বাংলাদেশ | শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪ | ৭ বৈশাখ,১৪৩১

জাতীয়

17-12-2017 09:15:32 AM

শ্রদ্ধা ভালোবাসা উৎসবে বিজয় দিবস উদ্‌যাপন

newsImg

‘সব কটা জানালা খুলে দাওনা/ ওরা আসবে চুপি চুপি/ যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ। ’

গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবুর কালজয়ী এই গানের কথায় ফুটে উঠেছে মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের অমরত্বের কথা। তাদের রক্ত আর সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। গতকাল ৪৭তম মহান বিজয় দিবসে জাতি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেছে সেসব শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। দেশজুড়ে সব স্মৃতিসৌধে ছিল লাখো জনতার ঢল। বর্ণিল শোভাযাত্রা জুড়ে ছিল জয় বাংলা স্লোগান আর বিজয়ের গান। রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, দোকানপাট সব খানেই ছিল জাতীয় পতাকার লাল-সবুজের উৎসব। তরুণ-তরুণীদের গালে-কপালেও রংতুলির আঁচড়ে স্থান পেয়েছে জাতীয় পতাকা। পোশাকেও ছিল লাল-সবুজের সরব উপস্থিতি। বাতাসে বাতাসে ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও দেশাত্মবোধক গানের কথা। ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই কালজয়ী ভাষণ— ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’

 জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো জনতার ঢল : গতকাল সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শ্রদ্ধা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা, বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানানোর পর সকাল সাড়ে ৭টায় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ফুল দিয়ে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শ্রদ্ধা জানানোর এই মিছিলে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে যুবক, ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, কূটনীতিক, সমাজকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ও শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকাল সাড়ে ১০টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান বিএনপিপ্রধান। সিনিয়র  নেতাদের নিয়ে স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর খালেদা জিয়া কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে ভোরে নয়াপল্টনের  কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ভবনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাতে এসব কার্যালয় আলোকসজ্জা করা হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ  হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান ওমর, আলতাফ  হোসেন চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সাভারে যাত্রা পথে ও শেরেবাংলা নগরে জিয়ার কবরে যাওয়ার সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাভার যাওয়ার পথে ও  শেরেবাংলা নগরে আসার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। চেয়ারপারসনের গাড়িবহর আটকে দেওয়া হয়েছে। আমরা যাতে সময় মতো আসতে না পারি তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ দলীয় নেতাদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বীর সন্তানেরা বিজয় এনেছে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত বিজয়ের স্বাদ মানুষ এখনো পায়নি। কারণ, দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিরতায় ভুগছে। দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, এস এম ফয়সল চিশতী, রওশন আরা মান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লাল-সবুজের উৎসবে পিছিয়ে নেই শিশু-কিশোর : জাতীয় স্মৃতিসৌধে গতকাল সকাল থেকে লাখো মানুষের জনস্রোতে শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ফারজানা আক্তার আশুলিয়ার উত্তরণ কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থী। বাবা শফিকুলের হাত ধরে এসেছে স্মৃতিসৌধে। বেদিতে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধাও জানিয়েছে সে বাবার সঙ্গে। পাঁচ বছর বয়সী ওই শিশুর চোখে-মুখে ছিল বিজয়ের ছোঁয়া। দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সানু আক্তার বাবা সানোয়ারের সঙ্গে সাভারের রাজাশন এলাকা থেকে স্মৃতিসৌধে এসেছে। সে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলল, আমি মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনেছি। আর বাবার সঙ্গে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে বেদিতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম।

এরকম সব বয়সী মানুষের ঢল ছিল স্মৃতিসৌধে। কেউ তার বাবা বা ভাইয়ের হাত ধরে, আবার কেউ তার মেয়েকে নিয়ে, আবার অনেকেই এসেছেন পুরো পরিবার নিয়ে। তারা সবাই বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। মাথায় পতাকা বাঁধা, আর শরীরে লাল-সবুজের পোশাক। এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের নিজ নিজ কর্মসূচি নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে তিন বাহিনীর সমন্বয়ে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার, মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতির জনকের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা : দেশের ৪৬ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিনি দেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মোজাফফর হোসেন পল্টু, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহারা খাতুন, আবদুল মতিন খসরু, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলটির নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, অসীম কুমার উকিল, আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, আবদুস সোবহান গোলাপ, আবদুস সবুর, ফরিদুন্নাহার লাইলী, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মির্জা আজম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু ভবনে জনতার ঢল : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে জনতার ঢল নেমেছিল রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এখানে জনতার ঢল নামে। সকাল ৭টায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা মিছিল করে ৩২ নম্বর সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের মোড়ে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যেই সর্বস্তরের মানুষের ভিড়ে গোটা এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। কেউ এসেছে মাথায় বিজয় দিবসের ব্যান্ড বেঁধে, কেউ এসেছে লাল-সবুজ পোশাক পরে। তাদের সবার মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’। ‘মুজিবের বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই’।

