বাংলাদেশ | মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪ | ৩ বৈশাখ,১৪৩১

বিনোদন

13-11-2017 11:07:27 AM

হ‌ুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বললেন আহসান হাবীব

newsImg

তাঁর নির্মিত নাটক ও সিনেমা দর্শকদের মুগ্ধ করে এখনো। নামের আগে ‘প্রয়াত’ লেখার কয়েক বছর পার হলেও তিনি আমাদের কাছে এখনো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি হ‌ুমায়ূন আহমেদ। এই জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতার আজ জন্মদিন। হ‌ুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উদ্‌যাপন প্রসঙ্গে কথা বললেন তাঁর ছোট ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব

একসঙ্গে আহসান হাবীব ও হুমায়ূন আহমেদ l ছবি: প্রথম আলো
১৩ তারিখ স্যারের জন্মদিন। নিজের জন্মদিন নিয়ে ওনার চিন্তাভাবনা কেমন ছিল? বা পরিবারের অন্যদের জন্মদিনে উনি কী করতেন? আপনার আর ওনার জন্মদিন তো একদম পাশাপাশি।
আসলে সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের ভাইবোনদের কারও জন্মদিনই কখনো পালন হতো না। বগুড়া থাকতে একবার খুব ছোটবেলায় বড় ভাইবোনেরা যেন কাদের বাসায় কারও জন্মদিন খেয়ে এসে ঠিক করল, তারাও একটা জন্মদিন করবে। কার জন্মদিন করা যায়? তখন আমি ছোট বলে আমার জন্মদিনই পালন করা হলো। কেকটেক কিছু ছিল না। শুধু বাদাম আর আম্মার বানানো পিঠা খেয়ে ছয় ভাইবোনের হইচই করে জন্মদিন পালন করা হলো। কোনো উপহার-টুপহারও ছিল না, তারপরও অনেক মজা হয়েছিল। পরে আমাদের বিয়েটিয়ে হলে পরে ভাবিরাই বিষয়টা শুরু করলেন। তবে বড় ভাইয়ের তার নিজের জন্মদিন নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা ছিল না। প্রথম দিকে সে একটু বিরক্তই হতো। পরের দিকে কিছু বলত না। তবে পরিবারের অন্যদের জন্মদিনে, বিশেষ করে ছোটদের জন্মদিনে সে ফান করত। সবচেয়ে বড় ভাগনির বয়স হয়তো তেরো বছর হলো; তাকে তেরো টাকা দিয়ে বলত, ‘কী, খুশি?’
বড় ভাগনির তো মেজাজ খারাপ, মাত্র তেরো টাকা পেয়ে। পরে অবশ্য তাকে দামি একটা কিছু গিফট দিয়ে খুশি করা হতো।
৯ নভেম্বর আমার বড় বোনের জন্মদিন। তারটা আমরা পারিবারিকভাবে ঘটা করে পালন করি। বড় ভাইও আসত। তারপর তার নিজেরটা, সেটা তো ভক্ত-প্রকাশকেরা, সব শেষে আমরা সবাই মিলেই বেশ জাঁকজমকভাবে পালন করতাম। ১৫ তারিখ আমারটা...তত দিনে সবাই ক্লান্ত। আর কত জন্মদিন করা যায়। কাজেই আমার জন্মদিনে লোকজন আর আসে না...হা হা হা!

বাংলাদেশে ফান ম্যাগাজিন জগতে ‘উন্মাদ’ একটি বিশেষ নাম। স্যারের ‘উন্মাদ’ নিয়ে কোনো স্মৃতি মনে পড়ছে কি?
‘উন্মাদ’-এ তাকে দিয়ে একটা রম্য লেখা লেখাতাম। নাম ছিল ‘এলেবেলে’। প্রথম দিকে সে বেশ আগ্রহ নিয়েই লিখত। পরের দিকে লিখতে চাইত না। আমাকে পিছে লেগে থাকতে হতো। ভাবিকে বলতাম, আম্মাকে বলতাম। তারাও বলত, ‘কী, শাহীনের লেখাটা দিচ্ছ না?’ সে বলত, এই তো দিচ্ছি। একদম শেষ মুহূর্তে দিত। শেষ লেখাটা ছাপতে গিয়ে প্যারাগ্রাফে ভুল করে ফেলেছিল কম্পোজিটার। তারপর আর ভয়ে তার কাছে লেখা চাইনি। মানে ‘উন্মাদ’-এ ‘এলেবেলে’ বন্ধ।

