রাজধানী

16-01-2018 01:51:41 PM

জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের শুভ সূচনা

newsImg

প্রথম ওভারেই বল হাতে সাকিব আল হাসান। প্রথম তিন বলেই উইকেট দুটি! কুয়াশার চাদর সরিয়ে সূর্যের আলোয় যেমন ক্রমে আলোকিত হলো মিরপুর, ইনিংসজুড়ে আলো ছড়িয়ে গেলেন বাংলাদেশের বোলাররাও। পরে ব্যাটিং দু্যতিতে ঝলমলে উজ্জ্বল তামিম ইকবাল। ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের যাত্রা শুরম্ন হলো জয় দিয়ে।
ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে আট উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার দারম্নণ বোলিংয়ে জিম্বাবুয়েকে ১৭০ রানেই বেঁধে ফেলে টাইগাররা। রান তাড়ায় জিতে যায় ২৮.৩ ওভারেই।
বল হাতে তিন উইকেট নেয়ার পর সাকিব অবদান রেখেছেন ব্যাটেও। দুর্দান্ত্ম অপরাজিত ইনিংসে তামিম দলের জয় নিয়ে ফিরেছেন পরম নির্ভরতায়।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ব্যাটে-বলে লড়াই করেছেন সিকান্দার রাজা। পাশে পাননি খুব বেশি সতীর্থকে। ম্যাচও তাই হয়েছে একতরফা।
জিম্বাবুয়ের জন্য মন্থর উইকেটের পরিকল্পনা বেশ আগেই করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে পড়ল সেই পরিকল্পনারই প্রতিফলন। উইকেটে বল এসেছে ধীরে, শট খেলা খুব সহজ ছিল না। সেটি কাজে লাগান বাংলাদেশের বোলাররা।
পরের ইনিংসে উইকেট একটু ভালো হয়ে ওঠে ব্যাটিংয়ের জন্য। বাংলাদেশকে জিততে বেগ পেতে হয়নি একটুও।
টসের সময়ও কুয়াশা কাটেনি পুরোপুরি। টস জিতে অনুমিতভাবেই মাশরাফি বিন মুর্তজা বেছে নেন বোলিং। কন্ডিশন তখন পেস-সহায়ক। তবে মাশরাফি শুরম্ন করলেন স্পিন দিয়ে।
এতে চমকে গেল হয়ত জিম্বাবুয়েও। সাকিবের করা ম্যাচের প্রথম বলটিই ঠিকমত খেলতে পারেননি হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। রান মেলে তবু একটি। পরের বলেই উইকেট। ওয়াইড বলে স্টাম্পড বিপজ্জনক সলোমন মিরে। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে দারম্নণ ক্ষিপ্রতায় কাজ সেরেছেন কিপার মুশফিকুর রহিম।
এই উইকেটের হাত ধরে এক বল পরই আরও বড় উইকেট। স্পিনে এই দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বলেই শুধু নয়, বাংলাদেশের দুই বাঁহাতি স্পিনারকে সামলাতেও বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ক্রেইগ আরভিনের উইকেটে থাকা ছিল জরম্নরি। কিন্তু ম্যাচের তৃতীয় বলেই আরভিনকে ফেরান সাকিব।
জিম্বাবুয়ে তাকিয়ে ছিল সবচেয়ে বড় ভরসা মাসাকাদজা ও আবার জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে ফেরা ব্রেন্ডন টেইলরের দিকে। কিছুটা আশা জাগিয়েও ছিলেন দুইজন। কিন্তু দুইজনই ফিরেছেন বাজে শটে।
মাসাকাদজার শট ছিল বেশি দৃষ্টিকটু। মাশরাফির অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে আরও বেরিয়ে যাওয়া বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে কট বিহাইন্ড।
টেইলরকে ফিরিয়েছেন মুস্ত্মাফিজ। বাঁহাতি পেসার যদিও বেশি ভুগিয়েছেন সিকান্দার রাজাকে। খেলতেই পারছিলেন না রাজা, আউট হতে হতে বেঁচেছেন বারবার। কিন্তু রাজা টিকে গেলেন, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন তুলনামূলক ভালো খেলতে থাকা টেইলর (২৪)।