স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৪৬ বছর পূর্তিতে গতকাল ১০ টাকার স্মারক ডাকটিকিট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেছেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পাঁচ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটা কার্ড এবং ডাক বিভাগের ইস্যুকৃত একটি স্মারকগ্রন্থ অবমুক্ত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৪৬ বছর পূর্তিতে দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানাতে প্রধানমন্ত্রী এবারও নগরীর মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডে অবস্থিত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফুল, ফল এবং মিষ্টি পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) সাইফুজ্জামান শিখর এবং সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস গতকাল বিকালে এসব উপহারসামগ্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করেন।

নির্বাচনে জয়ের প্রত্যয় ঘোষণা আওয়ামী লীগের  : মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তিতে বিজয় দিবসের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করেছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকালে রাজধানীতে আয়োজিত এই বিশাল র‌্যালি থেকে যথারীতি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার দৃপ্ত অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় বিজয় লাভ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সর্বস্তরের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে যান।   বিজয় র‌্যালি উপলক্ষে গোটা রাজধানী রূপ নিয়েছিল মিছিলের নগরীতে। বিজয় র‌্যালি পূর্ব সমাবেশ থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে থেকেই জঙ্গী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

হাজার হাজার মানুষ মাথায় লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা বেঁধে, গালে দেশের মানচিত্র এঁকে র‌্যালিতে অংশ নেন। তাদের কণ্ঠে ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয়বাংলা। এ সময় মাইকে ধ্বনিত হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই বজ্রনির্ঘোষ স্বাধীনতার ধ্বনি। নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে বাস-ট্রাকে চড়ে র‌্যালিতে শামিল হয়ে বিজয়-আনন্দে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায় তরুণদের। কোন কোন খোলা ট্রাকে বানানো হয়েছে বিজয় মঞ্চ। র‌্যালি শাহবাগ, কাঁটাবন, বাটার মোড়, এলিফ্যান্ট রোড, সাইন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর রোড হয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে পৌঁছায়। বিজয় র‌্যালিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহূত অস্ত্রশস্ত্রের ড্যামি, কাগজের কামান, ট্যাঙ্ক, যুদ্ধাস্ত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে রাজাকারের আত্মসমর্পণের ড্যামি দৃশ্যও ফুটিয়ে তোলা হয়।   র‌্যালির সম্মুখভাগ যখন ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে পৌঁছায় তখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বের হতে পারেনি মিছিলের অন্য প্রান্ত। রাজধানী ছাড়াও গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা মিছিল নিয়ে বিজয় র‌্যালিতে যোগ দেন।

বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে জয় বাংলা স্লোগানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেলুন উড়িয়ে র‌্যালির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দুপুর দেড়টা থেকে সমাবেশস্থলে সমবেত হতে থাকে দলের নেতা-কর্মীরা। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগ ও এর সব সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে হেঁটে ও ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে আসতে থাকেন। সমাবেশ শুরুর পর হাই কোর্ট, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে দিয়ে শাহবাগ হয়ে কাঁটাবন পর্যন্ত সড়ক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ছাত্র, যুবক, মুক্তিযোদ্ধা, নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। র‌্যালিতে অংশ নেওয়া মানুষের কণ্ঠেই ছিল একই দাবি— ‘মুজিবের বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই, জামায়াত-শিবির-রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়। ’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জয়বাংলা মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি। এই রণধ্বনি জয়বাংলাকে যারা অস্বীকার করে, যারা ধারণ করে না, যারা উচ্চারণ করে না তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। আগামী নির্বাচন ডিসেম্বরে। এই নির্বাচনে আবারও আমরা বিজয়ী হব। জয় বাংলা বিরোধী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনে লড়াইয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী শক্তি বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ইনশাআল্লাহ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজয়ী হব।

খবরটি সংগ্রহ করেনঃ- আই-নিউজ২৪.কম
এই খবরটি মোট ( 490 ) বার পড়া হয়েছে।
add

Share This With Your Friends