জেনে রাখুন

12-06-2016 01:02:10 AM

নারী কি চায় ? নারী কে বুঝা বড্ড দায়!!

newsImg

ম্যারি বোনাপার্টকে একবার ডক্টর সিগমান্ড ফ্রয়েড বলেছিলেন যে, “সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নটির উত্তর আজ পর্যন্ত দেয়া হয়নি, এবং নারীমন নিয়ে আমার ৩০ বছরের গবেষণার পরও যেই প্রশ্নের কোন উত্তর আমি খুঁজে পাইনি তা হলো 
“Was will das Weib?” -- ''নারী কি চায়?" 

প্রায় প্রতিটা পুরুষই এই প্রশ্নটির সাথে লুকিয়ে থাকা ডক্টর ফ্রয়েডের হতাশা জীবনে একবার হলেও খুব তীব্রভাবে অনুভব করেছে সেটা মনে হয় নিরাপদভাবেই ধরে নেয়া যায়। পুরো ইতিহাস জুড়েই পুরুষের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরবার উদাহরণ পাওয়া যায়, তার আগের কোন রেকর্ড না থাকলেও সে আমলেও যে এই প্রশ্ন পুরুষকে জর্জরিত করেছিল সে ব্যপারে অন্তত আমার নিজের কোন সন্দেহ নেই। এমনও কি হতে পারে যে হাজার বছর আগে গুহামানবদের গুহায় এঁকে যাওয়া চিত্রগুলো পরবর্তী বিভ্রান্ত গুহামানবদের “নারী কি চায়” সেটা ব্যাখ্যা করবারই একটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা ?? 

কি চায় নারী ? বিজ্ঞান অথবা মডার্ন সাইকোলজির বিশাল অগ্রগতির পরেও এই হাজার বছরের পুরোনো প্রশ্নটিই এখনো পুরুষকে বিভ্রান্ত করেই যাচ্ছে। বরং নারীজাগরণ এবং নারীমুক্তি আন্দোলন পরবর্তী সময়ে এই প্রশ্নের ভার যে পুরুষের জন্য আরো বেড়েছে সেটাও বলার অপেক্ষা রাখেনা। ফলাফল স্বরুপ এই যুগের নারী তার ব্যক্তিগত লক্ষ্য ও দর্শন নিয়ে যতটা স্পষ্ট, পুরুষেরা তাদের ব্যক্তিগত দর্শন, লক্ষ্য অথবা উদ্দেশ্য নিয়ে ততটাই পথভ্রষ্ট। নিজেরা কি চায় সেটাই তারা জানেনা, তাহলে নারী কি চায়- এই প্রশ্নের ভার তার কাছে কতটা হতে পারে আসুন একটু সহানুভূতির সাথে চিন্তা করে দেখি। কি চায় মেয়েরা ? জীবন-মৃত্যু নির্ভর করে এমন একটা প্রশ্ন এটা আমাদের পুরুষদের জন্য। তবে এমন কি হতে পারে যে এতদিন ধরে এই প্রশ্নের উত্তর আমরা ভুল জায়গাগুলোয় খুঁজে আসছি! হয়তবা এটা বিজ্ঞানের প্রশ্ন নয়, বরং প্রতিটা পুরুষেরই মনের গভীরে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি খুব যত্ন করে রাখা আছে। হয়তবা ব্যাংকের স্পেশাল ভল্টের মতই আমাদের মনস্তাত্ত্বিকের খুব বিশেষ কোন জায়গায় এই প্রশ্নটির উত্তর রাখা, যাকে আমরা ইন্টুইশন বলে জানি। হয়তবা ডক্টর ফ্রয়েডের থেকেও এ ব্যপারে বেশি যোগ্য ছিলেন প্রেমিক ক্যাসানোভা। হয়তবা আধুনিক বিজ্ঞানীদের চাইতেও এ ব্যপারে বেশি জ্ঞান ছিল আমাদের গুহামানব পূর্বপুরুষদের। হয়তোবা। 

একটু পেছনে ফিরে যাই। ইতিহাস ঘাটলেই পাওয়া যায় যে, পুরুষেরা সমাজে তাদের ভূমিকার ব্যপারে সবসময়ই বেশ স্পষ্ট ছিলো। আধুনিক সমাজের মত নিজের ভূমিকা নিয়ে তার এত বিভ্রান্তি বা সমাজের চাপিয়ে দেয়া রোল কোনটাই তখন ছিলো না। পুরুষকে তখন রক্ষাকর্তা, সংগ্রাহক/উপার্জনকারী এবং জনক এই তিনটি ভুমিকার মাঝেই থাকতে হতো।
“we will build and battle, we will sail and sing, and all for you, our darling girls।” 
তবে সে যুগ শেষ, ঐতিহ্যগতভাবে চলে আসা আমাদের এই ভূমিকাগুলো আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। এমন নয় যে এজন্য সমাজ বা নারীজাগরণ দ্বায়ী, বুদ্ধিমান পুরুষ মাত্রই কাউকে দোষারোপ না করে একে প্রকৃতির চাহিদা বলে মেনে নিবে, এবং এই প্রক্রিয়ায় স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। 

নারী পুরুষের মাঝে এযুগের নারীকে আর দুর্বলতম জন বলা চলবেনা। বরং হাজার বছরের শাসনের মাঝে থেকে সংগ্রাম করতে করতে সে আগের থেকে অনেক শক্ত, যোগ্য এবং মজবুত। সে নিজেকে রক্ষা করতে শিখেছে। এবং সে উপার্জন করে নিজে নিজে জীবনধারণেরও উপযোগী হয়েছে। আর জন্মদানের কথা যদি আসেই, তবে এটা বলা যায় যে, বিজ্ঞান এমন পর্যায়ে পৌছে গেছে যেখানে একটা পূর্ণ জননক্রিয়ার জন্য কিছুদিনের মধ্যেই হয়তবা পুরুষের আর প্রয়োজনও হবে না। আজকের পুরুষেরা বিভ্রান্ত হবে নাই বা কেন ? 

কি চায় নারী? কি চায় সে? চলুন, এই প্রশ্নটির উত্তর দেবার একটা চেষ্টা অন্তত করা যাক। আর যদি দিতেই হয় তবে তা কোন অনিশ্চিত অভিব্যক্তি কিংবা অস্পষ্টভাবে নয় বরং স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করেই দেয়া হোক। কমফোর্ট জোনের বাইরেই নাহয় যাওয়া যাক একটু। কেউ যদি ভুল প্রমাণ করতে পারে তবে করুক। অসংখ্য গবেষণা এবং মেয়েদের নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা নিজেদের মাঝে শেয়ারের পর আমাদের (বন্ধু এবং আমার) বদ্ধমূল ধারণা যে, প্রতিটা মেয়ের মনের গভীরে চাওয়া একটাই। “একটা প্রেমের গল্পের নায়িকা হতে চাওয়া।” এর থেকে সরল করে হয়ত এটা বলা সম্ভব নয়। 

মেয়েরা সেটাই চায় যা সে একদম ছোটবেলা থেকে চেয়ে আসছে। সে চায় তাকে নোটিস করা হোক, তাকে বন্দনা করা হোক, তাকে সুন্দর হিসাবে দেখা হোক আর তাকে ও তার নারীত্বের সৌন্দর্যকে সঠিকভাবে উদযাপন করা হোক। সে চায় একটা প্রেমের গল্পের নায়িকা হতে। 

আর এখানেই আসে পুরুষের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকাটি। হ্যাঁ, আজকের নারী অনেকাংশেই তাদের হাজার বছরের বন্দীদশার জন্য অবচেতনভাবে হলেও পুরুষকে দ্বায়ী মনে করে। হতে পারে আধুনিক মিডিয়া, কাগজপত্র, সাহিত্য এবং ম্যাগাজিনগুলোতে পুরুষের প্রতি সহানুভূতি একেবারে নেই বললেই চলে, হতে পারে আজকের যুগে যেখানে সমাজ নারীর প্রতি পুরুষের তুলনায় অনেক সহানুভূতিশীল, যেখানে পুরুষের ছোট্ট থেকে ছোট্টতর ভুলকে মাইক্রোস্কোপের নিচে নিয়ে পরীক্ষার পর স্যাম্পল হিসাবে রেখে দেয়া হয় এবং সেই একটা স্যাম্পলকে যখন পুরো পুরুষজাতির বিপক্ষেই একরকম বলে কয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে, তখনও, হ্যাঁ, তখনোও আমাদের এই পুরুষদের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি কেউ কেড়ে নিতে পারবেনা। এতকিছুর পরেও সুন্দরকে সত্যিকার অর্থে পূজা করতে অর্থাৎ নারীকে পূর্ণ মাত্রায় সেলিব্রেট করতে পারে একমাত্র পুরুষ। সমাজ, বিজ্ঞান যতই অগ্রসর হোক না কেন, নারী-পুরুষকে যতই মিক্সড মেসেজ দিক না কেন, প্রতিটা মেয়েই তার হৃদয়ের গভীরে একজন পূর্ণ নারী। আর এটা অসম্ভব সুন্দর একটা ব্যপার। যার অর্থ হলো, আমাদের পুরুষের অন্তত একটা ভুমিকা আছে যা সমাজ কোনভাবেই কেড়ে নিতে পারবেনা। 

