অর্থনীতি

03-12-2016 05:11:48 PM

ভারতে রুপির ঝামেলায় ঢাকায় চাঙ্গা ডলার

newsImg

ভারতের বড় দুটি নোট বাতিলের প্রভাব পড়েছে ঢাকার নগদ ডলারের বাজারে। প্রতিবেশী দেশটিতে ভ্রমণকারীদের প্রায় সবাই ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। মূলত এ কারণে নগদ ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এতে ব্যাংক ও খোলাবাজারে দাম বেড়েছে ডলারের। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি ডলারের দাম ব্যাংকগুলোতে দেড় থেকে দুই টাকা ও খোলাবাজারে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ৮১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে নগদ ডলার বিক্রি করছে ব্যাংক ও কিনছে ৮০ থেকে ৮২ টাকা দরে। খোলাবাজারে এ দর ছিল আরও বেশি। খোলাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে হয়েছে ৮৪ দশমিক ৫০ থেকে ৮৫ দশমিক ৫০ টাকায়। অন্যদিকে বিক্রি করতে গিয়েও বেশি দাম পেয়েছেন গ্রাহক। সেখানে সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা দরেও বিক্রি হয়েছে ডলার।

ব্যাংকার, মানি চেঞ্জার ও খোলাবাজারের ডলার ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকটি কারণে নগদ ডলারের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে ভারতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের ঘটনা অন্যতম। কারণ, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ প্রতিদিন ভারত ভ্রমণ করেন। নোট বাতিলের আগে অধিকাংশ ভ্রমণকারী সেখানে যাওয়ার সময় ডলারের পাশাপাশি নগদ টাকা সঙ্গে নিয়ে যেতেন। পরে বাংলাদেশি টাকা রুপিতে পরিবর্তন করে নিতেন। কিন্তু এখন ভারতে নগদ রুপির সংকট থাকায় তারা টাকা সঙ্গে নিতে চাচ্ছেন না। অন্যদিকে রেকর্ড দরপতনে রুপির বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়েছে। গত সপ্তাহে এক ডলারের দাম সর্বোচ্চ ৬৮ দশমিক ৮৭ রুপিতে উঠেছিল, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সে জন্য টাকার পরিবর্তে ডলার নিচ্ছেন অধিকাংশ ভ্রমণকারী। ফলে ডলারের চাহিদা বেড়েছে।
 
 গত ৮ নভেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ঘোষণায় ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করেন। ফলে দেশটিতে নগদ অর্থের সংকট তৈরি হয়েছে। চিকিৎসা, ব্যবসা, বেড়ানো ও কেনাকাটার জন্য বাংলাদেশিরা পার্শ্ববর্তী এই দেশটিতে বেশি যান। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বিশ্বের পর্যটকদের মধ্যে বাংলাদেশি পর্যটক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এদিকে সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ডের অর্থ বিদেশে কোথায়, কী কাজে ব্যয় হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে অনেকেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের পরিবর্তে নগদ ডলার দিয়ে ব্যয় মেটাচ্ছেন। ফলে নগদ ডলারের চাহিদা বেড়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে নগদ ডলারের সরবরাহ কমায় দামও বেড়েছে।
 গতকাল বৃহস্পতিবার এক্সিম ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করেছে ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে ও কিনেছে ৮২ টাকা ২৫ পয়সা দরে। ইস্টার্ন ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করেছে ৮২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। কিনেছে ৮১ টাকা ২৫ পয়সা দরে। ১৫ নভেম্বর এ ব্যাংকের দর ছিল যথাক্রমে ৮১ টাকা ২৫ পয়সা ও ৮০ টাকা ২৫ পয়সা। সোনালী ব্যাংক প্রতি ডলার বিক্রি করেছে ৮৩ টাকা ১০ পয়সা দরে ও কিনেছে ৮২ টাকা ১০ পয়সায়। ১৫ নভেম্বর এ ব্যাংক প্রতি ডলার ৮২ টাকায় বিক্রি করেছে ও কিনেছে ৮১ টাকায়। অন্যান্য ব্যাংকের দরও ছিল আগের চেয়ে বেশি।

এ বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান মতিউর রহমান সমকালকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের যে চাহিদা আছে, সে অনুযায়ী সরবরাহ নেই। নগদ ডলারের সরবরাহ হয় বিদেশি যারা আসেন, তাদের মাধ্যমে অথবা দেশের যারা বিদেশ ভ্রমণ করে ফিরে আসেন, তাদের মাধ্যমে। তিনি বলেন, এসব খাত থেকে ডলার সরবরাহ কমে গেছে। অন্যদিকে ভারত বড় নোট বাতিল করায় ভ্রমণকারীরা ইন্ডিয়ান রুপির বদলে এখন সবাই ডলার নিয়ে যাচ্ছেন।

এলসিতে ডলারের দর

বেড়েছে :এদিকে আন্তর্জাতিক লেনদেনে নভেম্বরে টাকা ডলারের বিপরীতে ৩০ পয়সা দর হারিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১ নভেম্বর ব্যবসায়ীরা আমদানি করার জন্য ৭৮ টাকা ৪৬ পয়সায় প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য দিয়ে এলসি করতে পেরেছেন। ৩০ নভেম্বর আমদানিকারকদের এ জন্য দিতে হয়েছে ৭৮ টাকা ৭৬ পয়সা। আয়ের তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধে চাপ বেশি হওয়ায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সরবরাহ কমে যাওয়ায় টাকার মান কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে অবশ্য প্রবাসী ও রফতানিকারকদের সুবিধা হয়েছে। একজন ব্যাংকার বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাং ক টাকার দর কমাতে চাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাজারে ডলারের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে মন্তব্য করেন তিনি।