07-01-2018 11:48:31 AM

শীতে জবুথবু দেশ বাড়ছে রোগবালাই ঘটছে মৃত্যুও ► কনকনে ঠাণ্ডায় কাবু উত্তরাঞ্চল ► শৈত্যপ্রবাহ থাকবে সপ্তাহজুড়ে

newsImg

এদিকে শীতকষ্টের সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা রোগব্যাধি। ঠাণ্ডা থেকে সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি ছাপিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ নানা ধরনের শ্বাসতন্ত্রের রোগ। শীতে হৃদরোগীদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন আরো কিছু রোগ, আছে মৌসুমি রোগের ভোগান্তি। রাজধানীসহ জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। অন্য বয়সীদের তুলনায় বেশি বিপদে পড়েছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুম সূত্র জানা যায়, এবার শীতে ঢাকার বাইরের মাত্র চার-পাঁচটি এলাকায়ই গত শুক্রবার পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়েছে সাত হাজার ৯১৩ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। অন্যদিকে ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ১৬ হাজার ২৯০ জন। এর মধ্যে মারা গেছে একজন। ফলে শিশু ও বয়স্কদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

গতকাল রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসগুলো বলছে, চলতি সপ্তাহজুড়েই এ রকম শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে। তাপমাত্রা আরো কমতে পারে। একই সঙ্গে ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইবে উত্তরের হিমেল হাওয়া। বিস্তারিত আমাদের আঞ্চলিক অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে—

বাড়ছে শীতজনিত রোগ, ঘটছে মৃত্যু : গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া কনকনে শীতের সঙ্গে ঝিরঝিরে বাতাসের প্রভাবে দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে নানা রোগের প্রকোপ। দেশের অন্যান্য এলাকার মতো ঢাকায়ও মৌসুমি রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ শীত বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সহজে মানুষকে কাবু করে ফেলে। এ ক্ষেত্রে সর্দি, ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রংকাইটিস, ব্রংকিওলাইটিস, মধ্যকর্ণের প্রদাহ, সাইনাসের প্রদাহ, ক্রুপ, নিউমোনিয়া, চিলব্লেইন্স, ঠোঁট ফেটে যাওয়া, সিজনাল এফেক্টিভ ডিজঅর্ডার ইত্যাদি রোগ বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া হৃদরোগীর ক্ষেত্রে বেশি ঠাণ্ডা অনেক সময় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি তথ্যে কেবল কয়েকটি জেলার কয়েক হাজার মানুষের আক্রান্ত হওয়ার হিসাব পাওয়া গেলেও বেসরকারি বিভিন্ন খবরের এই সংখ্যা আরো কয়েক গুণ বেশি বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এই মুহূতে আমার সামনে যে কজন রোগী আছেন তাঁরা সবাই ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এখানে এসেছেন। এ সময় যেকোনো বয়সের মানুষের ঠাণ্ডাজনিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে বয়স্ক ও শিশুদের ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে বায়ুবাহিত জীবাণুর সংক্রমণে রোগের প্রকোপ বেশি থাকে। এতে নিউমোনিয়া, হাঁপানি ও সিওপিডির রোগী সবচেয়ে বেশি পাচ্ছি। ডেঙ্গুরও প্রকোপ শীতে বাড়ছে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শীতজনিত রোগে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সতর্কতা প্রচার করা হচ্ছে। এ সময় রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য ঠাণ্ডা অনুসারে গরম কাপড় ব্যবহার, যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা পরিবেশ, খাবার এবং  ধুলাবালি এড়িয়ে চলা জরুরি। এ মৌসুমে নিপাহ ভাইরাসসহ আরো কিছু মৌসুমি জীবাণু বা ভাইরাসের উদ্ভব হয়ে থাকে। ফলে এসব ব্যাপারেও সচেতন থাকা জরুরি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুম সূত্র জানায়, এবার শীতে ঢাকার বাইরের মাত্র চার-পাঁচটি এলাকায়ই গত শুক্রবার পযর্ন্ত শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়েছে সাত হাজার ৯১৩ জন এবং মৃত্যু ঘটেছে পাঁচজনের। অন্যদিকে ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ১৬ হাজার ২৯০ জন আর মারা গেছে একজন। এ ছাড়া শীতকালীন অন্যান্য রোগে আরো ১৫ হাজার ৪০৬ জন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য মাঠপর্যায় থেকে ওই তথ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তবে সারা দেশ থেকে নিয়মিত তথ্য পাঠানো না হওয়ায় সব চিত্র ওই কেন্দ্রে আসে না বলেও জানানো হয়।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, কয়েক দিন ধরে শীতের কবলে প্রচুরসংখ্যক শিশুর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটছে। শিশুদের ব্যাপারে অভিভাবকদের অধিকতর সতর্ক থাকা প্রয়োজন। প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের নিয়ে ঠাণ্ডায় বের না হওয়াই ভালো।

কনকনে শীতে কাবু উত্তরাঞ্চল : রংপুরের পাঁচ জেলায় প্রায় ১২ লাখ মানুষ শীতকাতর হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রামে জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড শীতে কাজে বের হতে না পেরে কষ্টে আছে খেটে খাওয়া মানুষ। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলে শীতবস্ত্রের অভাবে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছে মানুষ।

শীতে কাঁপছে রাজশাহী। বিশেষ করে তীব্র শীতে খেটে খাওয়া মানুষ ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। নীলফামারীতে শীতবস্ত্রের অভাবে বিপাকে পড়েছে জেলার খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ।  বেড়েছে শীতজনিত রোগ-বালাই, এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় নিউমোনিয়া, হাঁপানি ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গতকাল শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৫৮ জন শিশু ও বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। নওগাঁয় শীতজনিত রোগ সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। গতকাল নওগাঁ সদর হাসপাতালে কমপক্ষে ৫০-৬০ জন শিশু ভর্তি হয়েছে।