। বন্যার পানি নামতে শুরু করায় এখন দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। এসব মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় ছিল বেশকয়েকদিন। তবে বন্যার্তদের সবাই চাহিদা মোতাবেক ত্রাণ সহায়তা পায়নি। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সামান্য ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও বেশিরভাগ এলাকায় তা ঠিকমতো পৌঁছায়নি।

এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব একটা তৎপরতা নেই বললেই চলে। পুরো উপজেলায় বন্যায় যাবতীয় ক্ষয়-ক্ষতির সঠিক হিসাবও দিতে পারছেন না উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তারা। এমনকি বন্যাপীড়িত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কি পরিমাণ ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, কতটুকু প্রয়োজন তার সঠিক তথ্য নেই উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক উপসহকারী প্রকৌশলী মামুন হোসেন। স্থানীয়রা বলছেন, ত্রাণসহ অন্যান্য সহায়তার জন্য

উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত জমিজমারও সঠিক হিসেব দিতে পারেনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়।

সরজমিন-২ নম্বর পোগলদিঘা ইউনিয়নের টাকুরিয়া, বিন্নাফোর, মানিকপটল, চরগাছবয়ড়া, মালিপাড়া, গোবিন্দপটল, দামোদরপুর, সাতপোয়া ইউনিয়নের ঝালুপাড়া, চরসরিষাবাড়ী, বাঘমারা, চরশিশুয়া, ছাতারিয়া, চরআদ্রা, চরজামিরা, চররৌহা, এলাকা ঘুরে জানা গেছে বন্যার কবলে পড়ে তারা প্রায় নিঃশ্বেষের পথে। অনেকের বাড়িঘর ভেঙে গেছে, নষ্ট হয়েছে ফসলি ও আবাদী জমি। প্রবল বন্যায় অনেকের বাড়ির চাল পর্যন্ত পানি উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও সব এলাকায় তা ঠিকমতো পৌঁছায়নি। যারা পেয়েছেন, তারা মাত্র ৭ কেজি করে চাল পেয়েছেন ১ দফা। অথচ উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ১০-১৫ কেজি করে ৩ দফা চাল দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিল উদাসীনতা।

পোগলদিঘা ইউনিয়নসহ প্রায় সবকটি এলাকার কাঁচা ও পাকা রাস্তা সম্পূর্ণ ও আংশিক ভেঙে গেছে। এতে যাতায়াতের মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। বিন্নাফোর গ্রামের বাসিন্দা আঙ্গুরী বেগম, জরিনা, সাথী খাতুন, জহুরা আক্তার, মাজেদা বেগম, রাজিয়া বেগমসহ অনেকের অভিযোগ- বন্যায় রাস্তা সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়ায় আমাদের যাতায়াতের মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারে না। নৌকা বা কলাগাছের ভেলা দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে খুব কষ্টে। তাদের দাবি অনতিবিলম্বে বিন্নাফোর সড়কটি তৈরি করে দেয়া হোক।

বন্যার তোড়ে গাছবয়ড়া বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ওই এলাকার ৩ শতাধিক বাড়িঘর। পানি উঠেছে ঘরের চাল পর্যন্ত। প্রায় ১ সপ্তাহেরও বেশি সময় এ অবস্থা বিরাজ করে। বন্যার পানি নেমে গেলে স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসার চেষ্টায় তারা।

এদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। পানি নেমে যাওয়ায় উঁচু স্থান ও বাঁধের ওপর থেকে নিজ গন্তব্যে ফিরে যেতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। পানি নামলেও নতুন করে বিপত্তি বেধেছে কাঁদামাটি। নোংরা হয়ে গেছে ঘরবাড়ি। নিজের যা আছে বা অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার করে হলেও ঘর তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনছেন। স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়ে পরিবারের সবাই এ কাজে ব্যস্ত।

সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ এ জেড মোরসেদ আলী ভোরের কাগজকে জানান, মাত্র কয়েকদিন হলো আমি এই উপজেলায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বন্যার্তদের সাহায্যার্থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। বন্যাকবলিত সব তথ্য সংগ্রহের কাজও চলছে।

ইসলামপুর প্রতিনিধি মোরাদুজ্জামান জানান, ইসলামপুরে এবারের বন্যায় দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুকুরের মাছ, সবজিসহ নানা আবাদ, ব্রিজ কালভার্ট ও বিভিন্ন সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ১৬৬টি বিদ্যালয় পানিতে ডুবে গিয়েছিল। চেংঙ্গানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৩টি বিদ্যালয় রয়েছে নদী ভাঙনের মুখে। সংস্কারাধীন সড়কের কযেকটি ব্রিজ ও কালভার্টসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের প্রতিটি সড়কই ভেঙে গেছে। এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষক ও ভুক্তভোগীদের অনেক বেগ পেতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে বলিয়াদহ হতে মাহমুদপুর রাস্তা ও ইসলামপুর হতে ঝগড়ারচর জিসি রাস্তা, গোয়ালের চর রাস্তায় কার্পেটিং কাজ হচ্ছে এসব রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মোরাদাবাদ কুলকান্দি রাস্তায় ডাব্লিও পিএম কাজের অনেকআংশ ভেঙে নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। বামনা, ডেবরাইপ্যাঁচ সড়কের শিংভাঙাসহ উপজেলার ১৩টি বক্স কালভার্ট, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।