দুইবার জীবন পাওয়া ম্যালকম ওয়ালারকে ফিরিয়েছেন সানজামুল ইসলাম। এরপর রাজার লড়াই। সঙ্গী পেয়েছিলেন পিটার মুরকে। ইনিংসের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটি গড়েছেন এই দুইজন।
জুটি থেমেছে অবশ্য ৫০ রানেই। রাজার লড়াই শেষ হয়েছে রান আউটে। দুটি করে চার ও ছক্কার পরও রাজার ৫২ রানে লেগেছে ৯৯ বল।
আক্রমণে ফিরে সাকিব তৃতীয় শিকার ধরেছেন গ্রায়েম ক্রিমারকে ফিরিয়ে। জিম্বাবুয়ে অধিনায়কের ক্যাচ নেয়া রম্নবেল এরপর ছোবল দিয়েছেন বল হাতে। পরপর দুই বলে বোল্ড করেছেন জিম্বাবুয়ের শেষ ভরসা পিটার মুর ও তেন্দাই চাতারাকে। অভিষিক্ত বেস্নজিং মুজারাবানিকে ফিরিয়ে ইনিংসের ইতি টেনেছেন মুস্ত্মাফিজ।
পছন্দের উইকেট পেয়ে এদিন মুস্ত্মাফিজ ছিলেন দুর্দান্ত্ম। উইকেট পেয়েছেন দুটি, ভাগ্য পাশে থাকলে সেটা অনায়াসেই হতে পারত ৪-৫টি। দুই বাঁহাতি স্পিনার খেলানোর যৌক্তিকতা প্রমাণ করে দারম্নণ বোলিং করেছেন সানজামুল। সাকিব-মাশরাফি বরাবরের মতোই দুর্দান্ত্ম। নিজের কাজটা করেছেন রম্নবেলও।
বোলারদের গড়ে দেয়া ভিতের ওপর জয়ের সৌধ গড়েছেন ব্যাটসম্যানরা। প্রায় তিন বছর পর জাতীয় দলে ফেরা এনামুল হকের ব্যাটে ছিল বদলের ছায়া।
তার প্রতি দলের বার্তা ছিল, দলের জন্য খেলা। ফেরার ম্যাচে সেই চেষ্টার প্রতিফলন ছিল এনামুলের ব্যাটে। আউট হয়ে গেছেন অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই। তবে তার ১৪ বলে ১৯ রানের ইনিংসটি শুরম্নতেই দমিয়ে দেয় জিম্বাবুয়ের লড়াইয়ের আশা।
প্রতিপক্ষের আশা আরও শেষ হয় যায় পরের জুটিতেই। তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ৭৮ রানের জুটি।
তিনে নামা সাকিবের ব্যাটিং ছিল পজিশনের সঙ্গে মানানসই। দারম্নণ কিছু শটের পাশাপাশি লম্বা করতে চেয়েছেন ইনিংস। সম্ভাবনাময় ইনিংসটি শেষ হয়েছে ৪৬ বলে ৩৭ রানে।
সেটিই শেষ। তামিম ও মুশফিক এরপর দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের ঠিকানায়। শুরম্ন থেকেই তামিমের ব্যাট ছিল আস্থার প্রতিমূর্তি। একটি মুহূর্তের জন্যও হারাননি নিয়ন্ত্রণ। মাঠ ছেড়েছেন ৯৩ বলে অপরাজিত ৮৪ রান করে। ৬৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মুশফিকের অবদান ছিল ১৪।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ, বছরের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের শুরম্ন প্রায় পরিপূর্ণ এক পারফরম্যান্সে। সামনে এগিয়ে চলায় যে জয় হতে পারে, আত্মবিশ্বাসের দারম্নণ জ্বালানি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
জিম্বাবুয়ে : ৪৯ ওভারে ১৭০ (মাসাকাদজা ১৫, মিরে ০, আরভিন ০, টেইলর ২৪, রাজা ৫২, ওয়ালার ১৩, মুর ৩৩, ক্রিমার ১২, জার্ভিস ৪*, চাতারা ০, মুজারাবানি ১; সাকিব ৩/৪৩, সানজামুল ১/২৯, মাশরাফি ১/২৫, মুস্ত্মাফিজ ২/২৯, রম্নবেল ২/২৪, নাসির ০/১৫)।
বাংলাদেশ : ২৮.৩ ওভারে ১৭১/২ (তামিম ৮৪*, এনামুল ১৯, সাকিব ৩৭, মুশফিক ১৪*; জার্ভিস ০/১৫, চাতারা ০/২৬, রাজা ২/৫৩, মুজারাবানি ০/৩১, ক্রিমার ০/৪৬)।
ফল : বাংলাদেশ আট উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সাকিব আল হাসান