10-02-2018 12:57:47 PM

মৃত্যু পুলিশের গুলিতে, আসামি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা

newsImg

রূপগঞ্জে সংঘর্ষকালে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত একজন

 

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে ছররা গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী সুমন নিহত হলেও এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। তাঁদের মধ্যে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিককে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। মামলাটিকে মিথ্যা দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

গত বৃহস্পতিবার রাতে নিহত সুমন মিয়ার শাশুড়ি কাজল রেখা বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলাটি করেন। আসামিদের দাবি, ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর ইশারায় এ মামলা করা হয়েছে।

এদিকে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া সুমনের মৃত্যু নিয়েও রহস্য রয়েছে। পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর সুমনকে হাসপাতালে নিতে দেরি করা হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহত অবস্থায় সুমনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সুমনের মা-বাবা থাকতে তাঁর শাশুড়িকে বাদী করে মামলা করায় মামলাটির রহস্য ঘনীভূত হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার হাবিবনগর এলাকার কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কে অবস্থান নেওয়া এমপি সমর্থিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ও পুলিশের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়লে নেতাকর্মীরা ছোটাছুটি করে। অনেকে কাঞ্চন ব্রিজের ওপর থেকে নামতে গিয়ে লাফ দেয় বলে জানা যায়। এ ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সুমন মিয়াকে আহত অবস্থায় প্রথমে রূপগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে অবস্থা খারাপ দেখে তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। 

বর্তমানে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। এমপি গাজীর অনিয়ম-দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৮০ শতাংশ নেতাকর্মী তাঁর বিপক্ষে রয়েছে। দলীয় কর্মসূচিও তাঁরা আলাদাভাবে করে থাকেন। গাজীর বিরোধীপক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া ও কায়েতপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক। সুমন নিহতের ঘটনায় স্থানীয় এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর নির্দেশে নিহত সুমনের বাবা মনু মিয়া ও মা শাহিদা বেগম মিথ্যা মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তাঁদের বাদী না করে ষড়যন্ত্র করে নিহত সুমনের শাশুড়ি উপজেলার দড়িকান্দি এলাকায় কাজল রেখাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বাদী করে বৃহস্পতিবার রাতে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহতের শরীরে বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। মূলত রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে স্থানীয় এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী প্রতিহিংসাবশত কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিক ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন।

এ ঘটনায় রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মো. শাহজাহান ভুঁইয়া বলেন, ঘটনার দিন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম স্পটেই ছিলেন না। সুতরাং তাঁর গানম্যানও স্পটে যাননি। রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এমপি গাজী চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানির চেষ্টা করছেন।

রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল বাশার টুকু বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে এমপি গাজী সমর্থিতদের সংঘর্ষ হয়। এতে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিককে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। আমরা রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানাই।’