বিরোদী দল

18-11-2017 12:17:11 PM

খালেদা জিয়ার ‘রোড শো’ কর্মসূচি আসছে আট বিভাগে শো-ডাউনের পরিকল্পনা, নির্বাচনের বার্তা দেবেন তৃণমূলে

newsImg
প্রায় দুই বছর পর রাজধানীর উন্মুক্ত ময়দানে বেগম খালেদা জিয়ার জনসভা ও কক্সবাজার সফরে পথে পথে ব্যাপক জন উপস্থিতির প্রেক্ষাপটে আত্মবিশ্বাস ফিরছে বিএনপিতে। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা দলের নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছেন। বিএনপির নিরুত্তাপ রাজনীতিতে ফিরছে উত্তাপ। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে মাঠে সক্রিয় করতে একাধিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন নেতারা। তারা মনে করছেন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার অভিমুখী ‘রোড-শো’র প্রভাব কর্মী-সমর্থকদের আলোড়িত করেছে। বেগম খালেদা জিয়া দেশের বিভাগগুলোর সফরে গেলে যে ‘রোডশো’হবে তাতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। সফরকালে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্দেশনা দেবেন। বার্তা দিবেন।

 

ইতোমধ্যে এনিয়ে সমপ্রতি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক এবং গত বুধবার ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ২০ দলের বৈঠকে ৮ টি বিভাগীয় শহর সফরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান বেগম জিয়া। তিনি বলেন, কক্সবাজারের পথে পথে মানুষের ঢল নেমেছিল। সরকার যানবাহন বন্ধ করে দিলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সয়লাব হয়ে গেছে মানুষে। জেগে উঠেছে মানুষ। নেতা-কর্মীরা চাচ্ছেন সারাদেশে আমরা যাই। আমিও ঢাকার বাইরে আরো কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছি। তবে পরিস্থিতি এবং শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করছে সব কিছু। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন নেতা ইত্তেফাককে জানান, বেগম জিয়া সারা দেশে ‘রোডশো’ করবেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া দেশে ফেরার দিন বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের ’মানবপ্রাচীর’ অভ্যর্থনা ,বিশাল শো-ডাউন,কক্সবাজার যাত্রা এবং ঢাকার জনসভা, পরপর তিনটি ‘সফল’ কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বেগম জিয়া নিজেও উজ্জীবিত। মনোবল ফিরছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বেগম জিয়া সড়ক পথে বিভাগগুলোতে গেলে পথে পথে শো-ডাউন হবে। প্রতিটি জেলার মাঠ নেতা-কর্মীরা সেখানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এই রোড-শো সফল হলে আগামী নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে। নাড়া পড়বে। 

 

দলের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামীতে সড়ক পথে সিলেট, রাজশাহী ও রংপুরে যেতে পারেন চেয়ারপার্সন। সিলেট দিয়ে শুরু হবে তার সফর। তবে এসব সফর সভা সমাবেশের পরিবর্তে মানবিক কর্মসূচি হিসেবেই দেখানো হবে। কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। গত এপ্রিলে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে সিলেটের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের হাওর অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে। অন্তত ১০ হাজার হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে যায়। নষ্ট হয় ঘরবাড়ি ও ফসলের মাঠ। বিএনপি সেখানে ত্রাণ তত্পরতা চালিয়েছে। তবে যেতে পারেননি বেগম জিয়া। তখন দলের পক্ষ থেকে সিনিয়র নেতারা সহায়তার জন্য সফর করেছিলেন। গত আগস্টে উত্তরবঙ্গে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫টি জেলা। সেখানে এখনো দরিদ্র মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসেনি। এ কারণে এই দুই বিভাগের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষদের দেখতে যাওয়ার কর্মসূচি দেওয়ার কথা আলোচিত হচ্ছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার কারণে সরকার বেগম জিয়ার কর্মসূচিতে বাধা দিতে চাইবে না। 

 

দলের নেতারা জানান, ঢাকার বাইরে আরো সফরে যাবেন -এমন খবর জানেন নেতারা। তাই দেশের বিভিন্ন জেলায় যারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান তারা বেগম জিয়াকে তাদের জেলায় এবং বিভাগে সফরের জন্য নিতে চাচ্ছেন। গুলশানে বেগম জিয়ার সঙ্গে যারাই এখন সাক্ষাত্ করতে যাচ্ছেন তারাই আবদার করছেন -‘ম্যাডাম আমাদের অমুক বিভাগে আগে যাবেন।’ দশ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিতে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের তালিকায় নতুন মুখই বেশি। তারা চান বেগম জিয়ার সামনে তাদের জনপ্রিয়তা-সমর্থনশক্তি প্রদর্শন করতে। যেটা ঢাকা থেকে কক্সবাজার রোডে হয়েছে। সেখানে সম্ভাব্য প্রার্থীরা রীতিমত প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন শো-ডাউনের। এমনকি হাতি-ঘোড়া এনেও বেগম জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। যারা দলের পক্ষে মনোনয়ন পেতে মুখিয়ে আছেন সেই নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সড়কের দু’পাশে কর্মীদের অবস্থান দেখা গেছে।

 

এদিকে আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আরেকটি জনসভা করতে চাইছেন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে দলীয়ভাবে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই সমাবেশের মাধ্যমে বিজয়ের মাসেই ‘বিজয়’ বার্তা দিতে চাইছেন তিনি। এছাড়া ২০ নভেম্বর তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে সমাবেশ করবে বিএনপি।

 

আই-নিউজ২৪.কম:নিলুফার ইয়াসমিন