16-01-2018 11:15:22 AM

সিদ্ধান্ত ছাড়াই মুলতবি নেপিডোর সঙ্গে বৈঠক

newsImg

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গতকাল সোমবার নেপিডোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই মুলতবি করা হয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের মধ্যেই দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের নেতৃত্বে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডাব্লিউজি) ওই বৈঠকে প্রত্যাবাসনের জন্য মাঠপর্যায়ের ব্যবস্থা সম্পর্কিত ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ বিষয়ে আলোচনা হয়। কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, আজ মঙ্গলবার আবারও বৈঠক হবে। বাংলাদেশ আগামী ২২ জানুয়ারির মধ্যেই প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। কিন্তু মিয়ানমার একতরফাভাবে প্রথম ধাপে ৪৫০ জন হিন্দু রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করার ঘোষণা দেওয়ায় জটিলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় পরিচয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করার বিরোধী। ধর্মীয় পরিচয়ে প্রত্যাবাসন হলে এটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে একটি অন্য বার্তা দিতে পারে। এ ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে গত ২৩ নভেম্বর সই হওয়া প্রত্যাবাসন চুক্তি এবং গত কয়েক মাসের বৈঠকগুলোতে কোথাও আলাদা করে ধর্মীয় পরিচয়ে প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়নি।

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সামনে রেখে মিয়ানমার সরকার যে পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের রাখাইনে নিজ বসতভূমি বা তার কাছাকাছি কোনো স্থানে ঠাঁই পাওয়ার আগে অন্তত দুই দফা অস্থায়ী শিবিরে থাকতে হবে।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাখাইন রাজ্যে এমন একটি অস্থায়ী শিবির নির্মাণ করছে যেখানে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার ঠাঁই হবে। মিয়ানমারের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর রাখাইনের হ্লা পো খুয়াংয়ের একটি শিবিরে প্রত্যাবাসনের জন্য বিবেচিত লোকদের অস্থায়ীভাবে রাখা হবে। ১২৪ একরের ওই শিবিরে ৬২৫টি ভবনে প্রায় ৩০ হাজার লোক থাকতে পারবে। এ মাসের মধ্যে ১০০ ভবন নির্মাণকাজ শেষ হবে।

মিয়ানমারের মানবিক সহায়তাবিষয়ক দপ্তরের প্রধান সমন্বয়ক অং তুন থেট বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ বসতবাড়ি বা তার কাছাকাছি কোনো স্থানে পাঠানোর আগে হ্লা পো খুয়াংয়ের শিবিরটিতে অস্থায়ীভাবে রাখা হবে। বাংলাদেশ থেকে যারা ফিরতে চায় তাদের সবাইকেই মিয়ানমার গ্রহণ করতে চায়। রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা হিসেবে প্রাথমিকভাবে যাচাই হওয়া ব্যক্তিদের প্রথমে নেওয়া হবে তংপিয়োলেতওয়েই বা নাখুইয়া শিবিরে। এরপর সেখানে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে হ্লা পো খুয়াংয়ে নিয়ে আবার আরেক দফা যাচাই করা হবে। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক স্থায়ী সচিব সোয়ে অং বলেছেন, ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের বাড়ি নির্মাণের আগে এক বা দুই মাস হ্লা পো খুয়াংয়ের শিবিরে থাকতে হবে।

২০১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় সাত লাখ ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের কথা বিবেচনা করছে ঢাকা ও নেপিডো। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত কতজন মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। একদিকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আবার অন্যদিকে ফেরার জন্য তাদের প্রমাণ করতে হবে যে তারা রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা ছিল। এই যাচাই শেষে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পর তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পাবে না। তাদের প্রমাণ করতে হবে যে তাদের পূর্বপুরুষরা মিয়ানমারের বাসিন্দা ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ প্রথম ধাপে এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সেই তালিকা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই করে সম্মতি সাপেক্ষে তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেবে।