সম্পাদকীয়

31-07-2015 09:23:49 AM

‬ মুসলিম বিদ্বেষী ভারত‬!

newsImg

ভারতীয় সময় ৩০ জুলাই সকাল ৬-৩৫। ভারতের TADA আইনে মহারাষ্ট্রের নাগপুর জেলে ফাঁসি দেয়া হয় ইয়াকুব আবদুল রাজ্জাক মেমন নামে এক চার্টার্ড চাটার্ড একাউন্ট্যান্টকে। ১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ মুম্বাইয়ের ১২টি স্থানে ধারাবাহিক বোমা হামলার ঘটনায় ২৫৭ জনের প্রাণহানির জন্য দায়ী করা হয় মেমনকে। যেদিন ফাঁসি কার্যকর করা হয় সেটি ছিল মেমনের ৫৪তম জন্মদিন।
ভারতীয় চ্যানেল ২৪ ঘন্টা’য় লক্ষ করলাম, মেমনের ফাঁসি নিয়ে চরম বিতর্ক উঠেছে। বলা হচ্ছে, মুম্বাই বোমা বিস্ফোরনে মেমন জাড়িত ছিল না, বরং সেখানে জড়িত ছিল ইয়াকুবের ভাই টাইগার মেমন। টাইগারের দায়ভার ইয়াকুবের উপর চাপিয়ে দিয়ে প্রাণবধ করা ভারত সরকার! ইয়াকুব মেমনের এই অন্যায় মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদ করে টুইট করেছিলেন বলিউড অভিনেতা সালমান খান। সালমান আদালতের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, টাইগারের পরিবর্তে কেনো তার ভাইকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হল? এটা কোন ধরণের বিচার? একজনের অপরাধে অন্যজন কেন সাজা ভোগ করবে, এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন সালমান। সালমান তার টুইটারে লিখেন, টাইগারকে ধরে শাস্তি দাও, ইয়াকুবকে নয়। এরপরে ভারতীয় মৌলবাদীরা সালমানকে হুমকি দেয়, ফলে সালমান তার টুইট তুলে নেন।
কথা আরো আছে, মেমনকে ভারতে আনা হয় সাক্ষী করার জন্য। বি রমন নামে ভারতীয় RAW এর সাবেক এডিশনাল সেক্রেটারী মৃত্যুর আগে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়ে যান যে, ইয়াকুব মেমনকে পাকিস্তান থেকে ভারতে আনা হয় “রাজসাক্ষী” করার আশ্বাস দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাওয়ের সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তান ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার বি রমন মেমনকে আনার বিষয়টি ডিল করেছিলেন। ১৯ জুলাই ১৯৯৪ মেমন ভারতে এসে সারেন্ডার করে। অথচ সিবিআই গল্প ফাঁদে, তারা মেমনকে নেপাল থেকে আটক করে পুশ ব্যাকের মাধ্যমে দেশে এনে দিল্লিতে গ্রেফতার ৫ আগষ্ট ১৯৯৪। মোট কথা RAW এবং CBI গুতোগুতিতে রাজসাক্ষী মেনন হয়ে যায় ফাঁসির আসামী। সাক্ষী করার আশ্বাস দিয়ে কাউকে প্রানদন্ড দেয়া যায় কি না, এ বিতর্ক এখন ভারত জুড়ে। মেমন গত ২১ বছর ধরে কারাগারে বন্দী থেকে ৫৪তম জন্মদিনে ভারতের বিচার বিভাগের হাত নিজের প্রান সঁপে দেন। এর আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলেও মেমন কখনই দায় স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেননি। এই হচ্ছে মুসলমানের ঈমান।
এবার অসি অন্য প্রসঙ্গে। ২৯ শে সেপ্টেম্বর ২০০৮ এবং ৮ই সেপ্টেম্বর ২০০৬ ভারতের মালেগাঁও মসজিদে সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় ৫০ জন মুসল্লি । ২০০৭ সালের ১৮ মে হায়দ্রাবাদের মক্কা মসজিদে জুমার নামাজের সময় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৯ জন মুসল্লী হত্যা করা হয়। ওই বছর ১১ অক্টোবর আজমীর শরীফে খাজা মইনুদ্দিন চিশতীর মাজারে বোমা বিস্ফোরণে ৩ জন হত্যা করা হয়। ২০০৭ সালে সমঝোতা এক্সপ্রেসে বোমা হামলা করে প্রায় ৬৮ জন যাত্রী হত্যা করা হয়। প্রতিটি ঘটনার মূল নায়ক ছিল ভারতের হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ (RSS) এর সক্রিয় কর্মী স্বামী অসীমানন্দ।