ওনার লেখা কোন বইগুলো আপনার সবচেয়ে প্রিয়? বই প্রকাশের আগে কি উনি পাণ্ডুলিপি নিয়ে আলোচনা করতেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে?
তার সব লেখাই আমার প্রিয়, বিশেষ করে সায়েন্স ফিকশনগুলো। তার সায়েন্স ফিকশনে একটা মানবিক বাপার থাকে, যেটা আমার খুব ভালো লাগে। আমরা যখন একসঙ্গে থাকতাম, তখন তার সব পাণ্ডুলিপিই আমাদের ভাইবোনদের পড়ে মতামত দিতে হতো। কোনো লেখা ভালো হয়নি বললে সে রেগে যেত। তবে বড় আপাই শুধু তার সমালোচনা করার সাহস পেত। কারণ, সে আবার বাংলার শিক্ষক ছিল যে।

আপনাদের ছোটবেলার কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যেটা আপনাকে নস্টালজিক করে তোল?
সে যেহেতু নেই, তাই এখন সব ঘটনাই আমাকে বা আমাদের ভাইবোনদের নস্টালজিক করে তোলে। তার সঙ্গে মজার স্মৃতিই বেশি। একবার মনে আছে, সে দুপুরবেলা এসে বলল, ‘ সিগারেট খাবি?’ আমি তখন ওয়ানে পড়ি, সে সম্ভবত নাইন বা টেনে পড়ে। আমি মাথা নেড়ে বললাম, খাব। সে বলল, ‘যা, রান্নাঘর থেকে দেশলাই নিয়ে আয়।’ আমি ছুটে গিয়ে নিয়ে এলাম দেশলাই। তারপর দুজনে বাড়ির পেছনে চলে গেলাম। সে পকেট থেকে দুটো সিগারেট বের করল। তখন সিগারেটের মতো দেখতে একধরনের লম্বা চকলেট পাওয়া যেত, সেই জিনিস। একটা আমাকে দিল, একটা নিজে মুখে নিয়ে দেশলাই জ্বালিয়ে মিথ্যেমিথ্যি আগুন ধরাল। তারপর আমরা দুজন গম্ভীর হয়ে সিগারেট টানতে লাগলাম। থুড়ি, চুষতে লাগলাম।

কখনো রাগ হয়েছিল ওনার ওপর? ছোটবেলায় বা বড়বেলায় কথা-কাটাকাটি হলে উনি কি একটু পরেই সেটা ভুলে যেতেন?
সে খুবই রাগী টাইপ ছিল। বিশেষ করে পড়াশোনার ব্যাপারে। মাঝেমধ্যেই আমাকে আর আমার ইমিডিয়েট বড় বোন শিখুকে ইংরেজি আর অঙ্ক পড়া ধরত। তখন দুজনের অবস্থাই কেরোসিন হয়ে যেত। আমরা দুজনই আবার যুগপৎ ইংরেজি আর অঙ্কের জাহাজ ছিলাম। ফলে প্রচুর বকা খেতে হতো। তবে এত দ্রুত তার রাগ পড়ে যেত যে তার ওপর রাগ করে থাকা সম্ভব ছিল না। সে সবার বড় ভাই, তার সঙ্গে কথা-কাটাকাটির তো প্রশ্ন ওঠে না।

আপনি নিজে থেকে কিছু বলতে চান?
তাকে খুব মিস করি। আকাশে যখন বিশাল একটা চাঁদ ওঠে, তখন মনে হয়, আহা, আমার ভাইটার কী প্রিয় ছিল ওই চাঁদের ফিনিক ফোটা জোছনা। কিংবা ভরা বর্ষায় যখন ঝমঝম করে বৃষ্টি হয়, ব্যাঙ ডাকে...তখন মনে হয়, আহা, এই বর্ষা তার কী প্রিয় ছিল। প্রকৃতির সুন্দর বিষয়গুলো আগের মতো উপভোগ করতে পারি না। মনে হয়, তাকে ছাড়া এগুলো যেন ঠিক আমার না। আমাদের ভাইবোনদের কারও না...ওগুলো ছিল তার, শুধুই তার!

খবরটি সংগ্রহ করেনঃ- Shakila Sultana lima
এই খবরটি মোট ( 526 ) বার পড়া হয়েছে।
add

Share This With Your Friends