08-01-2018 10:35:42 AM

শৈত্যপ্রবাহ আরো দুই দিন

newsImg

তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে দেশ। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল রবিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে, ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতজনিত কারণে গতকাল দিনাজপুর ও নওগাঁয় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি এই শৈত্যপ্রবাহ আরো অন্তত দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।

শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষ। দেশের কোথাও কোথাও দিনভর সূর্যের দেখা মিলছে না। দিনের বেলায়ও যানবাহন চলছে বাতি জ্বালিয়ে। দেখা দিচ্ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগবালাই। কাজ করতে না পেরে দিনমজুর অনেক পরিবারই খাবারের জন্য কষ্ট ভোগ করছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, সিলেটের শ্রীমঙ্গল ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের অবশিষ্ট অংশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহ মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের। এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

সারা দেশের শীত নিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত—

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গতকাল জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা শনিবার ছিল ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর শুক্রবার ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৪৮ সালের পর ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।তীব্র শীতে মাঠে কাজ করতে গিয়ে জেলার ঘোড়াঘাটে কৃষি শ্রমিক নুরুল মিয়ার (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। অবস্থা বিবেচনায় জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জরুরি ভিত্তিতে এক লাখ কম্বল চেয়ে পাঠিয়েছে।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। আবহাওয়া অফিস বলছে, এ রকম তাপমাত্রা আরো চার-পাঁচ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এদিকে দুপুরে জমিতে কাজ করার সময় ঠাণ্ডায় আব্দুল জলিল (৬৫) নামের এক কৃষি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি জেলার রানীনগর উপজেলার সিম্বা গ্রামের বাসিন্দা।

রাজশাহী অফিস জানায়, আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, জেলায় চলতি বছরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল রেকর্ড করা হয় ৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা শনিবার ছিল ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহজুড়েই এ রকম ঠাণ্ডা থাকতে পারে। এদিকে তীব্র শীতে পর্যুদস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠী সরকারের কাছে গরম কাপড় তথা কম্বলের জন্য আবেদন জানিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাঁচ দিন ধরে তাপমাত্রা ক্রমেই নিচের দিকে নামছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো বীজতলা, আলুসহ বিভিন্ন ফসল। এদিকে গরম কাপড়ের অভাবে হতদরিদ্র ছিন্নমূল মানুষ কষ্ট করছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় ৪২০টি চরের মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে তীব্র শীতে কষ্ট করছে। তীব্র শীতে দিনমজুররা কাজে যেতে পারছে না।রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, রৌমারীতে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগ দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে এ রোগে আক্রান্ত অন্তত ২৫ শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। গতকালও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ শিশু চিকিৎসাধীন ছিল।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, জেলায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনভর কোথাও সূর্যের দেখা মেলেনি। জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের প্রমিলা বালা রায় বলেন, ‘ঠাণ্ডাত হামার গরিব মাইনষির খুব কষ্ট বাহে। কাম করির পারেছি না, খাবার জুটেছে না। তার উপর শীতের কাপড় কিনিমো কী দিয়া!’রংপুর অফিস জানায়, রংপুরের মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা আরো কমতে পারে।

মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরে শীতের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাত ১০টার পর ঘন কুয়াশায় পদ্মা নদী ঝাপসা হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় মাঝনদীতে নৌযানগুলোকে নোঙর করতে হয়। এতে যাত্রী সাধারণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এদিকে জেলা প্রশাসন জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য ইতিমধ্যে ৫০ হাজার পিস কম্বল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে।

ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠিতে কুয়াশার কারণে দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। নৌপরিবহন চলছে ধীরগতিতে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে পথঘাট জনশূন্য হয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড শীতে দিনমজুররা কাজে যোগ দিতে পারছে না। বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাই।