বানিজ্য

30-03-2016 09:37:16 AM

ফিলিপাইনের শুনানিতে আশা বাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের

newsImg

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির জন্য ৩৫টি পরামর্শ বা নিদের্শনা পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে ৩১টি নিদের্শনা ছিল ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) চারজনের হিসাবে অর্থ স্থানান্তরের। এ চারজনের নামে খোলা হিসাবেই পরবর্তী সময়ে রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানান্তর হয়। চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থের সরাসরি সুবিধাভোগী ছিল ওই চার ব্যক্তি। এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা।
ফিলিপাইনে বর্তমানে এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। সেখানে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রথমে জমা হয় দেশটির মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিটের আরসিবিসির চারটি হিসাবে। এ হিসাবগুলো খোলা হয় জেসি ক্রিস্টোফার ল্যাগরোসাস, মাইকেল ফ্রানসিসকো ক্রুজ, আলফ্রেড সান্তোস ভারগারা ও এনরিকো ভাসকেজের নামে।
চুরি হওয়া রিজার্ভের ওই অর্থ ফিরে পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে আবারও আশাবাদের কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র। গতকাল সাংবাদিকদের শুভঙ্কর সাহা বলেন, ফিলিপাইনের সিনেটের শুনানি দেখে আমরা আশাবাদী, সেখানে যাওয়া অর্থ ফেরত আনা যাবে। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সে দেশের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমঝোতা চুক্তি রয়েছে। আমরা চাইছি ফিলিপাইন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে অর্থ আদায় করবে। পরে এ অর্থ দেশে ফেরত আসবে।
এদিকে, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় তদন্তের আওতায় আনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক ল্যাপটপ জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার অনেক কর্মকর্তা তাঁদের ল্যাপটপ তথ্যপ্রযুক্তি বা আইটি অপারেশন ও কমিউনিকেশন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে জমা দেন। এর আগে গত সোমবার সব কর্মকর্তার দাপ্তরিক ল্যাপটপ ৩০ মার্চের মধ্যে উল্লেখিত বিভাগে জমা দেওয়ার জন্য দাপ্তরিক নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী, কর্মকর্তারা গতকাল থেকে তাঁদের ল্যাপটপ জমা দিতে শুরু করেছেন। আজ বুধবার ল্যাপটপ জমা দেওয়ার শেষ দিন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ল্যাপটপ জমা নেওয়ার পর সেগুলো নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি একটি বিশেষ নিরাপত্তা প্রোগ্রাম ইনস্টল বা স্থাপন করে সেগুলো আবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ জন্য সময় নেওয়া হচ্ছে প্রায় চার ঘণ্টা।
ল্যাপটপ জমা নেওয়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশেষ প্রোগ্রাম স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ও নানা ধরনের কানাঘুষা চলছে। একাধিক সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডির নির্দেশে সব কর্মকর্তার ল্যাপটপ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে সোমবার শুভঙ্কর সাহা প্রথম আলোকে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব ফরেনসিক তদন্তের প্রয়োজনে কর্মকর্তাদের ল্যাপটপ জমা নেওয়া হচ্ছে।
সোমবার দাপ্তরিক আদেশ জারির পর গতকাল দুপুরের পর থেকে কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বিতীয় সংলগ্নী ভবনের চতুর্থ তলার ডাটা সেন্টারের নেটওয়ার্ক মনিটরিং কক্ষে ল্যাপটপ জমা দিতে শুরু করেন। সেখানেই আইটি ও কমিউনিকেশন বিভাগের অধীনে ল্যাপটপগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত শতাধিক ল্যাপটপ জমা দেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তার কাছে দাপ্তরিকভাবে বরাদ্দ পাওয়া ল্যাপটপ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, অনেক সময় ল্যাপটপগুলো অফিসের পাশাপাশি কর্মকর্তারা বাইরেও ব্যবহার করে থাকেন। আমাদের যে সাইবার অ্যাটাকটি হয়েছে এতে ল্যাপটপে কোনো ঝুঁকি রয়েছে কি না এবং এগুলোতে পরবর্তী সময়ে ব্যবহারে কোনো অসুবিধা রয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত হতে ল্যাপটপগুলোই পরীক্ষা করা হচ্ছে।
ল্যাপটপ জমা নেওয়ায় কর্মকর্তাদের কাজে অসুবিধা হবে কি না জানতে চাইলে শুভংকর সাহা বলেন, সাময়িক একটু অসুবিধা তো হবেই। তবে নিরাপত্তার বিষয়টিকে এখন প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।