অর্থনীতি

27-12-2017 01:02:00 PM

ভোজ্যতেল রপ্তানির অনুমতি!

newsImg

দেশের ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবেশী তিনটি দেশে পরিশোধিত ভোজ্যতেল রপ্তানি করতে চায়। বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ভোজ্যতেল রপ্তানির সম্ভাবনা দেখছে তারা। কোম্পানিগুলো বলছে, ভারত সরকার সম্প্রতি ভোজ্যতেল আমদানিতে কর বাড়িয়েছে। কিন্তু ওই দেশে শুল্কমুক্তভাবে তেল রপ্তানির সুযোগ থাকায় মূল্য প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে মেঘনা গ্রুপকে ২০ হাজার টন ভোজ্যতেল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং নেপাল ও ভুটানে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এরপর সিটি গ্রুপ ২৫ হাজার টন রপ্তানির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে, যা বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) সুপারিশের অপেক্ষায় আছে।

রপ্তানি নীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন ও পাম তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ। দেশে সরবরাহ ঠিক রাখতে এ বিধান করেছে সরকার। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাইলে রপ্তানির অনুমোদন দিতে পারে। এ খাতের উদ্যোক্তারা জানান, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একবার ভোজ্যতেল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

মেঘনা গ্রুপকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেল রপ্তানির অনুমতি দেয় গত ৩ অক্টোবর। এ অনুমতির সঙ্গে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। সেগুলো হলো রপ্তানি শেষে এ-সংক্রান্ত তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে রপ্তানি শেষ করতে হবে।

সিটি গ্রুপ আবেদনটি করেছে তাদের একটি প্রতিষ্ঠান দীপা ফুড প্রডাক্টসের নামে। আবেদনের পর গত ১৬ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মতামত চেয়ে ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি দেয়। সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেঘনা গ্রুপকে ট্যারিফ কমিশনের মতামত ছাড়াই রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের ক্ষেত্রে কেন মতামত চাওয়া হচ্ছে?’

সরকার ও ব্যবসায়ীদের হিসাবে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন সয়াবিন ও পাম তেলের চাহিদা আছে। এ চাহিদার প্রায় পুরোটা পূরণ করা হয় আমদানির মাধ্যমে। দেশের বড় বড় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী বিদেশ থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল এনে পরিশোধন করে। তাদের পরিশোধন ক্ষমতা প্রায় ৩০ লাখ টন, যা দেশের মোট চাহিদার দ্বিগুণ। ভোজ্যতেলের বাজারে মূল অংশীদার এখন সিটি গ্রুপ, মেঘনা, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, টিকে গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপ।

রপ্তানির সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের বিশ্বজিৎ সাহা আরও বলেন, ‘ভারত ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক দ্বিগুণ করেছে। এ কারণেই আমাদের সামনে রপ্তানির সুযোগটি তৈরি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিতে শুল্ক দিতে হয় না।’ ভারতের ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশি ভোজ্যতেল প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা পারব।’

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়, ১৬ নভেম্বর ভারত সরকার অপরিশোধিত পাম তেল আমদানিতে শুল্কহার দ্বিগুণ করায় তা বেড়ে ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পরিশোধিত পাম তেলের শুল্ক ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের আমদানি শুল্ক সাড়ে ১৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ এবং পরিশোধিত সয়াবিন তেলের শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। রয়টার্স বলছে, ভারত ভোজ্যতেলের চাহিদার ৭০ শতাংশ মেটায় আমদানি করে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তাদের আমদানির পরিমাণ ১ কোটি ৫৫ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যসচিব গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পরিশোধন ক্ষমতা দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি হলে রপ্তানির অনুমতি দিতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু রপ্তানির কারণে দেশে যাতে সরবরাহ বিঘ্নিত না হয় এবং দাম অস্বাভাবিক বেড়ে না যায়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।