ঠিক যেমন আমরা পুরুষেরা নারী ছাড়া বাঁচতে পারবো না তেমনিভাবে নারীও পুরুষকে ছাড়া থাকতে পারবেনা। একটা মেয়ে যতই স্বাধীন হোক না কেন, তার ভূমিকা সমাজে যাই হোক না কেন, যেভাবেই তাকে বড় করা হয়ে থাকুক না কেন, তার পরিবার-বন্ধুবান্ধব তাকে যাই বোঝাক না কেন, তাকে ও তার নারীত্বের সৌন্দর্যকে সত্যিকার অর্থে উদযাপন করবার জন্য তার দরকার একজন পুরুষ। আর একইভাবে পুরুষের সৌন্দর্য তথা সত্যের প্রতি সাধনাকে সত্যিকার অর্থে অনুপ্রাণিত করতে পারে একমাত্র নারীই। এখানেই লুকিয়ে আছে প্রকৃতির সবথেকে বড় রহস্যের সৌন্দর্য। 

একটু চিন্তা করে দেখুন খুব বড় মাপের কোন নারীর কথা, হয়তবা মাল্টিন্যাশ্নাল কোন কোম্পানির সিইও কিংবা খুব সফল কোন নারী উদ্যোক্তার কথা, অথবা ক্ষমতাশালী কোন নারী বা অনেক জ্ঞানী, বিজ্ঞ কিংবা স্বাধীনচেতা কোন নারীর কথা। এত কিছু থাকবার পরেও তাদের একান্ত একাকী মুহুর্তে তারা কেনই বা চোখের পানি ফেলে? কারণ তারা দুঃখী এবং তারা নিঃসঙ্গ এবং তারা খোদ ভালোবাসারই প্রেমে আক্রান্ত। এবং তার সেই একান্ত মুহুর্তে একবার তার দুঃখের কারণ জানতে চাইলে সে এটাই বলবে যে একটা পুরুষের সত্যিকারের ভালোবাসার জন্য তার সব সে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। আমি হয়তবা কিছুটা জেনারালাইজ করছি তবে অ্যাট লিস্ট আমার কাছে এটাই সত্য। 

আজকের পুরুষের সবথেকে বড় দুর্বলতা হলো তারা সফল ও শক্ত মনের নারীকে ভয় পায়। এবং এই একটামাত্র কারণে এসকল নারী-পুরুষের সম্পর্কগুলো নষ্ট হয়ে যায়। অথচ দুর্বল মনের পুরুষেরা নিজেদের দুর্বলতা চাপা দেবার জন্য বিভিন্নভাবে এই নারীদেরকেই উল্টো দোষারোপ করে থাকে, বুঝতে পারে না নিজের ইন্সিকিউরিটির একমাত্র কারণ তার পূর্ণ ও স্বাধীনভাবে ভালবাসতে পারার ব্যর্থতা। আর এজন্যই পুরো পৃথিবী জুড়ে আজ মেয়েদের মাঝে সত্যিকারের প্রেমিক পুরুষের জন্য হাহাকার খুবই স্পষ্ট। তারা এমন পুরুষ চায় যে ভালোবাসার শিল্পের একজন শিল্পী, যে সত্যিকারের প্রেমিক, যার ব্যক্তিত্বে আছে পৌরূষময় তেজ আর প্রেমিকময় কমনীয়তার সম্মেলন, যে একইসাথে একজন নারীর ভেতরে থাকা ছোট্ট মেয়েটিকে গাইড করতে সক্ষম আবার তার নারীত্বের সৌন্দর্যকে কোনরকম "হীনমন্যতা" ছাড়াই পূর্ণভাবে উপভোগ করতে সক্ষম, তার আরাধনা করতে সক্ষম। অর্থাৎ যে পুরুষ স্বাধীন, এবং মুক্তভাবে তার প্রেম দিয়ে যেতে সক্ষম। প্রতিটা নারীর ভেতরে থাকা পবিত্রতা, প্রচন্ড আবেগ আর আশ্চর্য হবার ক্ষমতা যে আরেকটাবার জাগিয়ে তুলতে সক্ষম সে সেই প্রেমিক। 

প্রতিটা মেয়ে তাই চায় যা সে সেই ছোট্টবেলা থেকে চেয়ে আসছে। সে চায় তাকে নোটিস করা হোক, তাকে বন্দনা করা হোক, তাকে সুন্দর হিসাবে দেখা হোক আর তাকে ও তার নারীত্বের সৌন্দর্যকে পূর্ণমাত্রায় উদযাপন করা হোক। সে চায় একটা প্রেমের গল্পের নায়িকা হতে...............আর প্রেমিক হতে চাইলে এই জ্ঞানটি পুরুষের জন্য আবশ্যক, একটি মেয়ের হৃদয় স্পর্শ করতে চাইলে তাকে বুঝতে হবে একটি মেয়ের হৃদয়ের জন্য রোমান্স ঠিক পানি আর বাতাসের মত, এটা ছাড়া তার বেঁচে থাকা অর্থহীন, পৃথিবীর আর কোন কিছু দিয়েই এই শুন্যস্থান পূরণ সম্ভব নয়। আর যে পুরুষ এটা জানে সে প্রেমিক। যে পুরুষ এটা জানে সে সত্যের পূজারী, সে সৌন্দর্যের উপাসক। যে পুরুষ এটা জানে তার আর কিছু না জানলেও হয়তবা চলে।