গত ১৮ ডিসেম্বর তিস হাজারি আদালতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দীপক দাবাসের কাছে ফৌজদারি দন্ডবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারক্তিমূলক জবানবন্দি দেন অসীমানন্দ। তিনি আরএসএস ও অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বর্ননা দিয়েছেন। অসীমানন্দ স্পষ্টভাবেই জানায়, তারাই আজমির শরীফ, মক্কা মসজিদ, মালেগাঁও ও সমঝোতা এক্সপ্রেসে হামলা চালিয়েছিলো। সে বলে, ‘বোমার বিনিময়ে বোমা’ নীতি অনুসরণ করে সে এ হামলা চালিয়েছিলো। ৪২ পৃষ্ঠার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে সে বলে, সন্ত্রাসী কার্যকলাপে আরএসএস নেতা ইন্দ্রেস কুমার, সুনীল যোশি, প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরসহ অনেক নেতাই জড়িত। অসীমানন্দ বলে, মালেগাঁওয়ের ৮০ শতাংশ মানুষ মুসলমান হওয়ায় আমরা সেখানেই বিস্ফোরণ ঘটানোর (২০০৬ ও ২০০৮) পরিকল্পনা করি। হিন্দুরা যেহেতু আজমির শরীফে যায়, তাই আমি ভেবেছিলাম আজমীরে বিস্ফোরণ (২০০৭) ঘটানো হলে হিন্দুরা সেখানে যেতে ভয় পাবে। মক্কা মসজিদে হামলা (২০০৭) চালানোর কারণ হিসেবে সে বলে, হায়দরাবাদের নিজাম ভারতবর্ষ বিভক্তিকালে পাকিস্তানের সাথে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। সমঝোতা এক্সপ্রেসে হামলা (২০০৭) চালানো প্রসঙ্গে সে বলে, যেহেতু এই ট্রেনটি প্রধানত পাকিস্তানিরা ব্যবহার করে। স্বামী অসীমানন্দের এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর আগে ঐ সব হামলার দায়ে কোনো প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য মুসলিম তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং এমনকি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দাখিল করা হয়েছে। অথচ অসংখ্য প্রতিবেদনে প্রকাশিত হচ্ছিল মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশের পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবেই হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলোকে সন্দেহের তালিকার বাইরে রাখছিল। সঠিকভাবে তদন্তকাজ চালানো হলে অনেক রহস্যের সমাধান হয়ে যেত বহু আগেই। অথচ তা না করে হায়দারাবাদ পুলিশ অন্তত ৭০ জন মুসলিম তরুণকে গ্রেফতার করে তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নিয়েছিল। ইসলামী সন্ত্রাসবাদ দমনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, আটকে রেখে স্বীকারোক্তি আদায়, নারকো টেস্ট ইত্যাদি সব কিছুই চালায় ভারত সরকার।
ভারতের মধ্যে বিভিন্ন জঙ্গীবাদী হামলার সঠিক তদন্ত করলে দেখা যাবে হামলা চালিয়েছে আরএসএস, অথচ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মুসলিম যুবকদের উপর চালিয়েছে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে রাষ্ট্রীয় শক্তি। সন্দেহাতীত ভাবে প্রমান না হলেও ফাঁসি দেয় ইয়াকুব মেমন, কাশ্মীরের প্রখ্যাত আলেম ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব আফজাল গুরু, মকবুল বাটদের। কারন তারা মুসলমান। শত শত খুনের দায় নিয়ে অসীমানন্দ এখনও জীবিত, হয়ত তাকেও একদিন দেখা যাবে মুক্ত বাতাসে। RSS-এর আরেক সেবক নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের দাঙ্গায় ৩০০০ মুসলমানের রক্তে হাত রাঙ্গিয়ে হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
তারপরও বলে...................মেরা ভারত মহান হ্যায়!

 Qamrul Islam