বিরোদী দল

11-12-2017 12:56:20 PM

রাজত্ব ধরে রাখতে চায় আ’লীগ, সুযোগ সন্ধানে জাপা-বিএনপি

newsImg

চিরিরবন্দর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও খানসামা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে দিনাজপুর-৪ আসনটি মূলত আওয়ামী লীগেরই। ১৯৮৮ এবং ২০০১ সাল সব ভোটেই জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ।আওয়ামী লীগের তিন দশকের বেশি সময় ধরে করা রাজত্বে আগামী নির্বাচনে ভাগ বসাতে চায় বিএনপি-জাতীয় পার্টি।

এরই মধ্যে মাঠ গরম করে তুলেছেন সম্ভাব্য প্রার্থী। বর্তমান এমপি আবুল হাসান মাহমুদ আলী আগামী নির্বাচনেও শক্তিশালী প্রার্থী। এছাড়া অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন ছাড়াও আরও দুই প্রার্থী মাঠে সক্রিয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিদ্যমান বিরোধের মধ্যেই বিএনপির দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।

২০ দলীয় জোটের শরিক দল জাগপার একজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। জামায়তের ভোট ব্যাংক থাকায় জোটের ভোটের হিসাব নির্ভর করছে জামায়াতের ওপর।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, রাস্তার মোড়ে, হাট-বাজারে দলীয় প্রধান কিংবা নেতানেত্রীদের ছবি সংবলিত বিলবোর্ড ও পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছেন। শ্রদ্ধাঞ্জলির নামে নানা রঙের পোস্টারও শোভা পাচ্ছে এলাকায়। সভা, সমাবেশ কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাদের উপস্থিতি বেড়েছে।

নির্বচনী পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ এবং ১৯৭৯ সালে দিনাজপুর-৪ আসনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত অ্যাডভোকেট শাহ মাহাতাব আহমেদ। ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে জয়ী হন আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান মানু।

১৯৮৮ সালে জয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রয়াত নেতা সাখাওয়াত হোসেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের ৩ বারের এমপি মিজানুর রহমানকে হারিয়ে জয় পান বিএনপির আকতারুজ্জামান মিয়া। তবে ২০০৮ সালে আকতারুজ্জামানকে হারিয়ে বিজয়ী হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। ২০১৪ সালেও তিনি ফের এমপি হন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী ছাড়াও আছেন সাবেক হুইপ ও কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মানু ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।

এছাড়া চমক সৃষ্টিকারী আরেক প্রার্থী হচ্ছেন- চিরিরবন্দর উপজেলা আ’লীগের উপদেষ্টা ও ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিফ কনসালট্যান্ট ও প্রখ্যাত চিকিৎসক এবং চিরিরবন্দর আমেনা-বাকি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন।

তবে বর্তমান এমপির পক্ষে তার লোকজন দলীয় কর্মসূচি পালন ছাড়াও স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। ঢাকায় ব্যস্ত থাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাঝেমধ্যেই এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগদানের চেষ্টা করছেন।

তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে দৃষ্টি কেড়েছেন প্রখ্যাত চিকিৎসক ও মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. এম. আমজাদ হোসেন। আওয়ামী লীগের নতুন মুখ হিসেবে জনসমর্থন বাড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সাড়া ফেলেছেন তিনি।

ভালো চিকিৎসক ছাড়াও সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী হিসেবেও তিনি পরিচিত। বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে কথা হয় ডা. এম আমজাদ হোসেনের সঙ্গে।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে দুই পায়েই গুলিবিদ্ধ হই। মৃত্যুর দুয়ার থেকে আল্লাহই ফিরিয়ে এনেছেন মানুষের সেবা করা এবং তাদের কিছু দেয়ার জন্য। আমি চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি এলাকার ফিরে শিক্ষার উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে চাই।’ মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

তিন বারের নির্বাচিত এমপি সাবেক হুইপ ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে পরাজিত হন।

জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি জনগণের কাছাকাছি আছি। এলাকার জন্য কি করছি তা সবই নেত্রী জানেন। আমার কাজে খুশি হয়ে যদি তিনি মনোনয়ন দেন তাহলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামও সক্রিয়। জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, বর্তমান এমপি মাহমুদ আলীর মাঠের রাজনীতিতে যোগাযোগ কম থাকায় মানুষের কল্যাণে আগামী নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেতে আগ্রহী।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকার দুস্থ মানুষদের আইনি সেবা দিয়ে থাকেন বিনা খরচেই। নৌকা প্রতীক পেলে তিনি বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় জামায়াত-শিবির এ আসনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এ নিয়ে সচেতন ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া থাকলেও এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের একটা সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। এটা ভেবে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন ফুরফুরে মেজাজে।

তারা বলছেন, জোটের প্রার্থী যেই হোক না কেন তাদের ভোট পড়বে ধানের শীষেই। স্থানীয় এমপি মাহমুদ আলী প্রভাবশালী মন্ত্রী হওয়ায় এলাকায় তার কম যাতায়াতকেই তারা পুঁজি করতে চান।

বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন সাবেক এমপি আকতারুজ্জামান মিয়া ও শিল্পপতি হাফিজুর রহমান সরকার। এছাড়াও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জাগপার কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ আলী খানও মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন।

আকতারুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আশা রাখছি দলীয় মনোনয়ন পাব এবং পেলে নির্বাচন করব।’ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে যে উন্নয়ন হয়েছে তা তুলনামূলকভাবে বিএনপির সময়ের চেয়ে অনেক কম।’

বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী লুসাকা গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি হাফিজুর রহমান সরকার দলীয় প্রতীক না পেয়ে ২০০৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির নেতা আশরাফ আলী খান জাগপার একক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করে চলছেন। জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ পাওয়ারও চেষ্টা করছেন।

জানতে চাইলে আশরাফ আলী খান যুগারন্তরকে বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি দিয়ে নয়, আমি খানসামা-চিরিরবন্দরবাসীর পাশে থাকতে চাই। যদি জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) থেকে জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ মার্কার মনোনয়ন পাই তাহলে এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে চেষ্টা থাকবে সবার আগে।

উন্নয়নের ছোঁয়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে আমি মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছি। দুই উপজেলায় জাতীয় পার্টিরও দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, লাঙ্গল মার্কা এবং এরশাদ ‘ইমেজ’ কাজে লাগিয়ে তারা নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিতে চান।

জাপার নেতাকর্মীদের ধারণা, ভোটের হাওয়া লাগলে জাতীয় পার্টি চাঙ্গা হয়ে উঠবে। দুই প্রর্থী হচ্ছেন- খানসামা উপজেলা আ?হ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আবদুল আলীম হাওলাদার ও চিরিরবন্দর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ওয়াজেদ আলী। তবে মাঠে সক্রিয় আবদুল আলীম হাওলাদার।

জাতীয় পার্টির নেতা আবদুল আলীম বলেন, পল্লীবন্ধু এইচএম এরশাদের জনপ্রিয়তা এখনও ৬৮ হাজার গ্রামে রয়েছে। তিনিই এদেশে উন্নয়নের সূচনা করেছেন। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়, তাহলে পল্লীবন্ধুর ইমেজ এবং নিজের কর্মতৎপরতায় তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে এ আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।